সোনার খোঁজে নিরুদ্দেশ!

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমে অ্যারিজ়োনার ফিনিক্সে রয়েছে সুপারস্টিশন পর্বতমালা। ওই পর্বতমালার আশপাশের এলাকায় নাকি লুকিয়ে রয়েছে ‘যক্ষের ধন’। বাসিন্দাদের কাছে এই খনি অবশ্য ‘ডাচম্যান’স লস্ট মাইন’ বা ডাচম্যানের হারিয়ে যাওয়া খনি নামে পরিচিত।

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, জার্মানি থেকে আমেরিকায় আসা জ্যাকব ওয়াল্টজ় নামে এক ব্যক্তির নামে সোনার খনির নামকরণ হয়েছে। জার্মানি থেকে যাঁরাই আমেরিকায় আসতেন, ইংরেজরা তাঁদের ‘ডাচম্যান’ বলে সম্বোধন করতেন। জ্যাকব এই খনির সন্ধান পেয়েছিলেন বলেই ইংরেজরা এই খনির নাম রেখেছিলেন ডাচম্যানের সোনার খনি। বর্তমানে এই খনিটির অবস্থান জানেন না কেউই। সকলে মনে করেন যে, পাহাড়ের কোলে খনিটি তার সর্বস্ব নিয়ে হারিয়ে গিয়েছে।

তবে, জ্যাকবের হাত ধরে সোনার খনির আবির্ভাবের কাহিনির সূত্রপাত নয়। এই কাহিনির শুরু ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে। স্থানীয়দের ধারণা, মিগুয়েল পেরাল্টা নামে এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম খনিটি খুঁজে পান। সেখান থেকে সোনা উদ্ধারও করতে শুরু করেন তিনি। এমনকি, এই খনির উপর পেরাল্টা পরিবারের অধিকার রয়েছে তার প্রমাণ রাখার জন্য খনির দেওয়ালে এঁকে রেখেছিলেন তিনি। সেগুলিকে ‘পেরাল্টা স্টোনস’ও বলা হয়। আবার একাংশের দাবি, এই আঁকাগুলি নকল। বোকা বানানোর জন্য পরে আঁকা হয়েছে।

মিগুয়েল এক দিন তাঁর পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে সোনার খনির দিকে রওনা হয়েছিলেন। সেই সময় পাহাড়ি দস্যুরা তাঁদের রাস্তা আটকায়। দস্যুরা মনে করত যে, ওই খনি তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। দেবতা জ্ঞানে পুজো করত সেই খনিকে। সেখান থেকে সোনা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারেনি তারা। নিমেষের মধ্যে পেরাল্টা পরিবারের সকলকে খুন করে তারা।

সোনার খনিটিও দস্যুরা পাথর দিয়ে এমন ভাবে চাপা দিয়ে রাখে যেন কেউ আন্দাজ করতে না পারেন যে সেখানে সোনার খনি রয়েছে। কানাঘুষো শোনা যায় যে, পেরাল্টা পরিবারের সকলকে খুন করার সময় সেই পরিবারের এক সন্তান ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। দস্যুদের নজরে না পড়ায় তার প্রাণ বেঁচে যায়। পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল পেরাল্টা পরিবারের ওই খুদে সদস্য।

স্থানীয়েরা দাবি করেন যে, পেরাল্টা পরিবারের খুদে সদস্য ছাড়াও খনির ব্যাপারে জানতেন থর্ন নামে এক চিকিৎসক। থর্ন নাকি এক অসুস্থ রোগীকে মরণাপন্ন অবস্থা থেকে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। তবে তাঁকে রোগীটি কোনও পারিশ্রমিক দেননি। বরং থর্নের চোখ বেঁধে দেন তিনি। তার পর পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে কোথাও এক অজানা জায়গায় নিয়ে যান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়েরা।

গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর পর থর্নের চোখের বাঁধন খুলে দেন ওই রোগী। চোখ খুলে থর্ন দেখেন, তাঁর চারদিকে যেন সোনার পাহাড়। ওই রোগী তাঁকে জানান যে, যত খুশি সোনা সংগ্রহ করতে পারেন থর্ন। শুধু এই খনির অবস্থান যেন তিনি জিজ্ঞাসা না করেন। সোনা নিয়ে ফেরার পথে অবশ্য আবার থর্নের চোখ বাঁধা হয়। চিকিৎসকের দাবি, রোগীটি পেরাল্টা পরিবারের ওই সদস্য ছিলেন। পারিশ্রমিক দিতে তাঁদের সোনার খনিতেই নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁকে। যদিও এই ঘটনা আদৌ সত্য কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানি থেকে আমেরিকায় আসেন জ্যাকব। আমেরিকায় পা রাখার সময় জ্যাকবের কাছে কানাকড়িও ছিল না। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাঁর আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। নিজের বাড়ি থেকে শুরু করে খামারবাড়ি পর্যন্ত তৈরি করে ফেলেন তিনি। কোনও কিছুরই অভাব ছিল না খামারবাড়িতে।

