বাংলাদেশের প্রথিতযশা চলচ্চিত্র শিল্পী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুমিতা দেবীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলায় এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সুমিতা দেবী। তখন তার নাম ছিলো হেনা ভট্টাচার্য্য। অমূল্য লাহিড়ী নামীয় এক ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে হলেও পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। চলচ্চিত্রকার ফতেহ লোহানী ‘আসিয়া’ ছবিতে হেনা নাম পাল্টিয়ে সুমিতা দেবী রাখেন। ধর্মান্তরিত হয়ে তার নতুন নামকরণ হয় নিলুফার বেগম। খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান ছিলেন তার স্বামী। তাদের সংসারে দু'টো পুত্র সন্তান রয়েছে। অনল রায়হান তাদেরই একজন ।
১৯৫০ দশকের শেষ দিকে সুমিতা দেবী ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্প বা ঢালিউডের অন্যতম নায়িকা ছিলেন। ‘আসিয়া’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র জীবনের শুভ সূচনা ঘটে তার। তার পরবর্তী ছবি ছিলো ‘আকাশ আর মাটি’। উভয় ছবিরই পরিচালক ছিলেন ফতেহ লোহানী। সুমিতা দেবী ছবির নাম ভূমিকায় অসামান্য অভিনয় করে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। ‘আসিয়া’ ছবিটি ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদক লাভ করেছিলো।
সুমিতা দেবী তার চলচ্চিত্র জীবনে চার দশক অতিবাহিত করেছিলেন। নায়িকার প্রধান চরিত্রে অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশটি। বাংলা ছবির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি উর্দু ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও, শতাধিক চলচ্চিত্রে সহ-নায়িকা কিংবা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। কখনো আসেনি, সোনার কাজল, কাঁচের দেয়াল, এই তো জীবন, দুই দিগন্ত, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, অভিশাপ, ওরা ১১ জন, সুজন সখী, আমার জন্মভূমি ইত্যাদি তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সুমিতা দেবী ৫টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। সেগুলো হলো - আগুন নিয়ে খেলা, মোমের আলো, মায়ার সংসার, আদর্শ ছাপাখানা এবং নতুন প্রভাত।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন সক্রীয় কর্মী ছিলেন সুমিতা দেবী। তাকে বলা হয়, বাংলা চলচ্চিত্রের ‘ফার্স্ট লেডি’। কারণ, তার হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্রে নায়িকার প্রচলন শুরু হয়।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।