মনিরামপুরে সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের গাছ নিলামে বিক্রির মূল্য নির্ধারণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, মনগড়া হিসেব দেখিয়ে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করছেন বন কর্মকর্তা। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক নিলাম বাতিল করে ফের দরপত্র আহবানের দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, উপজেলার শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাচীর নির্মাণে প্রায় ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। প্রাচীর নির্মাণের জন্য স্কুলের ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৩৫টি মেহগনি ও ২টি ঝাউ গাছ কেটে ফেলতে হবে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গাছ কাটতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করে। বিধিমোতাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি এবং উপজেলা প্রকৌশলী, শিক্ষা কর্মকর্তা ও বন কর্মকর্তাকে সদস্য করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট্য কমিটি গঠিত হয়।
উপজেলা বন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বিদ্যালয়ের গাছের পরিমাপ করে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে বন কর্মকর্তা ভিত্তি মূল্য নির্ধারণে ইচ্ছেমত গাছ পরিমাপ করেছেন। গত ১৩ অক্টোবর বিদ্যালয়ে গাছগুলোর নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নিলাম অংশগহণ নিয়ে টেন্ডারবাজরাও খুব উৎসাহী ছিল। তাদের এক অংশের হামলায় ৩ জন আহত হয়েছেন। একই সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম লাঞ্চিত হয়েছেন।
উপজেলা বন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা তার বিরুদ্ধে আনিত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিধিমোতাবেক সব গাছের গড় পরিমাপ করে এ ভিত্তি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪৫৫ দশমিক ১১ টাকা সিএফটি হিসেবে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ভিত্তি মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তার হিসাব মতে ৩৭টি গাছের ৬০৪ সেফটি কাঠ (লগ) আছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সবচেয়ে বড় মেহগনি গাছের বেড় প্রায় ১১২ ইঞ্চি এবং উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট। এ পরিমাপ নিয়ে কাঠ (লগ) ব্যবসায়ীর কাছে গেলে তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ গাছের বেড় ও উচ্চতা অনুযায়ী প্রায় ৫৫ দশমিক ২৪ সিএফটি কাঠ (লগ) রয়েছে। এ গাছের বড় ৪টি শাখায় আরো ২০ থেকে ৩০ সিএফটি লগ রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। যদিও বনকর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার হিসেবে গাছটির দাম ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার টাকা।
স্কুলের নিলামকৃত ৩৫টি মেহগনি গাছের মধ্যে ৩০টি গাছের বেড় ৭০ থকে ১০০ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট। বাকি ৪টির বেড় ৪০ থেকে ৫০ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট। আর বাকি দুই ঝাউ গাছের বেড়ও ৪০ থেকে ৫০ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ৩০ থেকে ৪০ ফুট। এ হিসেবে মতে সব গাছের কাঠের পরিমান নির্ধারিত হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি হবে বলে স্থানীয় কাঠ (লগ) ব্যবসায়ীদের ধারনা।
অথচ মনগড়া হিসেব দেখিয়ে ভিত্তি মূল্যে কম দেখিয়ে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে গত ২২ সেপ্টেম্বর উপজেলার ১৬টি বিদ্যালয়ের ৩২টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ২৪ অক্টোবর রাজগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০২টি মেহগনি গাছের নিলামেও বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিত্তিমূল্য কম দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।