সুমাইয়াকে আর এক পায়ে লাফিয়ে স্কুলে যেতে হবে না

দিনাজপুর প্রতিনিধি |

এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আর হয়তো স্কুলে যেতে হবে না ১১ বছর বয়সী সুমাইয়াকে। এবার সে অন্য শিশুদের মতো কিছুটা হলেও স্বাভাবিকভাবে হাঁটা-চলা করে স্কুলে যাবে। গতকাল সোমবার (২ জানুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় অর্থপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতালে সফলভাবে সুমাইয়ার অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বীরমুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ও রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান ডা. এম আমজাদ হোসেন সুমাইয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন।

সুমাইয়া। ফাইল ছবি

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার রাজধানীর জাতীয় অর্থপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতালে সুমাইয়ার অপারেশন করানো হয়। 

পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই বছর বয়সে সুমাইয়ার গুটিবসন্ত (স্মল পক্স) হয়। এর কিছুদিন পর তার জ্বর হয়। এরপর থেকে তার পা আস্তে আস্তে বেঁকে যেতে শুরু করে। সুমাইয়া বড় হয়। কিন্তু, তার পা আর সোজা হয় না। এরপর থেকে সে এক পায়ে হাঁটার অভ্যাস শুরু করে। একদিন এক প্রতিবেশীর পরামর্শে স্থানীয় কবিরাজের কাছে তাকে নিয়ে যায় তার পরিবার। কবিরাজ ওষুধ দিয়ে বলেন, এ ওষুধ খেলে ভালো হয়ে যাবে, কিন্তু সুমাইয়ার পা আর ঠিক হয় না। বাঁকা পা নিয়েই বড় হতে থাকে সে।  

এদিকে ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী’ তকমা নিয়ে সেও থেমে যেতে রাজি নয়। তার বয়স যখন ৫ বছর, তখন তার মা-বাবা তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। সেও পড়াশোনা শুরু করে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে নয়, তাকে প্রায় দুই কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে এবং আসতে হয় লাফিয়ে লাফিয়ে।

সুমাইয়া আক্তার দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের আলীপাড়ার রিকশাচালক শফিকুল ইসলামের মেয়ে। সে উত্তর আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী।

সুমাইয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ের অনেক জায়গায় চিকিৎসা করেছি। কিন্তু, কোনো ফল পাইনি।পরে আমার মেয়েকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে আমাদের উপজেলার মুক্তিযুদ্ধা ডা. আমজাদ ভাই ও চিরিরবন্দর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা আপা এগিয়ে আসেন। পাশাপাশি সমাজের অনেকেই আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। আল্লাহর রহমতে মেয়ের অপারেশন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমার মেয়ে এখন কথা বলতে পারছে। ডা. আমজাদ ভাই হাসপাতালের অপারেশনের সমস্ত খরচ বহন করছেন। আমি আমার মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চাই।

এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বানু বলেন, আমি ফেসবুকে সুমাইয়ার এক পায়ে হেটে স্কুলে যাওয়ার ভিডিওটা দেখি এবং তার বাসায় গিয়ে খবর নেই। প্রাথমিক যে চিকিৎসাসেবা লাগবে তার দায়িত্ব আমি নেই। পরে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ডা. এম আমজাদ হোসেন ভাইয়ের কাছে সুমাইয়াকে নিয়ে যাই। আমজাদ ভাই সুমাইয়াকে দেখে বলেন, অপারেশন করলে পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলেও কিছুটা স্বাভাবিক হাঁটা-চলা করতে পারবে। গতকাল সোমবার ঢাকার জাতীয় অর্থপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতালে সুমাইয়ার অপারেশন হয়েছে। সে এখন সুস্থ আছে।

এ ব্যাপারে বীরমুক্তিযোদ্ধা ডা. এম আমজাদ হোসেন বলেন, আমি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুমাইয়ার বিষয়টি জানতে পারি। পরে চিরিরবন্দর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বানু সুমাইয়ার বাবা-মাকে নিয়ে আমার চেম্বারে আসে। তার বাবা খুব গরিব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। তাই মেয়ের অপারেশন করার মতো টাকা নেই তাদের। পরে আমি সুমাইয়ার অপারেশনের দায়িত্ব নেই। গতকাল তার প্রথম অপারেশন হয়েছে। কিছুদিন পরে আরেকটা অপারেশন করলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে আশা রাখি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026600360870361