স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা সরকারিকরণের দাবি প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের যে যা বললেন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নামে কতগুলো আছে আর বাস্তবে কতগুলোতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আছে তা অদ্যাবধি কেউ জানে না। সর্বশেষ যে তালিকা পাওয়া গেছে তা যাচাই-বাছাই ও এর ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণে কমিটি গঠিত হয়েছে।  এটাই সর্বশেষ খবর। কিন্তু এর মধ্যে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ দাবি করছেন সরকারিকরণের। আবার কোনও কোনও নেতা দাবি করছেন তাদেরকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সরকারিকরণের চিন্তার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু নাম না প্রকাশের শর্ত ভেঙ্গে নেতারা তাদের নিজ নিজ সংগঠনের শিক্ষক ও  সাংবাদিকদের কাছে সেই তথ্য প্রকাশ করে দিয়েছেন।  

সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদারেছিনের মহাসচিব মাওলানা সাব্বির আহমদ মোমতাজীর সাথে। মঙ্গলবার রাতে তিনি বলেন, কয়েকজন ইবতেদায়ি শিক্ষকের কাছে এই খবর শোনার পর তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছেন।  সরকারিকরণ তো দূরের কথা। এমপিওভুক্তির চিন্তা মাথায় রেখে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই ও করণীয় নির্ধারণ ছাড়া আর কোনও আলোচনার তথ্য পাননি তিনি। 

তিনি বলেন, কতিপয় বাটপার সহজসরল শিক্ষকদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ারর ধান্দায় এসব কথা বলে থাকে। যদি সরকারিকরণ করে তাহলে তা সবার আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জানবেন শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী।  

বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ দৈনিক শিক্ষার লাইভে যোগ দিয়ে বলেন, ‘আমি ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির উদ্যোগের খবর শুনেছি কিন্তু সরকারিকরণের কোনো সিদ্ধান্তের খবর পাইনি। আমি প্রায়ই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে কথা বলি। 

আজ মঙ্গলবার (৯জুন) স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের মহাসচিব মোহাম্মদ শামসুল আলম টেলিফোনে দৈনিক শিক্ষার কাছে দাবি করেন,  মাদরাসা শিক্ষকদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদায় সরকারিকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’ কার কাছ থেকে তিনি এমন খবর শুনেছেন, দৈনিক শিক্ষার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশি শাহাবুদ্দিন আহমেদ আমাকে বলেছেন।” 

শামসুল আলম আরো বলেন, 'মাদরাসা বিভাগের সচিব স্যারের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা সরকারিকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর শিক্ষকদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

এ শিক্ষক নেতা দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে আরও বলেন, 'করোনার এই মহা দুর্যোগের সময় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর শিক্ষকরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এ বিষয়টি সচিব স্যারকে জানাতেই তার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। এছাড়া সচিব স্যারের কাছে শিক্ষকদের অনুদান চেয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছিল। সে আবেদনও মন্ত্রণালয় বিবেচনায় নিয়েছে। শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।'

শামসুল আলমের বক্তব্যের পর দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। নাম না প্রকাশের শর্তে একজন বলেন, ‘সরকারিকরণ নিয়ে কোনও চিন্তা বা উদ্যোগ এখনও হয়নি। যো যা বলছে বা লিখছেন সব তাদের নিজেদের দায়িত্বে। দৈনিক শিক্ষাকে যিনি এমন কথা বলেছেন তিনি সচিবের চেয়ে পাওয়াফুল। 

শিক্ষামন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে এমন আলোচনা শুনছি কিন্তু মন্ত্রণালয়ে এমন কোনও সিদ্ধান্ত বা উদ্যোগের কথা আমার জানা নেই। 

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, মূলত ফেসবুকে এসব কথা বলে শিক্ষকদের মধ্যে একটা আশা তৈরি করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। সরকারিকরণের কথা শুনলে কে না খুশী হয়। আমিও খুশী হতাম যদি এমন কোনও উদ্যোগ নেয়া হতো। তবে, এখনও কোনও উদ্যোগ নেই। 

এক প্রশ্নের জবাবে মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশি শাহাবুদ্দিন আহমেদ দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘সরকারিকরণের বিষয় তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আমি তো মন্ত্রণালয়ে চাকরি করি। সরকারিকরণ হবে বা হবে না এমন কিছু আমি বলতে পারবো না।’   

জানা যায়, গত বছরের ১৭ অক্টোবর ডিসিদের কাছে সারাদেশের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার তথ্য চেয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। একই সাথে মাদরাসাগুলোর তথ্য যাচাইয়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে, সব মাদরাসার তথ্য কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে না আসায় গত ২৪ মার্চ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার তথ্য পাঠাতে ডিসিদের তাগিদ দেয় কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। করোনার মধ্যে যেসব তথ্য এসেছে তা নিয়ে কি করা যায় সে লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করেছেন মন্ত্রণালয়।  

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জুনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দেন। এই প্রস্তাবনা অনুযায়ী দেশের ৪ হাজার ৩১২টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করতে খরচ হবে ৩১১ কোটি টাকা।

এরপর থেকেই সারাদেশে নাম সর্বস্ব ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপনের হিড়িক পরে গেছে বলে বেশ কিছু অভিযোগ মাঠ পর্যায় থেকে দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে আসে। গত বছরের ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় অনেক মাদরাসা ভুয়া পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল বলেও অভিযোগ ছিল। ভুয়া পরীক্ষার্থীসহ হাতেনাতে ধরাও পড়েন অনেকে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031659603118896