স্কুলছাত্রী পলির রহস্যজনক মৃত্যু, ১৪ লাখ টাকায় সমঝোতার প্রস্তাব

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী রেবেকা সুলতানা পলি খুনের মামলা তুলে নিতে ১৪ লাখ টাকায় দফারফার প্রস্তাব দিল পুলিশ। পলির মা ছখিনা খাতুনকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বন্দর থানার এসআই আবদুল্লাহ আল মামুন এ প্রস্তাব দেন। পলির ভাই রাসেল খান রানা এ বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মামলা দফারফা করার প্রস্তাব দেয়ার পর থানা পুলিশের ওপর আর আস্থা রাখতে পারছে না নিহতের পরিবার। তাই এ মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে এ ঘটনায় গ্রেফতার ভবন মালিক একে খানকে দুই দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। রোববার (৬ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নাসির উদ্দিন রকি।

আজ রোববার পলি হত্যাকারীর শাস্তি দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পর থেকে পলির স্কুলের সহপাঠীরা মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচি পালন করে আসছে। টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিতে দেয়া পুলিশের প্রস্তাবকে দুর্ভাগ্যজনক বললেন চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী।

রাসেল খান রানা বলেন, ঘটনার পর পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে চায়নি। বিষয়টি সাংবাদিকরা জানার পর থানা পুলিশ মামলা নিয়েছে। মামলায় সন্দেহভাজন আসামি ভবন মালিক একে খানকে (আবুল কাশেম খান) আসামি করতে চেয়েছিলাম। পুলিশ তার নাম এজাহারে দিতে দেয়নি। মামলা নিল অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে। মামলা দায়ের করার পর বন্দর থানার এসআই আবদুল্লাহ আল মামুন সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে যায় আমার মায়ের কাছে। এ সময় মামলা তুলে নিলে ১৪ লাখ টাকা (একে খান থেকে) নিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। আমরা তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছি আমার বোন হত্যাকারীর সঙ্গে টাকা-পয়সার বিনিময়ে কোনো আপস করব না। হত্যাকারীকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। পলি খুনের ঘটনায় বন্দর থানায় করা মামলার বাদীও রাসেল।

রাসেল আরও বলেন, থানা পুলিশ এ মামলার বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করছে না। বরং কিভাবে এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়া যায়, গ্রেফতার আসামি একে খানকে কিভাবে রক্ষা করা যায়, তারা শুরু থেকে সেই চেষ্টাই করছে। টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেয়ার প্রস্তাব এ চেষ্টারই একটি অংশ। তাই আমরা মনে করি, থানা পুলিশ এ মামলা তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বের হবে না। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তরের জন্য আদালতে আবেদন করব।

এসব বিষয় নিয়ে শনিবার দুপুর ১টায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন পলির বড় ভাই রাসেল। তার আইডিতে পোস্ট করা ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- ‘০২-১০-২০১৯ আমার বোন রেবেকা সুলতানা পলি হত্যা হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসন সাড়ে ৮টার দিকে আসে এবং লাশ নামিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। তখন আমার বোনের পিঠে আঘাতের চিহ্ন, ঠোঁটে কামড়ের দাগ, গলায় নখের দাগ, মুখে হাতের ছাপ, হাতের কব্জি ভাঙা এবং তালুতে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও সুরতহালে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে আসামি আবুল কাশেম খানকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় যাওয়ার পর আসামিপক্ষ পুলিশ প্রশাসনকে টাকা দিতে আমরা নিজ চোখে দেখি। তখন ওই ঘটনাকে সামনে এগিয়ে না নেয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের ১৪ লাখ টাকার প্রস্তাব দেয়া হলে আমরা তা নাকচ করি।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বন্দর থানার এসআই আবদুল্লাহ আল মামুন টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেয়া বা সমঝোতার প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, সমঝোতার কোনো প্রস্তাব আমি কাউকে দেইনি। আমরা ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। এটি যদি হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে অবশ্যই হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনা হবে।

শনিবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. হামিদুল আলম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুল আজিম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবদুল্লাহ আল মামুন। পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি পাঁচতলা ভবনের (একে খান টাওয়ার) ওই বাসার বেশ কয়েকজন ভাড়াটিয়া ও নিহতের স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. হামিদুল আলম বলেন, পুলিশের কেউ এ মামলায় সমঝোতা প্রস্তাব দিয়েছেন- এমন কথা শুনিনি। এটা অসম্ভব। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হত্যাকাণ্ড প্রমাণ হলে সেভাবে কাজ করব। এ ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

বুধবার রাতে নগরীর বন্দর থানাধীন একে খান টাওয়ারের পাঁচতলা ভবনের নিচতলার ভাড়া বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় পলির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পলি হালিশহর আহমদ মিয়া সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। মালয়েশিয়া প্রবাসী ফিরোজ খান ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছখিনা খাতুনের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে পলি ছোট। তাদের গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলায়। একে খান টাওয়ারের নিচতলার বাসায় তারা ভাড়া থাকেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে - dainik shiksha স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির - dainik shiksha বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট - dainik shiksha বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন - dainik shiksha একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051310062408447