পুলিশের সন্দেহসেই টুপি আসে কারাগার থেকেই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কারাগার থেকেই আইএসের আদলে তৈরি করা টুপি সঙ্গে নিয়ে আদালতে এসেছিল গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার জঙ্গিরা—তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে এমনটাই মনে করছে পুলিশ। ঘটনা তদন্তে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশও (ডিএমপি) তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলমকে। ঘটনার দিন কারা কর্তৃপক্ষের গঠন করা কমিটিও প্রকৃত বিষয়টি জানার জন্য তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, জানতে চাইলে গতকাল ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘হলি আর্টিজান মামলার আসামি জঙ্গি সদস্যদের কাছে কিভাবে ওই টুপি এলো তার তদন্ত করতেই পুলিশের কমিটি করা হয়েছে।’

প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা বলেন, কারাগার থেকেই জঙ্গিরা আইএসের আদলের ওই টুপি সংগ্রহ করেছে। তবে তারা কার মাধ্যমে, কখন, কিভাবে ওই টুপি সংগ্রহ করেছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে।

তবে কারা কর্তৃপক্ষ গতকালও দাবি করেছে কারাগার থেকে ওই টুপি জঙ্গিদের কাছে আসেনি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, কারাগার থেকে ওই টুপি সংগ্রহ করার সুযোগ নেই। এখান থেকে আদালতে নেওয়ার সময় আসামিদের পূর্ণ তল্লাশি শেষে সব কিছু দেখে তারপর পাঠানো হয়। তিনি বলেন, স্পর্শকাতর এই মামলার আসামিদের কারাগারে পাঠানোর সময় কোনো ধরনের সন্দেহজনক টুপি ছাড়াই ডিবি-এসবির প্রতিনিধির কাছে আসামিদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারা ভিডিও ফুটেজে আসামিদের সার্বিক তথ্য রয়েছে। এখান থেকে টুপি ছাড়াই তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই  কারাগার থেকে টুপি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তবে কারাগারের অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত কারা অভ্যন্তরে থাকা বন্দিদের হাজতি ও কয়েদি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বিচারাধীন আসামিদের হাজতি এবং দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কয়েদি ডাকা হয়। কয়েদিদের জন্য জেল কোড অনুযায়ী নির্ধারিত পোশাক থাকলেও হাজতিরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক পরতে পারে। এ ক্ষেত্রে রিগ্যান এই টুপি কারো মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকতে পারেন।

পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ জাফর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা তদন্ত করে দেখছি। তবে এখনো সঠিক তথ্য পাইনি।’

তবে এরই মধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারাগার থেকেই আইএসের আদলে তৈরি করা টুপি জঙ্গিদের দেওয়া হয়। রায়ের দিন যে দুজনের মাথায় ওই টুপি ছিল, তাদের একজন রিগ্যানও বলেছেন, ‘টুপি কারাগার থেকে নিয়ে এসেছি।’ গত বুধবার আদালতে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় রিগ্যানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল টুপিটি কোথা থেকে পেয়েছেন তিনি। তখন তিনি কারাগার থেকেই ওই টুপি পাওয়ার কথা বলেছিলেন; যদিও এরপর আর কোনো কথা বলার সুযোগ পাননি তিনি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত তাঁকে প্রিজন ভ্যানে তুলে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে চলে যান।

এই টুপির ঘটনায় অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ টিম থাকলেও সার্বিকভাবে পুলিশের সব সদস্যের মধ্যে এখনো জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। এ কারণে গুলশান হলি আর্টিজানের মতো এত বড় হামলা ঘটনায় জড়িত থাকার পরও ওই জঙ্গিরা ওই ধরনের টুপি পরে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে পেরেছে। অথচ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউই আগে থেকে তা ধরতে পারিনি।

মানবাধিকারকর্মী ও জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা নূর খান বলেন, ‘সরষের মধ্যে ভূত থাকলে সেটা দূর করা কঠিন। তবে সরষের মধ্য থেকে ভূত তাড়াতে হবে। তা না হলে আরো বিপদের সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার কারণে বিষয়টি আমাদের এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গত বুধবার রায় ঘোষণার পর রিগ্যান আদালতের কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় আদালত ভবনের পাঁচতলায় গেটের কাছে কেউ একজন রিগ্যানকে টুপি সরবরাহ করতে পারে। আবার পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আদালতে আসার আগেই টুপি সংগ্রহ করেছিল দুই জঙ্গি। পরে আদালতে এসে তারা যখন টুপি বের করে তখন উল্টো করে ভাঁজ করে পোশাকের নিচে কোমরে গুঁজে রেখেছিল তারা। তবে যেভাবেই তাদের কাছে ওই টুপি আসুক না কেন, আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই ওই টুপি সংগ্রহ করেছিল জঙ্গিরা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025200843811035