স্পোকেন ইংরেজির বই কতোটা কার্যকর

মাছুম বিল্লাহ |

স্পোকেন ইংরেজি শেখার জন্য চারদিকেই হৈচৈ। প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে চাইছেন। এজন্য বিভিন্ন ধরনের বই কিনছেন, বিভিন্ন জায়গায় যাচেছন, সময় দিচেছন। তাদের ইংরেজি শেখাতে অনেকে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য, চাকরিজীবীদের জন্য, চাকিরপ্রার্থীদের জন্য, বিদেশে গমনেচছুদের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। কেউ আবার শেখাচেছন শুধুই উচচারণ। সবগুলোকেই আমি পজিটিভলি দেখতে চাই। তবে, বিদেশি একটি ভাষা শেখা বা শেখানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু বিষয় আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

স্পোকেন ইংরেজি শেখার জন্য আমরা বিভিন্ন কোচিং সেন্টার কিংবা ব্যক্তিগত শিক্ষকদের কাছে গিয়ে কিছু ডায়ালগ মুখস্থ করছি। এটি আমাদের ইংরেজি শিখতে প্রকৃতঅর্থে কতোটা সহায়তা করছে তা ভাবার বিষয়। 

খেয়াল করলে দেখবেন, দীর্ঘ বারো বছর বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে ইংরেজি আমরা পড়ে এসেছি, পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষায় পাস করেছি। কিন্তু, ইংরেজি শেখা হয়নি। কারণ, এই বাধ্যতামূলক বিষয়ে বলায়, লেখায়, পড়ায় বা কারোর ইংরেজি শুনে বুঝার কোনো প্র্যাকটিস করানো হয়নি। কিছু নিয়ম-কানুন বাংলায় মুখস্থ করে, কিছু প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করে পরীক্ষায় পাস করানোই ছিলো মুখ্য বিষয়। এখনও সেটাই আছে। 

অথচ আমাদের ইংরেজি পাঠ্যবই পড়ে কিংবা পড়িয়ে ইংরেজি শেখা যায়, শেখানো যায়। সেই কাজটিই করা হয় না। এজন্য এর সাথে যারা জড়িত, সবাই দায়ী। শিক্ষার্থীরা চান তাড়াতাড়ি ও সহজ উপায়ে ইংরেজিতে পাস করতে। অভিভবকরা চান তাদের সন্তান কোন স্কুলে গেলে, কোন শিক্ষকের কাছে গেছে বেশি নম্বর পাবেন সেটা। স্কুল চায় কোন শিক্ষক এই বিষয়টাকে পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি উচচগ্রেড এনে দিতে পারবেন। আর শিক্ষকরা চান যাতে সবাই খুশি হয় এবং তার নিজেরও কিছু উপার্জন হয় সেভাবে বিষয়টি পড়াতে। 

কাজেই প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষায় পাস করার পর যখন বাস্তব জীবনে ইংরেজি দরকার হচেছ তখন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আবার খুঁজছেন কার কাছে গেলে, কোথায় গেলে তাড়াতাড়ি এবং সহজে ইংরেজি শেখা যাবে। আর এই অবস্থায় অনেকেই ইংরেজি শেখানোর চেষ্টা করছেন। এখানেও একটি নতুন মার্কেট তৈরি হয়েছে। 

বাজারে প্রচলিত বেশ কয়েকটি বই দেখলাম। সেগুলো মোটেও স্পোকেন ইংরেজি বা রিটেন ইংরেজি শেখানোর উপযোগী নয়। প্রতিটি বই-ই ইংরেজি থেকে বাংলায় ট্রানস্লেশন দিয়ে ভর্তি। তাদের উদ্দেশ্য হয়তো শিক্ষার্থীদের সহজে বুঝানো। কিন্তু, এখানে বিষয়টি মূলত প্র্যাকটিসের। 

