সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়ে কিছু প্রশ্ন

ফাতিন ইসরাক |

বাংলাদেশের শিক্ষাপদ্ধতিতে নব নব সংযোজিত পরীক্ষণমূলক ধারা শিক্ষার্থীদের যতটুকু উপকার করেছে, তার চেয়ে অপকার কম করেনি। প্রসঙ্গত সৃজনশীল পদ্ধতির কথা বলা যেতে পারে।

রিসার্চ ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশন (রেইস) শীর্ষক জরিপে জানানো হয়েছে, মোট শিক্ষার্থীর এক-চতুর্থাংশই পরীক্ষার প্রশ্ন বুঝতে অক্ষম এবং তাদের কাছে কঠিন মনে হয় বিশেষত গণিত ও ইংরেজির মতো বিষয়।

এই জরিপ রিপোর্টে আরো বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ৯২ শতাংশই গাইড বইনির্ভর। ওদের দুই-তৃতীয়াংশ সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝার জন্য গৃহশিক্ষকের সাহায্য নিচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষকদের ৪৫ শতাংশ সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝেন এবং তাঁদের ৪২ শতাংশ অল্প অল্প বুঝতে পারেন।

বাকি ১৩ শতাংশ এই পদ্ধতি বুঝতেই পারেননি। আবার যাঁরা বুঝতে সক্ষম, তাঁরা অর্ধেক পড়ানোর জন্য গাইড বইয়ের দ্বারস্থ হন। গত জানুয়ারি মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মনিটরিং শাখার ‘একাডেমি তদারকি প্রতিবেদন’ জানিয়েছে— মাধ্যমিক স্কুলের ৫৪ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতি আয়ত্ত করতে পারেননি।

তাদের মধ্যে ২২ শতাংশ শিক্ষকের অবস্থা খুবই নাজুক। বাকিরা এ সম্পর্কে যে ধারণা রাখেন, তা দিয়ে আংশিক প্রশ্নপত্র তৈরি করা সম্ভব নয়। আর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও প্রায় একই অবস্থা। এছাড়াও প্রতিবছর বোর্ড বই বদলানোর ফলে বইগুলোর মান বেশ অসন্তোষজনক। বইগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা প্রায় কিছুই বুঝতে পারে না। বিশেষ করে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে।

আমাদের দেশে তিন ঘণ্টার পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাইয়ের মহড়া চলে, অথচ সৃজনশীলতা কী জিনিস এটা বোঝার সামর্থ্য অনেকেরই নেই। আমি সৃজনশীল পদ্ধতির বিরোধিতা করি না।

বিরোধিতা করি প্রশ্নকে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি ভাবার ভুল ধারণাটাকে। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর একটি শিক্ষাও কি ক্লাসে দেওয়া হচ্ছে? আবার ডিজিটাল ক্লাস রুম, আইসিটি বই সবই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যিনি শিক্ষা দেবেন, সেই দক্ষ আইসিটি শিক্ষক নেই অনেক স্কুলেই। এসব বিষয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।

প্রশ্নফাঁস গলার কাঁটা হয়েই ঝুলে রয়েছে। প্রশ্নফাঁস আটকানো যাচ্ছে না, আইসিটি শিক্ষকের অভাব, ভালো বইয়ের অভাব, কোচিংবিহীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়া যাচ্ছে না, অথচ শিক্ষার মান বাড়বে বলে তথাকথিত যুক্তি দাঁড় করিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বাড়ানো হবে, তা তো হবে না।

শিক্ষা দুই ধরনের। এক. জীবনের জন্য। দুই. পরীক্ষার জন্য। বিশ্বের সব উন্নত দেশ জীবনের জন্যই শিক্ষা বেছে নিয়েছে। তাই অনেক দেশেই পরীক্ষা বলতে কিছু নেই। অথচ তারা সব দিক থেকেই সফল এবং মেধাসম্পন্ন জাতি গঠন করেছে।

অন্যদিকে আমরা পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা বেছে নিয়ে, জিপিএ ফাইভ পাওয়ার আশায় পড়াশোনা করছি।

আবার সৃজনশীল প্রশ্ন ছ’টি থেকে বাড়িয়ে সাতটি করা হয়েছে। এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ২:১০ ঘণ্টায় সম্পূর্ণ ছয়টা প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না। বাকি ১০ শতাংশ পুরোপুরি পারলেও উত্তরের মান যথাযথ হয় না।

তাহলে সাতটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীরা লিখবে কিভাবে?

ফাতিন ইসরাক, রংপুর জিলা স্কুল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032241344451904