ফাঁকা আসনে ভর্তির জন্য আবেদন করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখেই রিপোর্টিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তবে ভর্তির জন্য মনোনীত হননি তারা। এর জন্য প্রকাশিত ফল তৈরিতে অনিয়ম ও অসংগতিকে দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা। এমন ঘটনা ঘটেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, মেধাতালিকায় যারা সামনে থেকেও ভর্তির জন্য মনোনীত হয়নি, তারা হয়তো তাড়াহুড়া করে রিপোর্টিংয়ের সময় স্বাক্ষর করেনি অথবা প্রবেশপত্র জমা দেয়নি।
জানা গেছে, ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাঁকা আসনে ভর্তির জন্য সাক্ষাৎকারের তারিখ দেওয়া হয়। ১৭ জানুয়ারি ফাঁকা আসনে ভর্তির ফল প্রকাশিত হলে নির্ধারিত তারিখেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও মনোনীত হননি 'এ' ইউনিটে মেধা তালিকায় ১০১৬তম স্থান অর্জন করা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মরুয়া গ্রামের কাজীউল ইসলাম, 'বি' ইউনিটে মেধাতালিকায় ১১৮১তম স্থান অধিকারী জয়পুরহাটের রায়হান রাসেল, 'বি' ইউনিটে মেধাতালিকায় ১১৯৬তম স্থান অধিকারী নেত্রকোনার মাকসুদুল হাসান এবং 'সি' ইউনিটের মেধাতালিকায় ৬৬১তম স্থান অধিকারী উদয় হাসান রাজ।
প্রকাশিত ফলে অনিয়ম, অসংগতি ও ভর্তি কার্যক্রমে দায়িত্বশীলদের গাফিলতির অভিযোগ তুলে গত বুধবার সকালে প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অনশনে বসেন ভুক্তভোগী চার শিক্ষার্থী। তাঁদের দাবি, নির্ধারিত সময়ে ভর্তির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও উচ্চশিক্ষা লাভে তাঁদের বঞ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান আন্দোলনরত ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের গুচ্ছের নিয়ম মেনে ফল পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে বলেন। তবে প্রক্টরের কাছে প্রকাশিত সপ্তম মেধাতালিকা বাতিল করে পুনরায় ফল প্রকাশের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। অথবা তাঁরা যে রিপোর্টিংয়ের সময় স্বাক্ষর করেননি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেই কাগজ দেখানোর দাবি করেন। পরে তাঁরা রেজিস্ট্রার ড. হুমায়ুন কবীরের কাছে গেলে তিনি তাঁদের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো সংশয় বা অভিযোগ থাকলে গুচ্ছের নিয়ম অনুযায়ী ২ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ব্যাংক রসিদসহ আবেদন করতে বলেন। অভিযোগ সত্য হলে তাঁদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে জানালে রাসেল, হাসান ও রাজ ব্যাংকে ২ হাজার করে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করেন। তবে টাকার অভাবে আবেদন করতে পারেননি দরিদ্র কাজীউল। বুধবার রাতের বাসে বাড়ি ফিরে যান তিনি।
হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রেতা আব্দুল করিমের ছেলে কাজীউল ইসলাম। সংসারের অভাব-অনটনেও ছাড়েননি লেখাপড়া। তাঁর স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা শেষ করে ভালো চাকরি নিয়ে বাবার দুঃখ ঘোচাবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আলোর মুখ দেখার আগেই ভঙ্গ হতে যাচ্ছে। কাজীউল বলেন, গাইবান্ধা থেকে দু'দিন আসা-যাওয়ায় ৬-৭ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। ব্যাংকে জমা দেওয়ার মতো ২ হাজার টাকা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সদয় হলে ভর্তি হতে আসবেন।
ভুক্তভোগী রায়হান রাসেল বলেন, 'আমার পছন্দের তালিকায় ফোকলোর বিভাগ ছিল, মেধাতালিকায় আমার পেছনে মেধাক্রমে ১২৯২তম স্থানে থাকা শিক্ষার্থী ফোকলোর বিভাগ পেলেও আমাকে কোনো বিভাগে মনোনীত করা হয়নি। আমি ভর্তি প্রক্রিয়া স্থগিত রেখে নতুন করে ফল প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।'
'সি' ইউনিটের মেধাতালিকায় ৬৬১তম স্থানে থাকা উদয় হাসান রাজ বলেন, 'আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও আমাকে ভর্তির সুযোগ না দিয়ে মেধাতালিকায় আমার নিচে থাকা অনেককেই ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা চরম অনিয়ম।'
এ বিষয়ে জিএসটির টেকনিক্যাল সাব কমিটির নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সেলিম আল মামুনের দাবি, এত বড় ভুল হওয়ার কথা নয়। তার পরও যেহেতু নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেছেন অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি যাচাই করে দেখবে।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. হুমায়ুন কবীরের ভাষ্য, ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে যাদের সংশয় বা যারা অভিযোগ করেছে, তাদের গুচ্ছের নিয়ম অনুযায়ী ২ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ব্যাংক রসিদসহ আবেদন করতে বলা হয়েছে।