স্কুল শিক্ষার্থীদের সঞ্চয় ১৪২০ কোটি টাকা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অনেক ব্যাংকের অনাগ্রহের পরও স্কুল ব্যাংকিংয়ের প্রসার হচ্ছে। গত জুন পর্যন্ত স্কুল শিক্ষার্থীরা তাদের অ্যাকাউন্টে জমিয়েছে এক হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এক বছর আগের তুলনায় যা প্রায় ২৬ শতাংশ বেশি। সঞ্চয়ের ৭৭ শতাংশই শহরাঞ্চলে। গ্রামে বাকি ২৩ শতাংশ। এদিকে, সামগ্রিকভাবে স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বাড়লেও কমেছে বিশেষায়িত ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

একসময় শুধু ১৮ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তিরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারতেন। ছাত্রছাত্রীদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে ২০১০ সালে এক নির্দেশনার মাধ্যমে স্কুল শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ তৈরি হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড নিয়ে একজন শিক্ষার্থী মাত্র একশ টাকা জমার বিপরীতে যে কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। দেশের প্রচলিত আইনে ১৮ বছরের কম বয়সীরা অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এ ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি নিতে হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা গড়ে তুলতে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে এসব অ্যাকাউন্ট খুলতে ব্যাংকগুলোর প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্টে জমানো টাকার ওপর সর্বোচ্চ সুদ দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় গত জুন নাগাদ মোট ১৫ লাখ ৪০ হাজার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। গত বছরের একই সময় পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট ছিল ১৩ লাখ ৩৪ হাজার। গত এক বছরে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার বা ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। সার্বিকভাবে অ্যাকাউন্ট বাড়লেও বিশেষায়িত ও বিদেশি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট কমেছে। গত জুনে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট কমে এক লাখ ২৮ হাজারে নেমেছে। গত ডিসেম্বরে এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ছিল প্রায় এক লাখ ৩৯ হাজার। অর্থাৎ ছয় মাসে ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট কমেছে প্রায় ১১ হাজার বা ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর তিন মাস আগের তুলনায় ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ অ্যাকাউন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৬০টি। তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ছয় মাসে প্রায় ১২ হাজার অ্যাকাউন্ট বেড়ে চার লাখ ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ছয় মাসে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার বেড়ে নয় লাখ ৭৪ হাজারে উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অ্যাকাউন্ট ও জমা উভয় বিবেচনায় এগিয়ে আছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। মোট অ্যাকাউন্টের ৬৩ দশমিক ২৩ শতাংশ রয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। আর মোট জমার ৮৪ দশমিক ৫০ শতাংশ রয়েছে এসব ব্যাংকে। রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রয়েছে মোট অ্যাকাউন্টের ২৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। তবে মোট জমার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ রয়েছে এসব ব্যাংকে। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকে রয়েছে মোট অ্যাকাউন্টের ৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। অথচ এসব অ্যাকাউন্টে রয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ অর্থ। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোতে রয়েছে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ অ্যাকাউন্ট। অথচ মোট জমার প্রায় ১ শতাংশ রয়েছে এসব ব্যাংকে।

স্কুল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খোলায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। মোট অ্যাকাউন্টের ১৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ রয়েছে এসব ব্যাংকে। পর্যায়ক্রমে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকে রয়েছে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকে ১২ দশমিক ৬৫, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৮ দশমিক ৩১ ও উত্তরা ব্যাংকে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এই পাঁচ ব্যাংকে রয়েছে ৫৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ অ্যাকাউন্ট। 

স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলার দিক দিয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর শাখা বেশি বিস্তৃত থাকায় ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় আনার বেশি সুযোগ রয়েছে। এ লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নিয়ে এগোচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক। এসব সেবার জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নামে আলাদা একটি বিভাগ করা হয়েছে। 

স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের মধ্যে শহরে রয়েছে নয় লাখ ৪২ হাজার। মোট স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের যা ৬১ দশমিক ২০ শতাংশ। আর গ্রামে রয়েছে পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার অ্যাকাউন্ট, যা ৩৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। স্কুল শিক্ষার্থীদের মোট অ্যাকাউন্টের মধ্যে ছাত্র রয়েছে আট লাখ ৯৪ হাজার, যেখানে জমা রয়েছে ৭৭৭ কোটি টাকা। আর ছয় লাখ ৪৬ হাজার ছাত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৬৪৩ কোটি টাকা। জমার হিসাবে ছাত্রীদের অংশ ৪৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর অ্যাকাউন্টের হিসাবে ৪১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

সূত্র: সমকাল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029540061950684