স্নাতকে চার কোটি টাকার বৃত্তি পেলেন বগুড়ার সাদিয়া

দৈনিকশিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিকশিক্ষাডটকম ডেস্ক: প্রশ্ন: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা কোথায়? কেমন কেটেছে শৈশব?

উত্তর: শৈশব ও বেড়ে ওঠা বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলায়। মফস্বল শহরের একটি স্কুলে পড়তাম। স্কুলটি শুরুতে কেবল ছেলেশিক্ষার্থীদের জন্য ছিলো। পরে ছেলে-মেয়ে উভয় ধরনের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য রূপান্তর করা হয়েছে। রূপান্তর করা হলেও নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় সেই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে একমাত্র মেয়েশিক্ষার্থী ছিলাম আমি। তাই দেখা যেত, ক্লাস বা পরীক্ষায় একাই বসতে হতো। সব মিলিয়ে স্কুলের দিনগুলো খুব বেশি রঙিন ছিলো না। টেলিভিশনে কার্টুন বা সিসিমপুর দেখার সময় কিছুটা উপভোগ করতাম। সিসিমপুর দেখেই মূলত আমার সুন্দর করে কথা বলতে শেখা।
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্রিপস ক্লারমন্ট কলেজে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন। অনুভূতি কেমন?

উত্তর: ঘড়িতে সময় রাত প্রায় সাড়ে চারটা। অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার দিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্রিপস ক্লারমন্ট কলেজে ভর্তির জন্য অফার লেটারসহ ই-মেইল পাই। ই-মেইলের প্রথম শব্দটা ছিলো অভিনন্দন। আরো পুরো ই-মেইলটি পড়ে তো কেঁদেই ফেলেছিলাম। কারণ, এর আগে কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাননি। যাহোক, সব মিলিয়ে মোট ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলাম। এ সময় ১২ বছরের সব অর্জন যথাযথভাবে কমন অ্যাপে উপস্থাপনের চেষ্টায় কোনো ছাড় দিইনি। এর ফল হিসেবে ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ জীবিকা ভাতাসহ বৃত্তি নিয়ে স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার সুযোগ এসেছে।

প্রশ্ন: আপনার কিছু সহশিক্ষা কার্যক্রম ও সম্পর্কিত অর্জন সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর: ছোটবেলা থেকে সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তাই কবিতা আবৃত্তি, নাচ, গান বা নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করতাম সব সময়। পরে অষ্টম শ্রেণি থেকে অলিম্পিয়াড করা শুরু করি। সেই সুবাদে ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দে আন্তর্জাতিক ফলিত রসায়ন অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জপদক পাই। একই বছর ইউএসএ মেডিকেল অ্যান্ড ডিজিজ অলিম্পিয়াডে বিশ্বের সেরা ১০ শতাংশের (স্কোর ১১২/১৫০) মধ্যে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করি। পাশাপাশি কমনওয়েলথ ইয়ং লিডার অ্যাওয়ার্ডসহ সহশিক্ষা কার্যক্রমে অর্জিত প্রায় ১২৩টি পুরস্কার আমার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।

প্রশ্ন: ফুলরাইড স্কলার হিসেবে স্ক্রিপস কলেজে আপনাকে কী কী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে? আরো সেখানে গিয়ে আপনার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কী? বাংলাদেশ নিয়ে আপনার কোনো কাজের পরিকল্পনা আছে?
উত্তর: বৃত্তির আওতায় আমি প্রায় ৬৫ হাজার ডলার তহবিল পেয়েছি। থাকা-খাওয়াসহ আমার সব ব্যক্তিগত খরচ পূরণ হবে এই বৃত্তির মধ্য দিয়ে। পাশাপাশি ইন্টার্নশিপসহ স্ক্রিপস ক্লারমন্ট কলেজের গবেষণা কেন্দ্রে প্রথম সেমিস্টার থেকেই বিভিন্ন গবেষণাকাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের লাসপা লিডারশিপ সেন্টারে বিশ্বের নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা হয়। এই লিডারশিপ সেন্টারের আওতায় বর্তমানে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছি। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান নিয়ে পিএইচডি করারও ইচ্ছা রয়েছে। আরো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লৈঙ্গিক বৈষম্য-আগ্রাসন, বয়ঃসন্ধি, মাসিক স্বাস্থ্য, নারীদের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে চাই।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের স্নাতক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে আবেদনের জন্য কখন থেকে এবং কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত?
উত্তর: যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতে সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার সময় হচ্ছে অষ্টম-নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য। কারণ, ভর্তি প্রক্রিয়া মূলত কোনো নির্দিষ্ট একটি পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয় না। এ ক্ষেত্রে একাডেমিক ফল তেমন মুখ্য নয়, পাশাপাশি ব্যক্তিগত মান, অর্জনসহ অনেক কিছুই নির্ভর করে। বৃত্তি দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবার আগে একজন ভালো মানুষ ও প্রকৃত নেতা খোঁজে। তাই স্বপ্ন থাকলে শুরু থেকে নিজেকে যথাযথভাবে গড়ে তোলার কাজ করে যেতে হবে।

ছোটবেলা থেকে পাইলট হয়ে পাখির চোখে দুনিয়া দেখার স্বপ্ন দেখতেন সাদিয়া ইয়াসমিন শ্রাবণী। তবে সেই স্বপ্ন থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েও তিনি ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। পরে ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনার সুযোগ না পাওয়ার কষ্ট ঘোচাতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শুরু করেন। সহশিক্ষা কার্যক্রমের কল্যাণে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের বিভিন্ন পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীর পুরস্কারসহ তাঁর ঝুলিতে আছে মোট ১২৩টি পদক। পাশাপাশি বর্তমানে চার কোটি টাকার বৃত্তি নিয়ে ফুলরাইড স্কলার হিসেবে ভর্তি হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের স্ক্রিপস ক্লারমন্ট কলেজে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহতাব আজমাঈন রিয়াদ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অনুদান পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনের সময় বাড়লো - dainik shiksha অনুদান পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনের সময় বাড়লো চার হাজার আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha চার হাজার আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ - dainik shiksha সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ সব দাবি-দাওয়া একমাস বন্ধ রাখার আহ্বান নুরের - dainik shiksha সব দাবি-দাওয়া একমাস বন্ধ রাখার আহ্বান নুরের মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম - dainik shiksha মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের - dainik shiksha গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস - dainik shiksha শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049760341644287