ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর মরিচপাড়া গ্রামের অচেনা রোগটি এখনো ধরতে পারেননি বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা। একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর পর ওই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসীর চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে ঘটনাস্থলে একটি চিকিৎসা ক্যাম্প বসানো হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। এলাকাবাসীর সুরক্ষায় এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১৫০ বিশেষ মুখোশ (মাস্ক)। আতঙ্কিত হয়ে নতুন করে আর কেউ যেন অসুস্থ না হয় সে জন্য নজরদারি ও পরামর্শ দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম জানান, আতঙ্কের কারণে মরিচপাড়া গ্রামের পাশের ভাণ্ডারদহ উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি স্কুল ছুটি দেওয়া হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর মরিচপাড়া গ্রামে ফজর আলীর বাড়িতে অচেনা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৫ দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের পাঁচজন মারা যায়। প্রতিবেশীসহ নিকটাত্মীয় পাঁচজন এখনো অসুস্থ রয়েছে। এর মধ্যে ওই পরিবারের মারা যাওয়া ইউসুফের স্ত্রী কোহিনুর বেগম, তাঁদের ১৬ মাসের সন্তান আবীর রহমান ও বাবা রবিউল ইসলাম রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিবেশী সালমা বেগম ও সাবেক ইউপি সদস্য সইদুল হক স্থানীয় বালিয়াডাঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
একই পরিবারে এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ধনতলা ইউনিয়নের মরিচপাড়া গ্রামের মানুষ এখনো আতঙ্কে রয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল ওই বাড়ির পাশেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। আনসার সদস্যরা ওই বাড়িতে যেন কেউ ঢুকতে না পারে তা নজরদারি করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, ফজর আলীর ওই বাড়ির আশপাশে জনগণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ওই গ্রামের মানুষকে ১৫০টি মাস্ক দেওয়া হয়েছে।
রোগ শনাক্তে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা থেকে রংপুরে পৌঁছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞদল। বিশেষজ্ঞদলটি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজনের রক্তসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে। তারা রোগ শনাক্তে কাজ শুরু করলেও প্রাথমিক কোনো ধারণা দিতে পারেনি। তবে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম ধারণা করছেন, এটি ‘এনকেফালাইটিস’ জাতীয় ভাইরাস হতে পারে। এই রোগে মস্তিষ্কে প্রদাহ হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে রোগী মারা যায়।
ঠাকুরগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. শাহজাহান নেওয়াজ জানান, এখন পর্যন্ত রোগ নির্ণয় সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর কারণ খুঁজতে ঢাকা থেকে আসা চিকিৎসক গাজি শাহ আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশন র্যাপিড রেসপন্স টিমটি মঙ্গলবার সকালে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থদের সঙ্গে কথা বলেছে। রংপুরের কাজ শেষ করে দলটি ঘটনাস্থল মরিচপাড়া গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে অচেনা রোগের উৎপত্তিস্থল পরিদর্শন করবে। পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফিরে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। এর পরই হয়তো মৃত্যুর কারণ ও রোগ সম্পর্কে জানা যাবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, স্থানীয়রা যেন আতঙ্কিত না হয় সে জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জনগণের পাশে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।