স্কুল পালানো শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে বুঝালেন অধ্যক্ষ

রাজশাহী প্রতিনিধি |
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে অহরহ ঘটছে নানান অঘটন। এ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। বিষয়টি উদ্বেগ বাড়িয়েছে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমানের। এমন কাণ্ড থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত রাখতে মঙ্গলবার কলেজ চলাকালে নগরীর পদ্মাপাড়ে গিয়েছিলেন অধ্যক্ষ।
 
এ সময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও পেয়ে যান। তাদের এমন কাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান হবিবুর রহমান। শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে বোঝান, ক্লাস-পড়ার টেবিলে ফেরার আহ্বান জানান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক বারিক মৃধা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক রুবাইয়াত-ই-আফরোজ, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজের প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান।
 
রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষের এমন কর্মকাণ্ডকে ইতিবাচক বলছেন বিনোদন কেন্দ্রে আসা লোকজন। অন্য কলেজে অধ্যক্ষদেরও এইভাবে সচেতনতায় নামার আহ্বান জানান তারা।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবাধে ঘুরে বেড়ানো শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বাইরে থেকে আসা। অভিভাবকদের নজরদারি না থাকায় পড়ালেখায় ফাঁকি দিয়ে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা। কেউ কেউ সুযোগ বুঝে ইউনিফর্ম খুলে রাখছে ব্যাগে। বিশেষ করে ক্লাস চলাকালীন নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে সময় কাটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি কলেজ-স্কুলের ইউনিফর্ম পরে যুগল আড্ডা দিতেও দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
 
নগরীর পদ্মা গার্ডেন, পদ্মাপাড়ের সীমান্ত অবকাশ, সীমান্ত নোঙ্গর, লালন শাহ পার্ক, টি-বাঁধে সময় কাটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পদ্মার বিস্তৃর্ণ চরেও অবাধ বিচরণ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। আরও একান্তে সময় কাটাতে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা এবং ভদ্রা পার্ক বেছে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এসব স্থানে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীরা অসামাজিক কাজেও জড়িয়ে পড়ছে। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন ঘুরতে আসা বিনোদন প্রেমীরা।
 
শিক্ষার্থীদের এই অবাধ মেলামেশায় সামাজিক অবক্ষয় বাড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজশাহীর শিক্ষাবিদরা। একই সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অভিভাবক ও প্রশাসনকে কঠোর হবারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
 
কলেজ চলাকালে পদ্মাপাড়ে একান্তে সময় কাটাচ্ছিলেন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ও শাহ্ মখদুম কলেজে এক ছাত্রী। এই দুই শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়ি নওগাঁয়। পড়ালেখার সুবাদে দুজনই রাজশাহীতে থাকেন। আগে থেকেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরিবারের দৃষ্টি না থাকায় অবাধে মেলামেশার কথা স্বীকার করেছে এই শিক্ষার্থী যুগল।
 
এমন অনেক যুগলকেই পাওয়া গেলো নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। এসব শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ এবং নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে এসেছে। বাদ যায়নি নগরীর মসজিদ মিশন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
 
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তারা একান্তে সময় কাটানোর জন্য নিরাপদ জায়গা হিসেবে পদ্মাপাড় বেছে নিয়েছে। বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী এখানে সময় কাটায়। অভিভাকরা বিষয়টি টেরই পান না।
 
শিক্ষার্থীদের এমন কাণ্ড কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন আবুল কালাম নামে এক অভিভাবক। তিনি বলেন, অভিভাবকদের উচিৎ ছেলে-মেয়েরা ঠিকমতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে কি না। এ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও দায়িত্ব আছে। পার্ক-উদ্যানে নজরদারি রাখা দরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
 
এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান বলেন, প্রতিটা অভিভাবককে খোঁজ রাখতে হবে তাদের ছেলে বা মেয়েটা স্কুল-কলেজে গেল কি-না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে শিক্ষার্থী অনুযায়ী খোঁজ রাখতে হবে। ১৫ জন শিক্ষার্থীর দেখভালের জন্য একজন শিক্ষককে যদি গাইড হিসেবে রাখলে ভালো হয়। সেই শিক্ষককের কাছ থেকেই ওই সব শিক্ষার্থী সম্পর্কে জানা যাবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে নোটিশ করতে হবে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে মাইকিং করতে হবে কোনো শিক্ষার্থী কলেজ ড্রেস পড়ে বা না পড়ে ক্লাস চলাকালীন ওই সব স্থানে অবস্থান করতে পারবে না। এটি হলে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
 
শিক্ষার্থীরা যে পদ্মা পাড়ে ঘুরতে যাচ্ছে এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান বলেন, তাদের নৈতিকার অবক্ষয় হচ্ছে। তারা পড়া-লেখাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। লেখা-পড়ার মূলস্রোত থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে। যার ফলে তারা মাদক, সন্ত্রাসের পথ বেছে নিতে পারে। আমি মনে করি এক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনকেও দায়িত্ব নিতে হবে।
 
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়েই শিক্ষার্থীদের এমন চলাফেরা নজরে পড়ে। অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সময় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের সখ্যতা গড়ে উঠছে।
 
ফলে তারা ধূমপান ও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা বিভিন্ন সময় মহানগর পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তারা বিভিন্ন সময় পুলিশের টহল বাড়িয়েছে, কিন্তু এ সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। বিষয়টি সমাধানে শিক্ষক, অভিভাবক, পুলিশ-প্রশাসন সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028479099273682