এসে দেখলাম আবেদনের স্তুপ পাহাড়সম। রাজধানীর পলাশীতে ব্যানবেইস ভবনে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অফিসে ২০১৬ তে অবসরের চেক স্বাক্ষর করেছি ২০১০-১১ খ্রিস্টাব্দের। অবসরের আবেদন করে ৫/৬ বছর অপেক্ষা করতেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ এক তীব্র যন্ত্রণা ও কষ্টকর অপেক্ষা। স্বপ্ন দেখেছিলাম এ কষ্ট দূর করবো। আমার বাবা-মা দু’জনই বেসরকারি স্কুল শিক্ষক ছিলেন। যদিও সেই সময় অবসর ভাতা বলতে কিছু ছিলো না। রক্ত-মাংস মজ্জায় মিশে যাওয়া শিক্ষকতা পেশার স্পিরিট থেকে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলাম বৈপ্লবিক কিছু করবো।
স্বপ্ন ছিলো অবসরে যাওয়ার পর একজন শিক্ষক যেন ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে তার প্রাপ্য টাকা পেতে পারেন। যেখানে ৫ থেকে ৬বছর পর অনেক কষ্ট আর হয়রানীর শিকার হয়ে টাকা পেতেন সেখানে বর্তমানে দেড় থেকে দুই বছরে তাদের পাওনা টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। সেকেলে পুরোনো পদ্ধতিতে আবেদন করতে হতো এবং চেকে টাকা উত্তোলন করতে হতো। এখন অন-লাইনে আবেদন এবং অন-লাইনে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অবসরের টাকা চলে যাচ্ছে। ঘরে বসে শিক্ষক-কর্মচারীরা টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। এই হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদার অব হিউম্যানিটি শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য। তিনি দুর্ভোগ ও কষ্ট লাঘব করতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এক হাজার ২৮২কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। তাঁর জন্যই স্তুপীকৃত আবেদনের পাহাড় ছোট হয়েছে। এখন বাকী আছে মাত্র ১৩ হাজার আবেদন। আর কিছু টাকা বরাদ্দ পেলেই সমান সমান, শেষ হয়ে যাবে অপেক্ষার প্রহর গোনা।
আমরা আমাদের স্বপ্নের বন্দরে পৌঁছে যাবো। মাত্র দেড় বছরের দূরত্ব। এটিও আশা করি কিছু দিন পর থাকবে না। আবেদন করার এক থেকে দুই মাস সময়ের মধ্যেই অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারী তার টাকা পেয়ে যাবেন। স্বপ্নের কাছাকছি চলে এসেছি। স্বপ্ন দেখান যিনি তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন শেখ হাসিনা। তিনিই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে স্বপ্নের ফেরীওয়ালা, নিকট ভবিষ্যতের উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্থপতি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশের স্থপতি।
অবসর সুবিধা বোর্ডের পূর্বাপর
* পূর্ববর্তী ৩ বছরে (২০১২ থেকে ২০১৫) প্রায় ১৭হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করে ৬৭১ কোটি প্রদান করা হয়েছে।
* বর্তমান কমিটির মেয়াদকালে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ বছরে মোট ৪১ হাজার ২০০ আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।
* অন-লাইন পদ্ধতি চালু হয়েছে, ফলে অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরে যাওয়ার পর নিজ প্রতিষ্ঠানে বা এলাকায় অবস্থান করেই অন-লাইনে আবেদন করতে পারছেন। ঢাকায় আসতে হচ্ছে না।
* বর্তমানে ঘরে বসেই শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের নিজ অ্যাকাউন্টে টাকা পাচ্ছেন। চেকের পেছনে ঘুরতে হয় না। এতে বিভিন্নমুখী হয়রানী থেকে মুক্তি পাচ্ছেন।
* ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি আমি দায়িত্ব নেয়ার সময় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা যারা ৫/৬বছর আগে আবেদন করেছিলেন তাদের অবসর ভাতার চেক স্বাক্ষর করতাম।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের দূর্ভোগ লাঘবে বিগত ৩ অর্থ বছরে অবসর বোর্ডে ১২৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এর ফলে যেখানে অবসরের আবেদন করার পর একজন শিক্ষক কিংবা কর্মচারীকে দীর্ঘ ৫/৬বছর সময় অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো এখন দেড় বছর অপেক্ষা করতে হয়।
বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার আবেদন নিষ্পত্তির বাকি আছে। আশা করা যায় নতুন সরকার এই ১৩ (তের) হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় ১হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে অবসর বোর্ডেকে এমন এক জায়গায় নিয়ে আসবে যেখানে অবসরের পর আবেদন করার ১ থেকে ২মাসের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করা যাবে।
লেখক: সদস্য সচিব, অবসর সুবিধা বোর্ড, ঢাকা।