রাজধানীজুড়ে ভাড়া বাড়িতে কলেজ খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। অন্যদিকে পর্যাপ্ত অবকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা থাকলেও শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোর কলেজ শাখায়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কুল শিক্ষক দিয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠদান কার্যক্রম চলছে।
একাদশ শ্রেণি চালু করার এক যুগ পার হলেও একাদশ শ্রেণির জন্য শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। এতে সংকটের মুখে পড়েছে সরকারি মাধ্যমিক স্কুল। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সংকট নিরসনে দফায় দফায় পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করলেও ফলাফল শূন্য।
একাধিক শিক্ষক জানান, যেসব সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে একাদশ শ্রেণি চালু করা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখায় মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু কলেজের কার্যক্রম ভালোভাবে চালু না হওয়ায় নিজের প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে আগ্রহী হচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। মানসম্মত কলেজের ঘাটতি কমাতে এসব প্রতিষ্ঠানের দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নজর প্রয়োজন। এতে করে প্রতি বছর এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তি নিয়ে ভোগান্তি কমে যেত। সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। সরকারি কলেজগুলোতে পাঠদান করেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তাই স্কুলে প্রভাষকদের পদায়ন করলেও প্রধান শিক্ষকের অধীনে তারা থাকতে চান না।
এ প্রসঙ্গে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির প্রচার সচিব কামাল উদ্দিন বলেন, সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে অবকাঠামোসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে কলেজ শাখা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে জনপ্রিয় করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান করা হয়। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন প্রভাষককে নিয়োগ দেয়া হলেও স্কুলের শিক্ষকরা পাঠদান করাচ্ছেন। এ ছাড়া সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। সরকারি কলেজগুলোতে পাঠদান করেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এসব নানা কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের সুযোগ থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ে সবচেয়ে বড় ও মানসম্পন্ন সরকারি স্কুলে একাদশ শ্রেণি চালু করা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সরকারি কলেজগুলোতে ছাত্রছাত্রী ভর্তির সংকুলান না হওয়ায় ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে প্রথমে রাজধানীর দুটি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পাঠদান চালু করা হয়। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল এবং শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। পরে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ৭টি প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। স্কুলগুলো হলো- রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল, খুলনা জিলা স্কুল এবং বরিশাল জিলা স্কুল।
পরে সুনামগঞ্জের সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সিলেটের সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও একাদশ শ্রেণিতে পাঠদান চালু করা হয়। শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না হওয়ায় ২-৩ বছর পর খুলনা জিলা স্কুল, বরিশাল জিলা স্কুল ও সুনামগঞ্জ এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে স্কুলগুলোতে ২-৩ জন করে সরকারি কলেজের প্রভাষক পদায়ন বা পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে আর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। স্কুলগুলোতে দু’একজন কলেজ শিক্ষক পদায়ন হলেও তারা স্কুল শিক্ষকদের সঙ্গে চাকরি করতে স্বস্তিবোধ করছেন না। আবার স্কুল শিক্ষকরাও কলেজ শিক্ষকদের মেনে নিতে পারছেন না।
দেশে পুরনো ৩৩৩টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষকের পদ আছে ১০ হাজার ৬টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৯১টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীর পদও শূন্য রয়েছে প্রায় ২ হাজার। প্রধান শিক্ষক নেই প্রায় ১শ’ স্কুলে। এই তীব্র শিক্ষক স্বল্পতার মধ্যেই সহকারী শিক্ষক দিয়ে স্কুলে কলেজ শাখার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে নামকাওয়াস্তে।