স্কুলে আসছে না ঘাটাইলের ৩ হাজার ২৭ শিক্ষার্থী

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি |

পাকুটিয়া পাবলিক মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল প্রকাশ চক্রবর্তী। তার বাবা প্রবাস চক্রবর্তী কাজ করতেন বাবুর্চির। অসুস্থ। করোনাভাইরাসের কারণে যেমন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল, ঠিক তেমনি বন্ধ ছিল প্রকাশের বাবার কাজ। অসচ্ছল সংসারের খরচ জোগাতে সে দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করে। স্কুল খোলা হলেও তার আর ফেরা হয়নি; ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর তালিকায় নাম উঠেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঘাটাইল উপজেলায় ৩ হাজার ২৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে স্কুলে না আসার তালিকায়।

উপজেলায় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- স্কুল ৬১ এবং মাদ্রাসা ৩২টি। মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরের তথ্যমতে, ৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে করোনা মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৬০৮। ২০২০ সালে উপজেলায় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার। এর মধ্যে শতকরা প্রায় ৭ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। 

প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ১৭২টি বিদ্যালয়ের ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ঝরে পড়েছে মাত্র ৪১৯ জন। শতকরা প্রায় দু'জন ঝরে পড়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানায়, করোনাকালীন সময় ইবতেদায়ি মাদ্রাসা খোলা থাকায় অনেক শিক্ষার্থী সেখানে চলে গেছে। আবার অনেক অভিভাবকের পেশা পরিবর্তন হওয়ায় সন্তান নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

জানা যায়, করোনাকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণির ৩ জন এবং পঞ্চম শ্রেণির ১৩ জন।

মাধ্যমিকেও অনেক শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। এ তালিকায় উপজেলার এক স্কুলেই বিয়ের শিকার ৫৫ জন শিক্ষার্থী।

জানা যায়, বিয়ে হলেও অনেকেই বিদ্যালয়ে নিয়মিত। ঘাটাইল কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, উপজেলায় ১১০টি কিন্ডারগার্টেন ছিল, করোনাভাইরাসের প্রভাবে প্রায় ১০টি বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যগুলো অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মমরেজ গলগন্ড পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ খান বলেন, মফস্বল এলাকার অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক দরিদ্র। দারিদ্র্য ও বাল্যবিয়ের কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফের স্কুলমুখী করার জন্য সরকার পরিকল্পনা করেছে।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে এরই মধ্যে এ বিষয়ে সভা করা হয়েছে। সভায় ওইসব শিক্ষার্থীকে স্কুলমুখী করতে বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ইউএনও সোহাগ হোসেন বলেন, যেসব শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না, তাদের স্কুলে ফেরানোর জন্য কাজ চলমান রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। শিক্ষকদের শিক্ষার্থীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে এবং সে অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035629272460938