শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব নয় জানিয়ে পুরাতন শিক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে প্রাথমিকে বর্তমান শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচি ঠিক থাকলেও মূল্যায়ন হবে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী। প্রসঙ্গত, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দেশে সৃজনশীল পদ্ধতি/যোগ্যতাভিত্তিক পড়াশোনা ছিল।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে তাতে সৃজনশীল কিংবা যোগ্যতাভিত্তিক পদ্ধতির কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন হবে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হবে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী শিক্ষাবর্ষে সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আনা হবে পরিমার্জন ও সংশোধন। পাশাপাশি নতুন কারিকুলামের কারণে এই বছর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিভাগ নির্বাচনের সুযোগ পায়নি। তারা আগামী বছর দশম শ্রেণিতে বিভাগ নির্বাচনের সুযোগ পাবে। দুই বছরের জায়গায় এক বছরে তাদের সিলেবাস শেষ করার জন্য সিলেবাসও সংক্ষিপ্ত করা হবে। দশম শ্রেণিতে তাদের পাঠদান করানো হবে পুরাতন কারিকুলামের আলোকে। এছাড়া আগামী বছর পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করে পরের বছর অর্থাৎ ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তা পুরোপুরিভাবে কার্যকর করা হবে বলেও জানিয়েছে সরকার।
গতকাল রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ এর বিষয়ে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা তথা অংশীজনদের অভিমত, গবেষণা ও জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়বস্তু ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও নেতিবাচক ধারণা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার প্রকট অভাব ইত্যাদি নানাবিধ বাস্তব সমস্যা বিদ্যমান থাকায় এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে প্রাক-প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে ইতোমধ্যে ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির পাঠ্য পুস্তকগুলোর পাণ্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে আগামী বছরের জন্য মুদ্রণ করা হবে। এক্ষেত্রে পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ণ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। শিক্ষার্থীদের আগের কারিকুলামের মতো ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে।
ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে আগামী বছর থেকে সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও চলতি বছরের সংশোধিত ও পরিমার্জিত মূল্যায়ন পদ্ধতি অর্থাৎ পুরনো নিয়মে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এসব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সংশোধিত ও পরিমার্জিত মূল্যায়ন পদ্ধতির রূপরেখা শিগগিরই বিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হবে।
নতুন কারিকুলামের আলোকে পাঠদানের কারণে চলতি বছর নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী বিভাগ নির্বাচনের সুযোগ পায়নি। আগামী বছর দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা বিভাগ বিভাজনের সুযোগ পাবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বছর ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়ার লক্ষ্যে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা অব্যাহত রেখে আগের কারিকুলামের আলোকে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে। শিক্ষার্থীরা একটি শিক্ষাবর্ষে যাতে পাঠ্যসূচিটি সম্পন্ন করতে পারে সেজন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হবে। তাদের পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি আগের কারিকুলাম অনুসারে।
এতে আরো বলা হয়েছে, যে সব শিক্ষার্থী ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে আগের কারিকুলাম অনুযায়ী সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক দেয়া হবে। এসব শিক্ষার্থী নবম ও দশম শ্রেণি মিলে দুই শিক্ষাবর্ষে সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষে ২০২৭ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
২০২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নতুন আরেকটি শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠদান হবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, প্যাডাগগ, মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রশাসক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও অভিভাবক প্রতিনিধিগণের সহযোগিতায় ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হবে। যা ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পরিপূর্ণ রূপে কার্যকর করা হবে।