টাঙ্গাইল শহরের সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের এক ছাত্রকে নির্মমভাবে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের শিকার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত খান সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের কুমুল্লী নামদার খানপাড়া গ্রামের আজগর আলী খানের ছেলে। গত বুধবার দুপুরে সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের সুপাড়িবাগান শাখার দশম শ্রেণির পরিচালক শিক্ষক ইজবাত আলী সুমন তাকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ ওই শিক্ষার্থীর।
অভিযুক্ত শিক্ষক ইজবাত আলী সুমন ওই প্রতিষ্ঠানে আট বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। এ বিষয়ে ওই ছাত্রের বাবা আজগর আলী খান গতকাল বৃহস্পতিবার স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, ইয়াসির আরাফাত খানকে ১০ম শ্রেণির পরিচালক শিক্ষক ইজবাত আলী সুমন নির্মমভাবে বেঁত দিয়ে পিটিয়েছেন। এ কারণে সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। এরপর থেকে সে স্বাভাবিক আচরণ করছে না। সে মানসিকভাবে থেকে ভেঙে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সে স্কুলে যায়নি, সে লেখা পড়া করবে না বলে জানাচ্ছে।
আজগর আলী খান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, স্কুলে গিয়ে আমি বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি খুবই অবাক হয়েছি যে কোনো শিক্ষক কোনো ছাত্রকে এভাবে নির্যাতন করতে পারে! বাচ্চাদের কাছ থেকে আমি জানতে পারলাম আমার ছেলেকে এমনই মার মেরেছে যে সে নিচে বসে পড়েছে এবং বারবার হাত জোর করে পায়ে ধরে না মারার জন্য অনুরোধ করেছে, তারপরও শিক্ষক পেটানো বন্ধ করেননি। কোনো ছাত্রকে কোনো শিক্ষকের এভাবে মারার নিয়ম নেই। স্কুলে বাচ্চাদের কাছ থেকে জানার পর বুঝতে পারছি, এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। আমার ছেলেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। কোনো আক্রোশ থাকলেই এরকম আক্রমণ করা যায়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এই কারণে আমি অফিসিয়ালি লিখিতভাবে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছি।
কেনো এই ছাত্রকে পেটানো হয়েছে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক ইজবাত আলী সুমন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, স্কুলের পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে কয়েকজন মহিলাদের দেখে ছাত্রদের হাত নাড়তে দেখা যায় এবং বাজে ভাষা ব্যবহার করে কিছু বলতে শোনা যায়। এই ছাত্রদের মধ্যে ইয়াসির আরাফাতকে হাত নাড়তে দেখেছি আমি। যে কারণে আমি তাকে শাসন করেছি।
জানতে চাইলে শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ ছিলো না। এসময় ক্লাসরুমের বারান্দায় বেশকিছু ছাত্রদের হইচই করতে দেখে আমিও বারান্দায় যাই। দেখতে না পারায় পেছনের একটি বেঞ্চে উঠে দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করি। এ সময় হঠাৎ ইজবাত আলী সুমন স্যারকে দেখে বেশিরভাগ ছাত্র দৌড়ে এদিক ওদিক পালায়। সুমন স্যার এসে আমার সঙ্গে দুইজন ছাত্রকে সরিয়ে দিয়ে শুধু আমাকে টেনে এনে সবার সামনে পেটানো শুরু করলো। আমি সহ্য করতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যাই। বারবার হাত জোড় করে না মারার জন্য বলছিলাম। কিন্তু তিনি শোনেননি। এরপর শিপন স্যার ওখান থেকে আমাকে সরিয়ে নিয়ে আসেন। আমার হাত নাড়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কিছু দেখতে পেলে তো হাত নাড়ার কথা আসবে। এছাড়াও ওখানে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। সেই ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই জানা যাবে আমি হাত নেড়ে কিছু করেছি কি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল মীর নাজমুল হুদা সাদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি বিষয়টি জানতাম না। অবশ্যই এটা ঠিক হয়নি। এটা পেশাদারিত্বে দায়িত্বের অভাব প্রমাণ করে। এই ঘটনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সার্ভিস রুল অনুযায়ী উনাকে জবাব চেয়ে চিঠি দেয়া হবে। অবশ্যই উনাকে জবাবদিহি করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ জুন সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের এই শাখার আবাসিক ভবনের সাততলার শৌচাগার থেকে শিহাব মিয়া নামের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রথমে সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। ময়নাতদন্তের পর শিহাবকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন চিকিৎসকেরা।
এলাকবাসীর মতে, সৃষ্টি কোচিং সেন্টার থেকে স্কুল হয়েছে মূলত ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে। শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে আইন করে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। আবার রয়েছে টাকা আয় করার ধান্দা। প্রকৃত শিক্ষকের মানসিকতা নিয়ে শিক্ষকতা করছেন না তারা।