সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি এবং পরীক্ষায় বিষয় কমানো বাড়ানো প্রসঙ্গে

মোঃ নজরুল ইসলাম |

শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মেধা যাচাইয়ের লক্ষ্যে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু করা হয়। যখন চালু করা হয়েছিল, তখন সকল স্তরের মানুষের সর্বজনীন সমর্থন ও সাড়া পাওয়া যায় এতে। আমি একজন ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক, পরীক্ষক এবং প্রধান পরীক্ষক হিসাবে উক্ত বিষয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক মতামত ব্যক্ত করছি। কিছুদিন পূর্বে  SESIP প্রকল্পের একটি জরিপের সূত্র ধরে আমার এ লেখা শুরু করছি। 

মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি সেসিপ প্রকল্পের জরিপের সারমর্মের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মফস্বল বা গ্রাম এলাকার মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৩৫ বা ৪০ জন শিক্ষার্থী সৃজনশীল প্রশ্ন না পড়ে, না বুঝে উত্তরপত্রে উত্তর লিখে থাকে এবং উক্ত সেসিপ প্রকল্পের জরিপের ফলাফলের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত পোষণ করছি। পরীক্ষক হিসাবে আমি যখন উত্তরপত্র মূল্যায়ন করি, তখন আমাকে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। উত্তরপত্র মূল্যায়নকালে একজন শিক্ষার্থীকে কখনও ঠকানো যাবে না, তাকে কখনও কম নম্বর দেওয়া যাবে না।

আবার, বেশি নম্বরও দেওয়া যাবে না। তার উত্তর যথাযথভাবে অতি যত্মের সাথে, সহানুভূতির সাথে মূল্যায়ন করতে হবে। এটাই স্বাভাবিক এবং চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু কীভাবে মূল্যায়ন করব? এখন তো শিক্ষাবিদ, গবেষক, মনোবিজ্ঞানী, দার্শনিক সকল স্তরের মানুষ এ বিষয়ে এবং এর প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধ বিষয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা করছেন এবং কার্যকর গবেষণালব্ধ ফলাফলও আসছে। আমার মনে হয়, শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ে যে সব প্রশ্ন পদ্ধতি আগে ছিল এবং বর্তমানে চালু আছে, সবগুলো পদ্ধতিই বহাল রাখা উচিত।

প্রশ্নফাঁসের ভয়ে, পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা মানে, যারা  প্রশ্ন ফাঁস করে তাদের কাছে মাথা নত করা। একটি জাতি, একটি সরকার কখনও অশুভ শক্তির কাছে মাথা নত করতে পারে না। আমার মনে হয়, যারা প্রশ্ন ফাঁস করে একটি জাতির মেধাকে পঙ্গু করছে, কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে।
শিক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়নে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো যাতে বহাল থাকে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে এ আবেদন জানাচ্ছি। 
০১। সৃজনশীল পদ্ধতি 
০২। রচনামূলক পদ্ধতি 
০৩। শূন্যস্থান পূরণ পদ্ধতি 
০৪। মিলকরণ পদ্ধতি 
০৫। সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন পদ্ধতি 
০৬। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন পদ্ধতি 
০৭। মৌখিক প্রশ্ন পদ্ধতি 
০৮। ব্যবহারিক প্রশ্ন পদ্ধতি 

সৃজনশীল পদ্ধতি মাধ্যমিক পর্যায়ে চারু ও কারুকলা, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা এ তিনটি বিষয় ৬ষ্ট, ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে চালু করা হয়। অপর পক্ষে, স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা এ দুটি বিষয় ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে চালু করা হয়। উক্ত বিষয়গুলো চালু করার পর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় বোর্ড পরীক্ষাও নেয়া হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ে উক্ত বিষয়গুলো চালু হওয়ার সাথে সাথে NCTB কর্তৃক বিষয়ের মান বণ্টনের পরিপত্রও জারি করা হয়। মান বণ্টনে দেখা যায়, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, শ্রেণিতে ইংরেজি ২য় পত্র এবং বাংলা ২য় পত্র নম্বর ৫০ করা হয়। ইংরেজি ২য় পত্র এবং বাংলা ২য় পত্র বিষয়ে যখন ৫০ নম্বর সংকোচন করা হয়, তখন থেকেই শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্যাকরণ এবং ইংরেজি ব্যাকরণে আরো দুর্বল হতে থাকে। 

আর এ দুটো বিষয়ে নম্বর কমানোর কারণে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি ব্যাকরণে অনেক পিছিয়ে পড়ছে। এটা আমার বাস্তব ধারণা। আর এটার জন্যই শিক্ষার গুণগত মান অনেকটা নেমে আসছে। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে পুনরায় বোর্ড পরীক্ষায় জেএসসি ও এসএসসি পর্যায়ে উপরোক্ত বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হয় এবং উক্ত বিষয়গুলো ধারাবাহিক মূল্যায়ন (Continuous Assessment) বিদ্যালয় ভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়ার পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রে বলা হয়, এ বিষয়গুলো পরীক্ষার্থীর ফলাফলে কোন প্রভাব পড়বে না। বর্তমানে এ পদ্ধতিতেই জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে। 

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে যদি প্রভাব না পড়ে, তাহলে এ বিষয়গুলো স্কুলে চালু রাখার কী যৌক্তিকতা আছে? তাছাড়া, আর একটি বিষয় হলো, বর্তমানে মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে চারু ও কারুকলা, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা এবং ক্যারিয়ার বিষয়ে কোন শিক্ষক নেই। বিদ্যালয়গুলোতে এসব বিষয়ের যদি শিক্ষক না থাকেন, তাহলে এ বিষয়গুলো কারা পড়াবেন? যাই হোক, আমি এখন বলতে চাচ্ছি, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে যখন উক্ত বিষয়গুলো জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা থেকে বাদ দিয়ে, বিদ্যালয়ভিত্তিক ধারাবাহিক মূল্যায়নের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন যদি ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম শ্রেণিতে বাংলা ২য় এবং ইংরেজি ২য় পত্রের নম্বর ১০০ করা হতো, তাহলে আমার মনে হয় বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি ব্যাকরণের দক্ষতা অনেকটাই বৃদ্ধি পেত। তাই আমার পরামর্শ হলো, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম শ্রেণিতে বাংলা ২য় পত্র এবং ইংরেজি ২য় পত্রে ১০০ নম্বরের ব্যবস্থা করা হোক। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর যদি এটা করা হয়, তাহলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের ভিত শক্তিশালী হবে এবং শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। 

 লেখক : প্রধান শিক্ষক, দিগদাইড় ইউনিয়ন মডেল হাইস্কুল, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ।
 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051188468933105