সুশিক্ষার জন্য চাই সুশিক্ষক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করে, আপনি কী করেন? যখন বলি শিক্ষকতা, তখনই বলে—চাকরি আর খোঁজেননি! শিক্ষকতা যে একটি মহান পেশা; শিক্ষকরাই সুন্দর সমাজ গঠনের কারিগর—কিন্তু সমাজের অধিকাংশ মানুষের ধারণা কিন্তু সেরকম নয়, তাদের ধারণা কোনো চাকরি না পেয়ে শিক্ষকতা পেশায় এসেছি। শনিবার (৫ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

আরও দেখুন: বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন শুরু হলো যেভাবে (ভিডিও) 

নিবন্ধে আর জানা যায়, আদর্শবান শিক্ষকরাই পারেন একটি সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের এই বিপুল জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে শিক্ষকগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। একজন শিক্ষার্থীর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রভাব শিক্ষকের। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের অনুসরণ করে। একজন শিক্ষার্থীর সুপ্ত গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে পারেন একজন শিক্ষক। আমার বেলাতেও আমি এমন অনেক আদর্শবান শিক্ষকের সংস্পর্শ পেয়েছি।

কী করে ভুলি সেই আদর্শবান মহান শিক্ষকদের। এঁদের মধ্যে একজন ছিলেন শফিকুল ইসলাম, তিনি ছিলেন গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের (শাল্লা, সুনামগঞ্জ) শিক্ষক। আদর্শ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন তিনি। যিনি আমার সংকটময় মুহূর্তে আমাকে যথাযথ দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। শ্রেণিকক্ষে ভালো পাঠদান করলেই ভালো শিক্ষক হওয়া যায় না। এর বাইরেও একজন শিক্ষকের অনেক গুণ থাকা প্রয়োজন। এর সবকিছু পেয়েছি আমি ঐ স্যারের কাছে। স্যার ছিলেন আমার পথপ্রদর্শক। ছাত্রছাত্রীদের যথাযথ দিকনির্দেশনা দিয়ে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে একজন শিক্ষকের সমকক্ষ অন্য কেউ হতে পারেন না।

আমি তখন মামার বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতাম। স্যার বুঝেছিলেন আমি মামার বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতে পারব না। মামার বাড়ির আদরে আমি বাঁদর হয়ে গিয়েছিলাম। তাই স্যার আমাকে পরামর্শ দিলেন অন্য কোনো স্কুলে ভর্তি হতে, যেখানে মামার বাড়ি থেকে যাওয়া সম্ভব নয়। একজন শিক্ষক কত আন্তরিক হলে একজন ছাত্রকে নিজের স্কুল ছেড়ে অন্য একটি স্কুলে ভর্তির পরামর্শ দেন। তখনকার সময় স্কুলগুলোতে ছিল ছাত্র সংকট। তাই স্যারের কাছ থেকেই শিখেছি সবার ওপরে ছাত্রদের কল্যাণের কথা ভাবতে হবে।

নতুন স্কুলে গিয়েও একজন আর্দশবান শিক্ষককে পেয়েছিলাম। যিনি সর্বদাই চিন্তা করতেন ছাত্রছাত্রীদের কীভাবে কল্যাণ হবে। তিনি হলেন শাহীদ আলী পাবলিক পাইলট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের (শাল্লা, সুনামগঞ্জ) সাবেক প্রধান শিক্ষক ধীরেন্দ্র রায়। যিনি প্রধান শিক্ষক হয়েও বাসায় গিয়ে পড়াশোনার খোঁজখবর নিতেন নিয়মিত।

আমাদের দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দলাদলি, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের ফলে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের এ পেশায় আসতে দেখা যায় না। যারা আসে তারাও অল্প কয়েকদিন পরই চলে যায়। লেখাপড়া করেননি এমন ব্যক্তিরাই অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন।

সমাজ গঠনে আর সুশিক্ষার জন্য চাই সুশিক্ষক। আর এজন্য মেধাবীদের এ পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে, তাদের চাকরির নিরাপত্তা ও আর্থিক নিশ্চয়তা থাকতে হবে। একজন শিক্ষক কোনো ভুল করলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে তাকে। কিন্তু তাকে যদি চাকরি থেকে অন্যায়ভাবে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, তাহলে তা হবে একজন শিক্ষকের প্রতি চরম অন্যায়। একমাত্র শিক্ষকতা পেশায় ঘুষ নামক জিনিসটি নেই। তবে শিক্ষা অফিসগুলোতে যে নেই সেটা হলফ করে বলতে পারছি না। শিক্ষকরা যাতে তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারে তার দিকে লক্ষ রেখে শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজন পৃথক জাতীয় বেতন স্কেল। তাহলে শিক্ষকদের কোচিং-প্রাইভেট-টিউশনি করার প্রবণতা কমে যাবে। প্রাইভেট পড়ানো কোনো চাকরি নয়। এটি শিক্ষকদের জন্য মর্যাদাহানিকরও।

আজকের আমিকে তৈরি করার পেছনে আছেন নাম না বলা অনেক শিক্ষক—তাঁদের মূল্যবান সময় এবং শ্রম দিয়েছেন, দিয়েছেন স্নেহ-ভালোবাসা। অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ নেই। আজ শিক্ষক দিবসে সমস্ত শিক্ষককে জানাই অনন্ত শ্রদ্ধা আর ভক্তি।

মিহির রঞ্জন তালুকদার : সিলেট।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025250911712646