মনে রাখতে হবে, একটি বিদেশি ভাষা প্র্যাকটিস করার সময় মাতৃভাষা যতোটা কম ব্যবহার করা যায় ততোটাই মঙ্গল। মাতৃভাষা যদি একেবারেই ব্যবহার করা না যায় তাহলে সবচেয়ে ভালো। এতে শিক্ষার্থী বা প্রার্থীরা ইংরেজিতে কথা বলতে ও শিখতে পারবেন। আমাদের দেশের বহু ছেলে-মেয়ে কিন্তু ভারতীয় সিনেমা দেখে দেখে হিন্দি ভাষায় কথা বলা শিখে ফেলেছেন। কেউ তাদের হিন্দি থেকে বাংলায় ট্রানস্লেট করে দেয়নি। এটি হচ্ছে ন্যচারাল পদ্ধতিতে শেখা। ইংরেজির ক্ষেত্রেও এটাই হওয়া উচিত। কিন্তু স্পোকেন বইগুলো ট্রানস্লেশন দিয়ে ভর্তি হওয়ায় যেসব লাইনের ট্রানস্লেশন করা হয়েছে সেগুলো বুঝা যাচেছ বটে, তবে এভাবে স্পোকেন স্কিলে স্বতস্ফূর্ততা অর্জন একেবারেই অসম্ভব।  

আবার কনটেক্সটেরও বিষয় আছে। যেমন ধরুন- চায়ের দোকানদারের সাথে কিভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। আমাদের দেশের চায়ের দোকানদারের সঙ্গে কিন্তু কখনো ইংরেজি বলা যাচেছ না। কারণ সেখানে ইংরেজি বললে তারা কিছুই বুঝবে না। আর যদি মনে করা হয় যে, বিদেশে গিয়ে আমি চায়ের দোকানদারের সঙ্গে ইংরেজি বলবো, সেখানে কিন্তু আমাদের দেশের মতো চায়ের দোকানদারও পাওয়া যাবে না। যেখানে চা পাওয়া যায় সেখানে এ ধরনের ইংরেজিও বলা যাবে না।

উপরন্তু, এখানে যে কয়টি বাক্য মুখস্থ করানো হচেছ, সেগুলো কয়দিন মনে থাকে সেটিও ভাবনার বিষয়। এরকম রহু প্যারাপ্রাফ ও রচনা কিন্তু আমরা বার বছরের শিক্ষা জীবনে বহুবার মুখস্থ করেছি। সেগুলো এখন যেহেতু মনে নেই, তাহলে কিভাবে আশা করবো, এখন মুখস্ত করা ছোট ছোট বাক্যগুলো বিদেশে গিয়ে বলতেই পারবো!

সবচেয় বড় কথা, এখানে মাত্র একটি সিচুয়েশন সম্পর্কে আমরা কয়েকটি বাক্য মুখস্থ করছি। একটি দোকানে তো একটি দু’টি সিচুয়েশন না। বহু সিচুয়েশন হয়। কোন সিচুয়েশনে কোন কথা বলতে হবে সেটি তো এভাবে দুচারটে বাক্য মুখস্থ করলে হবে না। 

সহজ করার জন্য বাণিজ্যিক কারণে বাজারের স্পোকেন ইংরেজি বইয়ে ছোট ছোট বাক্য দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা উৎসাহ নিয়ে এগুলো কিনছেনও। কিন্তু, আপনি যদি ভাষা সচরাচর ব্যবহার করতে না পারেন, তা সহজেই ভুলে যাবেন এবং একটি সময় এর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। চায়ের দোকানদারের সঙ্গেও আমরা যেহেতু ইংরেজি বলার সুযোগ পাচিছ না, নিজে আর এক একা বা বন্ধুর সঙ্গে একটি অবাস্তব অবস্থায় কতক্ষণ সেই ইংরেজি বলবো? কাজেই এই মুখস্থ ডায়ালগ দিয়ে স্বত:স্ফূর্ত ইংরেজি শেখা যায় না। 

