সুপার-সভাপতি দ্বন্দ্বে কমছে শিক্ষার্থী

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি |

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বোরহানুল উলুম দাখিল মাদরাসা। এমপিওভুক্ত ওই মাদরাসাটি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এখন পর্যন্ত মাদরাসাটির তেমন কোন অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। মাদরাসায় শিক্ষক-সভাপতি দ্বন্দ্বে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ফলে বিপাকে পড়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

গত রোববার (২২ জুলাই) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে ওই মাদরাসা সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে মাদরাসা সুপার মাও. মেনহাজুল হক উপস্থিত নেই। তার কক্ষে বসে গল্প করছেন অন্য শিক্ষকরা। এছাড়া আধাপাকা ৩টি শ্রেণী কক্ষের একটিতে ছয়জন শিক্ষার্থী বসে গল্প করছে। জিজ্ঞেস করে জানা যায় তারা অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। টিফিনের পর ক্লাসে শিক্ষক না আসায় তারা বসে গল্প করছে। তবে অন্য দুই কক্ষে কোন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়নি।

শিক্ষকদের কাছ থেকেই জানা গেলো অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় পালিয়ে গেছে। তবে ওই ছয়জন শিক্ষার্থীর জন্য ১২ জন শিক্ষক ও দুইজন কর্মচারী নির্ধারিত সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন। অষ্টম শ্রেণীর দুইজন শিক্ষার্থী জানায়, সভাপতি ও শিক্ষকদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয়। এ কারণে শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাসে আসেন না। ফলে পড়াশোনা হয় না বলে শিক্ষার্থীরাও মাদরাসায় আসা বন্ধ করেছে। জানা যায়, ওই মাদরাসার এবতেদায়ী শাখায় প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে একজনও নেই। এমনকি এবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণীকক্ষও নেই। অথচ ওই শাখায় রয়েছেন তিনজন শিক্ষক। তারা শুধু মাদরাসায় আসেন আর যান এবং মাস শেষে বেতন উত্তোলন করেন। এবতেদায়ী প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, এবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি ও বিস্কুট বরাদ্দ না থাকায় বাচ্চারা আসতে চায়না। বছরের শুরুতে তারা এখানে এসে বই নিয়ে সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়।

তিনি বলেন, এটা শুধু এই মাদরাসার চিত্র নয়; দেশের সব এবতেদায়ী মাদরাসারই একই চিত্র। এদিকে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ১৪৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে ওইদিন ওই ছয় শিক্ষার্থী ছাড়া কাউককেই পাওয়া যায়নি। মাদরাসার এই অবস্থার জন্য শিক্ষকরা দায়ী করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তছলিম উদ্দিনকে। শিক্ষকদের অভিযোগ- সভাপতি হিসেবে তছলিম উদ্দিন মাদরাসায় আসার পর মাদরাসার উন্নয়নে কাজ না করে নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে উঠেন।

তিনি গত বছর পিয়ন নিয়োগ দিয়ে ৪-৫লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এরপর তিনি হুমকি-ধামকি দিয়ে এনটিআরসি’র নিয়োগ প্রাপ্ত ৩ জন শিক্ষকের কাছ থেকে চার লাখ টাকা নিয়েছেন। এখন মাদরাসায় সহ-সুপার এর শূন্য পদে তার মনোনীত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কিন্তু মাদরাসা সুপার এতে রাজি না হওয়ায় তিনি নিয়োগ দিতে পারছেন না। এ কারণে সভাপতি তছলিম উদ্দিন সকল শিক্ষককে শায়েস্তা করতে দফায় দফায় মাসিক বেতনভাতা বন্ধ করছেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদরাসার এক সহকারী শিক্ষক বলেন, সভাপতির কারণে মাদরাসাটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ কারণে তার (সভপতি) কিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।

এদিকে শিক্ষকদের আনা অভিযোগ অস্বীকার করে সভাপতি তছলিম উদ্দিন বলেন, শিক্ষকরা সভাপতি হিসেবে আমাকে সম্মান করেননা। তারা(শিক্ষকরা) ইচ্ছেমতো মাদরাসায় যাওয়া আসা করেন। একারণে তাদের বেতনবিলে সাক্ষর করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছি।

অপরদিকে মাদরাসা সুপার মাও. মেনহাজুল হক বলেন, সভাপতির অন্যায় কাজে সায় না দেয়ায় তিনি শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলে এলাহীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাদরাসা পরিদর্শন করেছি। সেখানে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুবই কম। এখনও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান কখনোই ভালো হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, এভাবে একটি এমপিওভুক্ত মাদরাসা চলতে পারে না। এ কারণে ওই মাদরাসা নিয়ে বড়ই বিপাকে রয়েছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029220581054688