জালিয়াতি করে বয়স বাড়িয়ে অতিরিক্ত দু’বছর চাকরি করার শাস্তি পেতেই হলো বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সচীন কুমার রায়কে। সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ পদে দুই বছর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের দায়ে সচীন কুমার রায়ের বেতন ফেরত নিয়েছে সরকার। অতিরিক্ত দুই বছর বেতন বাবদ নেয়া টাকা পেনশন থেকে কেটে নিয়ে এ কর্মকর্তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, সচীন কুমার রায় বরিশালের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পিআরএলে গিয়েছেন এ বছরের ৩১ জানুয়ারি। ৭ম বিসিএসে নিয়োগ পেয়ে ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। যোগদানের সময় সকল কাগজপত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ থাকলেও হঠাৎ করেই তার বয়স ২ বছর কমে যায়। ২৭ বছর পর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার পর জন্ম তারিখ নিয়ে এই জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে দৈনিক শিক্ষা ডটকমের চোখে। পদোন্নতি পাওয়া কাগজপত্রে দেখা যায়, তার জন্ম তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ থেকে ২ বছর কমে হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ। অভিযোগ ওঠে সচীন কুমার রায় জালিয়াতি করে নিজের বয়স কমিয়েছেন। অধ্যক্ষ সচীনকে নিয়ে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশ পায় প্রতিবেদন। শুরু হয় হইচই।
এ বিষয়ে সচীন কুমার রায় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে দৈনিকশিক্ষাডটকমকে বলেছিলেন, ২৯ বছর আগেই বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। আমি চাকরিতে যোগদানের আগে বয়স পরিবর্তন করার আবেদন করি। সেখানে আমি ১৬ ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যশোর শিক্ষা বোর্ডে জমা দেই। সেই কাগজপত্রের ভিত্তিতে যশোর বোর্ড আমার বয়স কমিয়েছে। বোর্ডের এই কাগজপত্রের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় আমার বয়স কমিয়েছে। এটা নিয়ে নতুন বিতর্ক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বয়স কমানো যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করার সময় অফিস সহকারী ভুলে আমার বয়স দুই বছর বেশি লিখে দেয়। পরে আমার পিতা বিষয়টি সংশোধন করার উদ্যোগ নেন।
আরও পড়ুন: ২৭ বছর পর অধ্যক্ষের বয়স জালিয়াতি
বয়স দুই বছর কমিয়ে অতিরিক্ত সময় বরিশালের সরকারি হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন সচীন কুমার রায়। অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। করা হয় শোকজ। এর পর গত বছরের ৩ মে বিভাগীয় মামলার শুনানি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু শুনানিতে যুক্তিসংগত কারণ উপস্থাপন করতে পারেননি তিনি। প্রমাণ হয় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসা বয়স জালিয়াতির অভিযোগ। এরপর বিষয়টিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, চাকরিতে আবেদনের সময় ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি জন্ম তারিখ ঘোষণা করেছিলেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সচীন কুমার। বিধি মোতাবেক তার জন্ম তারিখ সংশোধনের সুযোগ নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি জন্ম তারিখ হিসেবে বিবেচনা করলে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি পিআরএলে যাবার কথা ছিল এ কর্মকর্তার। কিন্তু তিনি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি পিআরএলে গিয়েছেন। অতিরিক্ত দুই বছর চাকরি করেছেন তিনি। এ দুই বছরের বেতন বাবদ সচীন কর্তৃক গৃহিত টাকা পেনশন থেকে কেটে তাকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এ সুপারিশের প্রেক্ষিতে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সচীন কুমার রায় কর্তৃক অতিরিক্ত দুই বছর বেতন বাবদ নেয়া টাকা পেনশন থেকে কেটে নিয়ে তাকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।