স্কুলছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ২ কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়া প্রতিনিধি |

বগুড়ায় মায়িশা ফাহমিদা সেমন্তি (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগে দুই কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আত্মহননকারী স্কুলছাত্রী সেমন্তির বাবা হাসানুল মাশরেক রুমন সোমবার (২৬ আগস্ট) বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ এ মামলাটি করেন। 

মামলার আসামিরা হলেন, শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার তৌহিদুল ইসলামের ছেলে আবির আহমেদ (২০) ও একই এলাকার জিল্লুর রহমানের ছেলে শাহারিয়ার অন্তু (২১)। এদের মধ্যে আবির বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং শাহরিয়ার অন্তু একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। 

বগুড়া ওয়াইএমসিএ স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী মায়িশা ফাহমিদ সেমন্তি গত ১৮ জুন দিবাগত রাতে নিজ ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। মামলায় দুই কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে স্কুল ছাত্রী সেমন্তির নগ্ন ছবি তোলার পর ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। 

বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক একেএম ফজলুল হক মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।

সেমন্তির বাবা হাসানুল মাশরেক এর আগে ওই একই অভিযোগে গত ২১ আগস্ট উল্লিখিত দুই আসামির বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। সেই আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, স্কুলছাত্রী সেমন্তির সঙ্গে কলেজ ছাত্র আবিরের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে আবিরের পরামর্শে সেমন্তি তার মোবাইল ফোনে কিছু নগ্ন ছবি তোলে। এরপর ওই ছবিগুলো সেমন্তির মোবাইল ফোন থেকে আবির তার নিজের মোবাইল ফোনে নিয়ে নেয়। এরপর ওই ছবিগুলো অন্য আসামি শাহারিয়ার অন্তুর মোবাইল ফোনে পাঠায় আবির। এরপর আবির ও অন্তু সেমন্তিকে ফোন করে ওই ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। তাদের অব্যাহত হুমকির মুখে সেমন্তি গত ১৮ জুন দিবাগত ভোরে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

মামলার বাদী হাসানুল মাশরেক রুমন অভিযোগ করেন, তার মেয়ে আত্মহত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে আসামি আবির তাকে দু’ বার ফোন দেয় এবং বলে ‘আপনার মেয়ে আজ রাতে সুইসাইড করতে পারে।’ 

মামলার আরজিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ১৮ জুন রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে এবং তার ১৪ মিনিট পর আবির নামে ছেলেটির কাছ থেকে দু’দফা ফোন পাই। এরপর আমি আমার মেয়েকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তখন সে আবির নামে ওই ছেলেটির সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি জানায়। সেমন্তি জানায়, আবিরের মোবাইল ফোনে তার নগ্ন ছবি রয়েছে। ওই ছবিগুলো আবির ও অন্তু ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। তখন আমি আমার মেয়েকে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ার পরামর্শ দিই। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা পরেই সে আত্মহত্যা করে। 

মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ওই ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা করে। পরবর্তীতে মামলা করতে গেলে গত ১৪ আগস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নরেশ মুখার্জ্জী জানান, স্কুল ছাত্রী সেমন্তির আত্মহত্যায় প্ররোচনা সংক্রান্ত মামলাটি তদন্তের জন্য আদালত বগুড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048201084136963