সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হলেও নির্বাচিত প্রার্থীদের যোগদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কোটা-সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন জেলার নিয়োগ নিয়ে আদালতে করা রিট মামলা হওয়ায় দেশের ৪১ জেলায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের যোগদান ও পদায়ন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। তবে আগামী মার্চের মধ্যে রিট মামলা নিষ্পত্তি করে দেশের সব জেলায় নিয়োগ ও পদায়ন সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম নীতিমালা অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ নারী, ২০ শতাংশ পোষ্য ও ২০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করা হয়। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি নতুন শিক্ষকদের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি নতুন শিক্ষদের ওরিয়েন্টেশন এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পদায়নের আদেশ জারি করার কথা ছিল। তবে, দেশের ৪১ জেলায় শিক্ষক নিয়োগে বিধি অনুযায়ী কোটা অনুসরণ হয়নি দাবি করে আদালতে রিট মামলা করেন বাদপড়া প্রার্থীরা।
জানা গেছে, পটুয়াখালী, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, ফরিদপুর, ঢাকা, খুলনা, নাটোরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় একাধিক রিট আবেদন করা হয়েছে। এ কারণে একটি আবেদন নিষ্পত্তি হলে আরেকটি বহাল থাকছে বলে সেসব জেলায় নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের।
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আদালতে রিট মামলা দায়ের হওয়ায় ৪১ জেলার নিয়োগ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। তবে, সব মামলা মোকাবিলা করছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকার পক্ষের আইনজীবীরা প্রমাণ আদালতে দাখিল করেছেন। তাই নতুন করে আর কোনো জেলায় এ নিয়োগ-সংক্রান্ত মামলা গ্রহণ করা হচ্ছে না। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় স্থগিতাদেশ বাতিল হওয়ার অপেক্ষায়। যেসব জেলায় স্থগিতাদেশ বাতিল করা হবে সেখানে যোগদান ও পদায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সব আইনি জটিলতা কাটিয়ে মার্চে স্থগিত থাকা ৪১ জেলার প্রাথমিকের নতুন শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদায়ন সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে পাস করা প্রার্থীদের যোগদান ও পদায়ন স্থগিত হওয়ায় আন্দোলনে নেমেছেন নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) তারা রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তিন দফা দাবিতে মানববন্ধন পালন করেন।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে ওই বছরের ১ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশ থেকে ২৪ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। গত বছর সারাদেশে প্রথম ধাপে ২৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে, তৃতীয় ধাপে ২১ জুন এবং চতুর্থ ধাপে ২৮ জুন লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
সেপ্টেম্বরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ৫৫ হাজার ২৯৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। গত ৬ অক্টোবর থেকে এর মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। মাসব্যাপী সারাদেশের সব জেলায় মৌখিক পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। সবশেষে গত ২৪ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় ১৮ হাজার ১৪৭ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করে ফল প্রকাশ করা হয়।