যে বিষয়টি আমরা প্র্যাকটিক্যালি ব্যবহার করতে পারব না বা করব না বা করিও না সেই ইংরেজি তো ভুলে যাবো। যেমন ধরুন, আপনি চায়ের দোকানে গেলেন। সেখানে বসার জায়াগ নেই। তখন একজন ওয়েটার বা দোকারনদার নিজে বললো, স্যার আর এক মিনিট বা দুই মিনিট ওয়েট করেন। একটি টেবিল খালি হবে, আপনি একটি মিনিট একটু কষ্ট করেন। এ ধরনের বহু সিসুয়েশন ঘটতে পারে। যা মুখস্থ করা বাক্য  দিয়ে সামলানো যাবে না। বরং ভাষাটা জানা থাকলে যে কোনো সিসুয়েশনে ইংরেজি নিজ থেকে বলা যাবে। আমরা সেটি প্র্যাকটিস না করে চায়ের দোকানদারের সঙ্গে ধরাবাঁধা কয়েকটি বাক্য শিখে কথা বলার চেষ্টা করছি। 

আসলে প্রয়োজন ইংরেজি মজার মজার গল্প বলা, গল্প শোনা, গল্পের লেসন, বই ইত্যাদি পুরো ইংরেজিতে পড়া। তাহলে মজা পাওয়ার জন্য ইংরেজি পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। নিজের অজান্তেই ভাষার দক্ষতা তৈরি হয়ে যাবে। এসব গল্প ও লেসনে বহু ধরনের বাক্যের ব্যবহার বার বার পড়তে পড়তে আত্মস্থ হয়ে যাবে। 

আমরা দেখছি, বাজারের স্পোকেন বইগুলোতে গাদা গাদা গ্রামারের নিয়ম কানুন। যেগুলো আমরা এতোবছর গ্রামার বইয়ে পড়েছি। যার বইয়ে এগুলো যতো বেশি আছে সেগুলো নাকি ততো বেশি চলছে। এটি ইংরেজি শেখার বা শেখানোর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়। শিক্ষক বা ইন্সট্রাক্টরকে অবশ্যই ইংরেজির একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। সেটি না হলে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি কিভাবে শিখবেন? বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বা কারো ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশে দেখা যায়, বাংলায় বলে বলে ইংরেজি শেখাতে। সেটি একেবারেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়। অনেকেই বলে থাকেন, তা না হলে শিক্ষার্থীরা বুঝবেন না। কিন্তু এভাবে মাতৃভাষায় ইংরেজি শেখাতে থাকলে শিক্ষার্থীরা সেটা কখনোই ভালোভাবে বুঝবেন না। শিক্ষার্থীদের অন্য ভাষায় অর্থাৎ ইংরেজি ভাষায় কথা বলাতে হলে শিক্ষককে অবশ্যই ইংরেজি বলতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটি বুঝানোর ক্লাস নয়। এটি ল্যাংগুয়েজ প্র্যাকটিস করার ক্লাস।

লেখক: লিড-এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ টিম, দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তা

 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ডিআইএর নতুন পরিচালক অধ্যাপক আবু কাইয়ুম - dainik shiksha ডিআইএর নতুন পরিচালক অধ্যাপক আবু কাইয়ুম জাতীয়করণসহ তিন দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের অবস্থান - dainik shiksha জাতীয়করণসহ তিন দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের অবস্থান এমপিওর দাবিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের পদযাত্রা - dainik shiksha এমপিওর দাবিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের পদযাত্রা কারিগরিতে ৪০ শতাংশ নম্বরে উপবৃত্তি - dainik shiksha কারিগরিতে ৪০ শতাংশ নম্বরে উপবৃত্তি কাউকে হেনস্তা না করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের - dainik shiksha কাউকে হেনস্তা না করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আটকের পর বিজিবিকে যে প্রলোভন দেখান বিচারপতি মানিক - dainik shiksha আটকের পর বিজিবিকে যে প্রলোভন দেখান বিচারপতি মানিক নয় বছরের শিক্ষিকাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হতে বললেন প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha নয় বছরের শিক্ষিকাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হতে বললেন প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003587007522583