স্কুলের লাখ টাকা আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত ঘিরে তোলপাড়

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি |

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্কুলের বিপুল সম্পদ ও তহবিলের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের নির্দেশে বিষয়টি তদন্ত শুরু হয়েছে। এদিকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ তুলেছেন। বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিনি তদন্ত ভিন্নখাতে নিতে এমনটি করেছেন। এদিকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাবির উদ্দিনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ  শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে জমা দিলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ তার কাছে নেই বলে জানিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে।

স্কুল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক সাবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্কুলের বিপুল সম্পদ ও তহবিলের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ গণমাধ্যমে আসলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমলী আদালতের বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীর বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য শিবগঞ্জ উপজেলার সমাজসেবা অফিসার কাঞ্চন কুমারকে তদন্তের  নির্দেশ দেন। এদিকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কমিটির আবেদন ও আদালতের নির্দেশে প্রধান শিক্ষক সাবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপ, আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। ২৭ আগস্ট রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কামরুল ইসলাম এ কমিটি গঠন করেন। রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত কমিটির বাকি তিন সদস্য হলেন, নওগাঁর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষা বোর্ডের উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক এবং শিবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে সরেজমিন ও প্রামাণিক তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  

শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্ত শুরুর খবর জানতে পেরে প্রধান শিক্ষক সাবির উদ্দিন গত ২৭ জুলাই রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির একটি অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী বরাবর। যেই কাল্পনিক বলে দাবি বোর্ড কর্মকর্তাদের। তারা বলছেন, বিনোদপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার বিরুদ্ধে ওঠা লাখ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ধামাচাপা দিতে বোর্ডের স্কুল পরিদর্শকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিনোদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নামে মার্কেট জমিসহ অনেক মূল্যবান সম্পত্তি রয়েছে। এসব সম্পত্তি থেকে আসা আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব সংরক্ষণ না করে প্রধান শিক্ষক বছরের পর বছর যথেচ্ছ খরচ দেখিয়ে আত্মসাত করেন। সম্প্রতি স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকার মানুষ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা বোর্ডসহ দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেন।  এদিকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকেও প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি তদন্তে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদিকে অভিযোগ পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীর প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি তদন্তে শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শককে নির্দেশ দেন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক জিয়াউল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রধান শিক্ষক নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য প্রতিহিংসামূলকভাবে অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের গুরুত্বপুর্ণ শাখা হলো স্কুল শাখা। মাধ্যমিক বা স্কুল পর্যায়ের অধিকাংশ কাজই সম্পাদিত হয় এই শাখার মাধ্যমে। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ এপ্রিল শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা জিয়াউল হক রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক পদে যোগদান করেন।

প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলছেন, যোগদানের পর তিনি শিক্ষা বোর্ডের সমস্যা জর্জরিত স্কুল শাখায় শৃঙ্খলা ফেরান ও দীর্ঘদিনের আটকে থাকা শত শত ফাইল নিস্পত্তি করেন। এছাড়া বিভিন্ন জেলার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ শুরু করেন। 

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীন বেশ কিছু স্কুল রয়েছে যেগুলো বছরের পর বছর অনিয়মের মাধ্যমে চলছে। কোনো কোনো স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিলে স্কুলের সম্পদ তছরুপ করেছেন। কেউবা  ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। ম্যানেজিং কমিটি গঠনেও অনিয়ম রয়েছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম নয়। বছরের পর বছর ধরে একই ব্যক্তিকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাখা হয়েছে অনেক স্কুলে। এর ফলে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে জড়িয়েছেন দুর্নীতিতে। এসব স্কুলে কর্মরত সাধারণ শিক্ষকেরা বছরের পর বছর ধরে বঞ্চিত হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিনোদপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাবির উদ্দিনের দুর্নীতির দীর্ঘ তালিকা। গত ৭ জুলাই এই স্কুলের ১৬ জন শিক্ষক প্রধান শিক্ষক সাবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন। এই অভিযোগে শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও বিভিন্ন ফান্ডের টাকা তছরুপের অভিযোগ করেন। এলাকাবাসীও সাবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে। এতে বলা হয় স্কুল মার্কেটের দোকান বরাদ্দের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করেছেন প্রধান শিক্ষক। বিনোদপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বোর্ডের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কেউ কেউ আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সাবির উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, স্কুলের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে। আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে সেগুলো সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে  বোর্ডের স্কুল পরিদর্শকের বিরুদ্ধে আনীত ঘুস চাওয়ার বিষয়ে কোনো প্রামাণ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি অভিযোগ করেছেন তবে কোন প্রমাণ তার কাছে নেই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে - dainik shiksha অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ - dainik shiksha জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর - dainik shiksha বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা - dainik shiksha হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল - dainik shiksha পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002626895904541