সৌর সর্বনিম্ন হলো সেই সময়কাল যেখানে সূর্যের অগ্নিঝড় স্বাভাবিকের চেয়ে শান্ত থাকে। ১১ বছর পর পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। নাসার একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে সূর্য ২০০ বছরের মধ্যে এর সক্রিয়তার সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছাবে। সম্প্রতি মহাকাশবিজ্ঞানীরা একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গড়ে প্রতি ১১ বছর পর পর সূর্য এমন সৌর সর্বনিম্ন পর্যায়ে গেলেও এবার সেটা একটু বেশিই পরিমাণে হবে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যের সর্বনিম্ন পর্যায়ে সাধারণত সানস্পট বা সৌরকলঙ্ক খুবই কমসংখ্যক থাকে। সূর্যের শক্তিও কমে যায়। কিন্তু এবছর সূর্যের যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের কথা বলা হচ্ছে সেটি গত ২০০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু ১৬৫০ থেকে ১৭১৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে যে সৌর সর্বনিম্নের সৃষ্টি হয়েছিল যা কিনা পৃথিবীর নর্দার্ন হ্যাম্পশায়ারে ‘সীমিত বরফ যুগের’ সৃষ্টি করেছিল ততোটা সর্বনিম্ন হবে না বলেই মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। নাসার বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সৌর সর্বনিম্ন পর্যায়ে গেলেও মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সেই সময়ের মতো কোন বরফ যুগের মুখোমুখি হতে হবে না পৃথিবীবাসীকে।
নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ভ্যালেন্টিনা ঝারকোভা বলেছেন, এই সৌর সর্বনিম্নের কারণে এ বছর শীতকালীন তাপমাত্রায় গড়ে তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামতে পারে, যা ১২ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যদিও এটি শুনতে খুবই কম। তবে এটি তাপমাত্রায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস।
সূর্যের সৌর সর্বনিম্ন এবং সর্বাধিক বিষয়টির সঙ্গে জড়িত সৌরচক্র। আর সূর্যের সানস্পটের ওপর ভিত্তি করেই কেবল সৌরচক্রকে ভালোভাবে বোঝা যায়। সূর্য সৌর সর্বনিম্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত ১০০ দিনে সূর্যের পৃষ্ঠতলে সানস্পট পরিলক্ষিত হয়নি। আগের বছরের ৭৭ শতাংশ সময়ও সূর্যের পৃষ্ঠতল ছিল সানস্পটমুক্ত। এতে স্পষ্টতই বলা যায়, সূর্য ফের সৌর সর্বনিম্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সূর্যের এই সৌরশক্তিও চলে একটি বিশেষ নিয়মে। আমাদের সূর্য বৈদ্যুতিকভাবে অভিযুক্ত গরম গ্যাসের একটি বিশাল বল। এই চার্জ গ্যাস প্যাচসমূহ, যা একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রে উৎপন্ন হয়। সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রটি একটি চক্রের মধ্য দিয়ে যায়, যা এই সৌরচক্র নামে পরিচিত। সাধারণত প্রতি ১১ বছরে সূর্যের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রটি সম্পূর্ণরূপে মেরু পরিবর্তন করে। সূর্যের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু স্থান পরিবর্তন করে। তারপর সূর্যের উত্তর ও দক্ষিণ মেরুগুলোকে আবার আগের জায়গায় ফিরতে আরো প্রায় ১১ বছর লেগে যায়। —সিএনএন