দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীর অ্যাকশন শুরু, সালমা ও ইফতেকার ওএসডি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। শিক্ষা প্রশাসনের দুইজনকে আজ রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ওএসডি করা হয়েছে। একজন অটিজম প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক সালমা বেগম ও অপরজন সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ মো: ইফতেকার আলী। দুইজনই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। শিক্ষাখাতে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে আজ দুপুর থেকে। শিক্ষামন্ত্রী অ্যাকশন শুরু করেছেন--এমন মত অনেকেরই। তারা এ দুটি আদেশকে স্বাগত জানিয়ছেন। 

জানা যায়, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীর লিয়েন বাতিল করে ওএসডি করা হয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ইফতেকার আলী টাকার লোভে বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজে লিয়েনে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন প্রায় তিন বছর আগে।  রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) তার লিয়েন বাতিল করে তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে ওএসডির আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির নির্দেশ অমান্য করে কলেজের মঞ্চে ওঠেন। অবৈধভাবে নিয়োগ বাগানো, প্রায় দুই লাখ টাকা মাসিক বেতন-ভাতা গ্রহণ, লুটপাট ও ছাত্রীদেরকে দিয়ে মানবন্ধন ও মিছিল করাতে বাধ্য করানোসহ নানা অভিযোগ ইফতেকারের বিরুদ্ধে। দৈনিকশিক্ষা ডটকমে  গত ১৪ জানুয়ারি ‘সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে শিক্ষা ক্যাডারের ইফতেকারের নিয়োগ অবৈধ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ইফতেকারের যত অপকর্ম শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা শিক্ষামন্ত্রীর নজরে আসে। ১৯ ফেব্রুয়ারি কলেজের অনুষ্ঠানে গিয়ে মন্ত্রীর চোখের সামনে না আসতে অধ্যক্ষকে বলা হয়।  কিন্তু তা মানেননি ইফতেকার। 

অটিজম প্রকল্পের পরিচালক সালমা বেগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও গত চার বছরে তার বিরুদ্ধে  কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সালমাকে ওএসডি করে দিদারুল আলম নামের একজন অধ্যাপককে অটিজম প্রকল্পের পরিচালক করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন: শিক্ষামন্ত্রী ও উপাচার্যের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে শোকজ

এদিকে বিতর্কিত ব্যক্তিকে কলেজ অধ্যক্ষ পদে বসানো ও লুটপাটে সহযোগিতা করার দায়ে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদও বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ নিজ চোখে দেখেছেন পুরান ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীর যতসব কুকীর্তি। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষক হয়েও লিয়েনে অবৈধভাবে বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদ বাগানোসহ কয়েকডজন অভিযোগ ইফতেকারের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: বাতিল হচ্ছে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ অধ্যক্ষের লিয়েন, পরিচালনা পর্ষদ

১৯ ফেব্রুয়ারি কলেজের এক অনুষ্ঠানে ইফতেকার আলীকে না থাকার মৌখিক নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী চলে যাওয়ার সাথে সাথে মঞ্চে উঠে বক্তৃতা শুরু করেন ইফতেকার। এতে বিব্রত হন উপস্থিত অনেকেই। ইফতেকারের অনুগত কয়েকজন জামায়াতপন্থী শিক্ষক ও ছাত্রীদেরকে দিয়ে তার পক্ষে মিছিল করানোর অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদেরকে দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করানোরও অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। ইফতেকারের পক্ষে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের দুইজন কর্তা ও কয়েকজন জামাতপন্থী শিক্ষক। ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীদেরকে উসকে দেয়া হচ্ছে।  তবে, সব চেষ্টাই ব্যর্থ হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়াসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন বিতর্কিত অতিরিক্ত সচিব ইফতেকারের পক্ষে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

আরও পড়ুন: সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে শিক্ষা ক্যাডারের ইফতেকারের নিয়োগ অবৈধ

সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক তদন্ত প্রতিবেদনে লিয়েনে অধ্যক্ষ পদে ইফতেকারকে নিয়োগ দিয়ে কলেজটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ পদে ইফতেকার আলীর নিয়োগ অবৈধ। তাকে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী  কলেজটিতে নিয়োগ দেয়া হয়নি। কলেজটিতে নিষিদ্ধ নোট-গাইড বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তকরণের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ওঠা ‘টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ গাইড বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তকরণের’ অভিযোগেটির সত্যতাও পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত কর্মকর্তারা। দুই মাস আগে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনটির সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন না করে ফ্রিজে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে থাকা ইফতেকার সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

জানা যায়, ইফতেকার আলী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত পরিসংখ্যানের শিক্ষক। তিনি এর আগে ঢাকা কলেজে ছিলেন। তদবির করে লিয়েনে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ পদ বাগান তিনি। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির দুই দফায় কোষাধ্যক্ষ পদে থেকে ব্যাপক লুটপাট করেছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষকও তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023760795593262