স্কুলের টয়লেটে আটকা বাকপ্রতিবন্ধী ছাত্রী, ১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার

চাঁদপুর প্রতিনিধি |

ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্লাসরুমে বই, খাতা, স্কুলব্যাগ রেখে টয়লেটে গিয়েছিল। শিক্ষকরা বই, খাতা দেখেও কি বুঝতে পারেননি এক ছাত্রী নেই। এমনকি যখন টয়লেট বন্ধ করতে গেছে, তখনও কি তারা দেখেননি যে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। এই ঘটনার পর থেকে ভয়ে, আতঙ্কে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।’

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে স্কুল ছুটির পর টয়লেটে আটকা পড়ে দুর্বিষহ ১১ ঘণ্টা কাটিয়েছে দশম শ্রেণির বাকপ্রতিবন্ধী এক ছাত্রী। 

উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের হোসেনপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের টয়লেটে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আটকা পড়ে ওই ছাত্রী। এদিন রাত ১০টার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা জানান, স্কুলে সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস করছিল ওই বাকপ্রতিবন্ধী এসএসসি পরীক্ষার্থী। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্কুলের টয়লেটে যায় সে। এমন সময় স্কুল ছুটি হলে টয়লেটে তালা লাগাতে যান চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শাহানারা আক্তার শানু। ভেতর থেকে বোঝানের চেষ্টা করলেও বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় কোনো শব্দ করতে পারেনি ওই ছাত্রী।

ভেতর থেকে বন্ধ থাকার পরও তা যাচাই না করে বাইরে থেকে টয়লেট তালাবদ্ধ করে ফিরে যান ওই কর্মচারী। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একে একে সবাই বাড়ি চলে যান। টয়লেটে আটকা পড়ে ছাত্রীটি। রাত ১০টার দিকে এক পথচারী যুবক পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় গোঙানির শব্দ শুনে চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন কিশোরীকে উদ্ধার করেন।

বাকপ্রতিবন্ধী ওই ছাত্রী কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিচার দাবি করেছেন শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমি ঘটনা সম্পর্কে অবহিত নই। তবে এমন কিছু হয়ে থাকলে দায়ী ব্যক্তিরা কোনো ছাড় পাবে না। শনিবার আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব।’

প্রত্যক্ষদর্শী যুবক আল আমিন বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এ সময় বিদ্যালয়ের টয়লেট থেকে গোঙানির শব্দ শুনতে পাই। পরে টয়লেটের ভেন্টিলেটর দিয়ে মোবাইলের আলোতে মানুষ দেখতে পেয়ে চিৎকার দেই। আশপাশের লোকজন এসে তালা ভেঙে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন। এ সময় তার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ দেখতে পাই। তখন তাকে উদ্ধার করতে না পারলে বড় কোনো ক্ষতি হতে পারত।’

ছাত্রীটির বাবা বলেন, ‘স্কুল ছুটি হলেও মেয়ে বাড়ি ফিরছে না দেখে আমরা বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকি। তার সহপাঠী ও স্বজনদের বাড়িতে হন্যে হয়ে খোঁজ নিয়েছি। কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজন মেয়েকে টয়লেটের তালা ভেঙে ভেতর থেকে উদ্ধার করেন।’

তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্লাসরুমে বই, খাতা, স্কুলব্যাগ রেখে টয়লেটে গিয়েছিল। শিক্ষকরা বই, খাতা দেখেও কি বুঝতে পারেননি এক ছাত্রী নেই। এমনকি যখন টয়লেট বন্ধ করতে গেছে, তখনও কি তারা দেখেননি যে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। এই ঘটনার পর থেকে ভয়ে, আতঙ্কে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমীর হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ক্লাস ছিল। আমি প্রাতিষ্ঠানিক কাজে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থান করেছি, তখন পর্যন্ত তেমন কিছুই জানতে পাইনি। রাতে এক ছাত্রী টয়লেটে আটকা থাকার খবর পাই। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যান।’

তিনি বলেন, ‘যে শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছিলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি তার খেয়াল রাখা উচিত ছিল। তাছাড়া ভেতর থেকে বন্ধ টয়লেট বাইরে দিয়ে তালা দেয়াও ঠিক হয়নি।’

এ ব্যাপারে শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, ‘এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের কারও গাফিলতি পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024518966674805