চার সপ্তাহের অচলাবস্থা কাটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী রোববার থেকে খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও পুরোদমে চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো নতুন সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ সেপ্টেম্বর শুরু হবে।
তবে সরকার পরিবর্তনের পর সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য, সহ–উপাচার্যসহ শীর্ষ পর্যায়ের পদগুলোতে পদত্যাগ ও পদত্যাগে বাধ্য করানোর হিড়িক পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো যোগ্য কাউকে নিয়োগ না দেওয়ায় প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। সরকারি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করায়
শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় এক মাস বন্ধ থাকায় এমনিতেই শিক্ষায় বড় রকম ক্ষতি হয়েছে। এখন শিক্ষাঙ্গনকে খুব দ্রুত কার্যকর করে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা উচিত। একই সঙ্গে দলীয়করণের বৃত্ত থেকে বের হয়ে পদত্যাগ করা পদগুলোতে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে।
এ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটিগুলো নিয়েও জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের কারণে গত ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত ১৯ জন উপাচার্য, ১১ জন সহ–উপাচার্য এবং ৫ জন কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে ১৬ জনের পদত্যাগপত্র ইতিমধ্যে গৃহীত হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে। দেশে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে ৫৫টি।
পদত্যাগ করা উপাচার্যদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মো. নূরুল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মো. আবু তাহের, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সাদেকা হালিম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মশিউর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহও পদত্যাগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশ কয়েকজন সহ–উপাচার্য, বিভিন্ন আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার ও ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টরদেরও কেউ কেউ পদত্যাগ করেছেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও পদত্যাগ করতে পারেন বলে আলোচনা আছে।
প্রশাসনিক এসব পদে নতুনদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এখন বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সব শিক্ষার্থী হলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরিবেশ তৈরি হলেই ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া শুরু হবে।
খুলছে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা
আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর ৭ আগস্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও স্কুলগুলোতে ভয় ও আতঙ্কে উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। গতকাল বৃহস্পতিবার মতিঝিলে অবস্থিত আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষক জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ে একেকটি ক্লাসে শিক্ষার্থী ৬০ থেকে ৭০ জন। সেখানে গতকাল উপস্থিত ছিল ১২ থেকে ১৪ জন।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী রোববার থেকে খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে নতুন করে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গতকাল জারি করা এই নির্দেশনায় বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে গত বুধবার এক আদেশে পুরোদমে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে শ্রেণি কার্যক্রম চালুর নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এইচএসসি
এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো নতুন সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে। এ বিষয়ে গতকাল সংশোধিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে শিক্ষা বোর্ড। শিক্ষার্থী আন্দোলনের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় এসব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৮ দিন পরীক্ষা হয়েছে। এখনো আরও ১৩ দিনের পরীক্ষা বাকি আছে।