কিন্তু জ্যাকবের এমন প্রতিপত্তির কারণ কী তার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারছিলেন না তাঁর প্রতিবেশীরা। জ্যাকব নিজেও কারও সঙ্গে মিশতেন না। কী করে এত রোজগার করছেন, তা-ও বলতে চাইতেন না কাউকে। বাড়ির জানালায় পর্যন্ত তালা দিয়ে রাখতেন তিনি।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে জ্যাকব কোথায় যাচ্ছেন তা দেখতে মাঝেমধ্যেই জ্যাকবের পিছু নিতেন তাঁর প্রতিবেশীরা। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হত না। পাহাড়ি পথে কিছু দূর গিয়ে জ্যাকবকে হারিয়ে ফেলতেন তাঁরা। আসলে অ্যারিজ়োনার পর্বতমালার বুকে হারিয়ে যাওয়া সোনার খনির সন্ধান পেয়েছিলেন তিনি। তা বিক্রি করেই নিজের প্রতিপত্তি বাড়াতে থাকেন জ্যাকব।

১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে অ্যারিজ়োনা এলাকায় বন্যা হওয়ায় জ্যাকবের খামারবাড়ি ভেসে যায়। সেই সময় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। তখন জুলিয়া থমাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন জ্যাকব।

জ্যাকবকে সেবাশুশ্রূষা করে সারিয়ে তুলছিলেন জুলিয়া। কৃতজ্ঞতার খাতিরে জুলিয়াকে সোনার খনির সন্ধান দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি একটি মানচিত্রও এঁকে দিয়েছিলেন জুলিয়াকে। তবে জ্যাকবের শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হতে শুরু করে এবং মারা যান তিনি।

১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ জ্যাকব নাকি ২০৫ কোটি টাকা মূল্যের সোনা বিক্রি করে দেন। শোনা যায় যে, মৃত্যুর সময় তাঁর কাছে মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল মাত্র ১ লক্ষ টাকা। জ্যাকবের মৃত্যুর পর সোনার খনির ব্যাপারে সকলকে বলে ফেলেন জুলিয়া। এমনকি, নিজের রোজগারের জন্য মাত্র ৬০০ টাকা করে এক একটি মানচিত্র বিক্রিও করেছিলেন জুলিয়া।

সোনার খনির মানচিত্রের কথা জানাজানি হলে সকলে সোনার লোভে তার সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। হারানো খনি খোঁজার অভিযান শুরু হওয়ার পরেই বিপদ ঘনিয়ে আসে। অ্যাডল্ফ রুথ নামে এক ব্যক্তির শখ ছিল বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার খনিতে ঘুরে বেড়ানো। ডাচম্যানের সোনার খনির সন্ধান পাওয়ার পর তিনি সেই হারানো খনির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন।

অ্যাডল্ফের পুত্র এরউইন সোনার খনির কথা জানিয়েছিলেন তাঁর বাবাকে। এরউইন সেই খনির একটি মানচিত্রও জোগাড় করে এনে দিয়েছিলেন। এর আগে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি খনির সন্ধানে দুর্ঘটনার শিকার হন অ্যাডল্ফ। যাত্রাপথে অ্যা়ডল্ফের পা ভেঙে যায়। পায়ে ধাতব পিন বসাতে হয়। দুর্ঘটনার পর লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতেন অ্যাডল্ফ। কিন্তু পুত্রের কাছে সোনার খনির কথা শোনার পর আর লোভ সামলাতে পারেননি তিনি। বেরিয়ে পড়েন সোনার খনির খোঁজে।

কিন্তু অ্যাডল্ফ জানতেন না যে, তাঁর জীবনের শেষ দিন ঘনিয়ে এসেছে। সুপারস্টিশন পর্বতের কাছে পৌঁছনোর পর নিরুদ্দেশ হয়ে যান তিনি। ছ’মাস পর একটি খুলি উদ্ধার করা হয়। খুলির মধ্যে দু’টি ছোট গর্তও রয়েছে। ময়নাতদন্ত করে জানা যায় যে, এই খুলিটি অ্যাডল্ফের।

১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে এক জন ইলেকট্রিশিয়ান সোনার খনির সন্ধানে অ্যারিজ়োনায় গিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফিরে আসতে পারেননি। অ্যারিজ়োনা পৌঁছনোর ন’মাস পর তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
১৯৪৭ এর ১৯ জুন জেমস এ ক্রাভে নামে ৬২ বছর বয়সি এক আলোকচিত্রী হেলিকপ্টারে চেপে পৌঁছন অ্যারিজ়োনায়। কয়েক মাস পর তাঁর মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দে কার্টিস মারওয়ার্থ, আর্ডিয়ান চার্লস এবং ম্যালকম মিকস নামের তিন জন পর্বতারোহী ডাচম্যানের হারানো খনির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু তাঁরাও নিরুদ্দেশ হয়ে যান। পরে স্থানীয় পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করতে গেলে তারাও হারিয়ে যান।

সূত্র: আনন্দবাজার 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি - dainik shiksha মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ ধাপের ভর্তি ৩ সেপ্টেম্বরের পর - dainik shiksha গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ ধাপের ভর্তি ৩ সেপ্টেম্বরের পর অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রকিব উল্লাহ - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রকিব উল্লাহ শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী - dainik shiksha শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ - dainik shiksha প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের শাটডাউন স্থগিত - dainik shiksha সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের শাটডাউন স্থগিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043869018554688