দৈনিক শিক্ষাডটকম, জাবি : বাসচাপায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ নিহত হওয়ার ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আটক করা ‘সেলফী’ পরিবহনের ১৫টি বাস আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে একে একে বাসগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল সাভার উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ে সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফি, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানসহ কয়েকজন আলোচনায় বসেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাসগুলো ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেলফী পরিবহন কর্তৃপক্ষ আট লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করেছে। সাভার উপজেলা প্রশাসন থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মোট ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে নিহত রুবেলের পরিবার।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফি বলেন, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উপস্থিতিতে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আট লাখ টাকা নগদ ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিষয়টি সমাধান হয়েছে। আর সরকারি ফান্ড থেকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আট লাখ টাকা নিহত রুবেলের ভাই ও শ্যালকের কাছে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুবেল পারভেজের ১৬ মাস বয়সী সন্তান আছে, স্ত্রী আছেন। বাড়িতে মা আছেন। তাঁর ছোট ভাইয়েরা পড়াশোনা করছেন। রুবেলই পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে সাভারের ইউএনও ফেরদৌস ওয়াহিদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। সেলফী পরিবহনের ব্যবস্থাপক পরিচালক জালালউদ্দিন বলেন, ‘আমরা আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেছি। নিহত রুবেলের বাচ্চার ভরণপোষণের দায়িত্বও নিয়েছি।’
গত বৃহস্পতিবার সকালে রুবেল পারভেজ নিহত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি দল ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী সেলফী পরিবহনের বাস আটকানো শুরু করে। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রুবেলের পরিবারের জন্য ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এ নিয়ে পরিবহন প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েক দফায় আলোচনা চলে। তারা প্রথম দফা আলোচনায় তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছিল। তা মানেননি শিক্ষার্থীরা। শেষ পর্যন্ত আলোচনা শেষে আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে পাঁচ দিন পর বাসগুলো ছেড়ে দেওয়া হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রুবেল ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন রুবেল। এ সময় সেলফী পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষির মধ্যে একটি বাস যাত্রীদের চাপা দেয়। এতে রুবেলসহ দুজন নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ওই দিনই মহাসড়কটিতে চলাচলকারী সেলফী পরিবহনের বাস আটক করেন। পরদিন শুক্রবার সকালে রুবেল হত্যার বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেলফী পরিবহনের বেপরোয়া গতি এবং চালকের সহকারীদের খারাপ আচরণ, হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ইত্যাদি কারণে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল তাঁদের। বাসের চাপায় রুবেল পারভেজের নিহত হওয়ার পর এ ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।