স্কুল-কলেজে চারু ও কারুকলা শিক্ষা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চারু ও কারুকলার গুরুত্ব বোঝাতে দু-একটি কথা বলতে পারি। যেহেতু চিন্তন ক্ষমতার প্রভাবেই সৃষ্টি হয়েছে ভাষা তাইতো বলা হয় আর্ট সব ভাষার জনক। শিশু প্রকৃতির আলো, বাতাস, রস, রূপ, গন্ধ ইত্যাদির মধ্যে বেড়ে ওঠে। ভালোবাসতে শেখে তার চারপাশের জগত্ ও বস্তুকে। উপভোগ করে সৌন্দর্যের সমারোহকে, কল্পনায় হয়ে পড়ে সৃজন প্রয়াসী। এর মাধ্যমে মনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা, কল্পনা প্রবণতাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া, কর্মস্পৃহা ও প্রাণচাঞ্চল্যকে সৃজনশীল কাজে লাগাতে উৎসাহিত করা চারু ও কারুকলার অন্যতম শক্তি। তাই বলা যায়, চারু ও কারুকলা সৃজনশীলতার মূল চাবিকাঠি। রোববার (৫ জানুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, ছবি আঁকা ও অন্য শিল্পকর্ম মানবজীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধভাবে গড়ে তুলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। আর ছবির মাঝে রঙের খেলা খেলতে খেলতে কঠিন বিষয়গুলোও সহজ করে দেওয়া যায়। লেখাপড়ার উন্নতি, সুন্দর-অসুন্দর, রুচিবোধ, মানুষ এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা ও সাহসীভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। তথা সুশীল জাতি গঠনের চালিকাশক্তি হিসেবে অনন্য ভূমিকা রাখে। শিল্পকলা শিক্ষা সম্পর্কে নন্দনাল বসু বলেছেন, ‘প্রকৃতির সঙ্গে যোগসাধন একবার হলে, প্রকৃতিকে একবার ভালোবাসতে শিখলে, ছেলেদের অন্তরে রসের উৎস আর কখনো শুকাবে না’। শিল্পী বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় বলতে হয়— ‘শিল্পের প্রধান তাত্পর্য অভিব্যক্তির দিক দিয়ে হূদয়হীন মানুষ শক্তিশালী হলেও যেমন তার বর্বরতা ঘোচে না, শিল্পাশ্রিত অভিব্যক্তির অবর্তমানে সমাজে বিশেষ রকমের বর্বরতা দেখা দিতে পারে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক পরিচালক, কার্টুনিস্ট ও বিশিষ্ট শিল্পী রফিকুন নবী (র’নবী) স্কুল পর্যায়ে চারু ও কারুকলা শিক্ষার গুরুত্বারোপ করে জানান, শিশুরা বড়ো হবে মুক্তভাবে, তারা বড়ো হবে সৃষ্টিশীল চিন্তার মধ্য দিয়ে। শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে তাদের মনে একটা রুচিবোধ সৃষ্টি হবে, যা তার পরবর্তী জীবনের শিক্ষায় কাজে লাগবে। তিনি অনেকটা গর্বের সঙ্গে আরো বলেন, আমাদের দেশের শিশুরা এ শিক্ষার তেমন জ্ঞান না নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। তারা কিন্তু পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে সে খবর কয়জন রাখে? তার মতে, এসব বাচ্চা যদি বিদ্যালয়ে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করে তাহলে তারা আরো কত দূর যাবে, এটা কেউ ভাবে?

দূরদর্শী বিবেচনা করে ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালয়ে চিত্রকলা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, ১৮৫৪ সালে রবার্ট চালর্স উড-এর ‘ডেসপ্যাস’-এর মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার কর্মসূচি গৃহীত হয়। ১৮৮২ সালে হান্টার কমিশন, ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জনের ‘শিক্ষা সংস্কার আইন’ এবং পরবর্তীকালে ১৯৪৪ সালে মাধ্যমিক শিক্ষার শিক্ষার্থীকে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা হিসেবে শিল্পকলা শিক্ষকের পদ সৃষ্টি ও সংরক্ষণ করা হয়। সুতরাং চারু ও কারুকলা সম্পর্কে থাকা চাই পরিষ্কার ধারণা।

চারুকলার শ্রেণি বিভাগ :চিত্রকলা (Painting), সাহিত্যকলা (Literature), সংগীতকলা (Music), নাট্যকলা (Dramaties), নৃত্যকলা (Dance), রন্ধনকলা (Culinary), ভাস্কর্য (Sculpture), ক্রীড়া (Acrobatics), স্থাপত্যকলা (Arachitecture), যাদু ইত্যাদি (Magic etc.)। অন্যদিকে কারুকলার শ্রেণি বিভাগ:মৃিশল্প (Ceramics), চর্মশিল্প (Leather), দারুশিল্প (Wood), বাঁশশিল্প (Bamboo and cane), সীবনশিল্প (Weaving), কাতাইশিল্প (Copra), ধাতবশিল্প (Matalic), রেশমশিল্প (Sericulture), কাগজশিল্প (Paper Mache), বয়নশিল্প ইত্যাদি (Wiving etc.)। আমাদের বাংলাদেশ এক ডিজিটালাইজেশনের নৌকায় চড়ে বসেছে। এই নৌকার বেগ আরো গতিময় করতে প্রয়োজন আদর্শবান, নান্দনিক এবং দূরদর্শী মানুষ। একমাত্র শিল্পকলার সঠিক চর্চাই পারে এরকম মানুষ উৎপাদন করতে।

আমরা নিজেদের দেশের ছক নিজেরা আঁকব, নিজেরাই হব ইঞ্জিনিয়ার, নিজেরাই হব আদর্শিক দেশপ্রেমিক। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে চাই, সরকার এবং আপামর জনগণের সুদৃষ্টি কাম্য। ‘চারু-কারুর বিকাশ হলে, দেশ এগোব বিশ্বতালে। ডিজিটাল হবে বাংলাদেশ, বিশ্ব বলবে বেশ বেশ বেশ।’

নাবিল হাসান : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030879974365234