স্বার্থান্বেষীদের সাথে আপস নয়: যবিপ্রবি উপাচার্য

যবিপ্রবি প্রতিনিধি |

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করে যাচ্ছে। তাদের মোকাবিলায় সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে রোববার (১৯ মে) যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন উপাচার্য।

দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে তাকে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তাবৃন্দ, কর্মচারী সমিতি, যবিপ্রবি ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও  শুভেচ্ছা জানানো হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে যবিপ্রবির উপাচার্য আরও বলেন, আমি যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করি, তখন এই শিক্ষার্থীদেরকে এমন অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা স্বাধীনভাবে ভাবতে পারতো না; তারা ছিল ভীত-সন্ত্রস্ত। র‌্যাগিং এবং মাদকাসক্তির মতো ভয়ানক ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিল। এসবের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শক্ত অবস্থান নেয়। তিনি অভিযোগ করেন, একটি দুষ্টু চক্র, যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল রেখে ফায়দা লুটতে চায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষানুকূল ও স্থিতিশীল পরিবেশ দেখে খুশি হতে পারেনি। এ জন্য তারা মিথ্যা মামলা দায়ের, শহরের মেসে মেসে গিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে মারধর, শিক্ষকদের প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কাজে লিপ্ত রয়েছে। তারা তাদের অনুসারী কতিপয় বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর দ্বারা অঘটন ঘটানোর মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনকে পুনরায় অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করে যাচ্ছে।
 
সকলের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমি যশোরবাসীকে অনুরোধ করব, আপনারা শুধু এ বিশ্ববিদ্যালয়কে যশোর শহরের কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখতে আমাকে সাহায্য করুন। বিনিময়ে আমরা একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দেবো, যেখানে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার যুগোপযোগী যোগ্য গ্র্যাজুয়েট তৈরি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চলমান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাধা যদি হিমালয়ের সমানও হয়, তা অতিক্রম করবো। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লড়াইয়ে অন্যায়ের সাথে আপস করবো না। 

 

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর যাত্রা মোটেই সুখকর ছিল না উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যশোরের শহরভিত্তিক রাজনীতি আমার আগমনকে স্বাগত জানায়নি। এমনকি তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য আমাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। যদি আমি সেটা করতাম, তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃশ্যত কোনো ঝামেলা থাকতো না। কিন্তু, সেক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয় থাকতো না। কারণ, অবৈধ সুবিধা নেয়ার জন্য তারা এমন লোকদের ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, যাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি তাদের অধিকাংশেরই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের যোগ্যতা নেই। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। শিক্ষার্থী ভর্তি, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে তারা হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় তারা আমার অফিসে হামলা করে। এমনকি, আমার পিএস এবং একজন কর্মচারীকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু যবিপ্রবি পরিবার, স্থানীয় প্রশাসন ও সুধী সমাজ, স্থানীয় সংসদ সদস্যগণ, দু-একজন ব্যতিত যবিপ্রবি ছাত্রলীগের মূলধারার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় আমি সেই সকল বাধা অতিক্রম করে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হতে সক্ষম হয়েছি। আজ শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে যবিপ্রবি বাংলাদেশে সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আবাসিক হলগুলোতে সিট বণ্টনের ক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। একটি নিয়োগের বিষয়ে দুর্নীতির কথা উঠেছিল, স্বচ্ছতার জন্য সেই প্রার্থীর নিয়োগও বাতিল করা হয়। তারপরেও দুর্নীতি যে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করা যায় না, এটা আপনারা জানেন। তবে আমার দৃষ্টিতে দুর্নীতি ধরা পড়লে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব, এই ওয়াদা আমি করতে পারি।

যবিপ্রবি উপাচার্য অভিভাবকদের আশ্বস্ত করে বলেন, একজন মানুষ ও পিতা হিসেবে আমার যতটুকু করার, ততটুকু করবো। সকল পিতা ও মাতাদের প্রতি আমি বলবো, আপনাদের কাছে আপনার সন্তান যতটুকু নিরাপদ থাকবে, আমার কাছেও ততটুকু নিরাপদ থাকবে। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল মজিদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক ড. মো. নাজমুল হাসান, যবিপ্রবির ডিন অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান, অধ্যাপক ড. শেখ মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. জিয়াউল আমিন, অধ্যাপক ড. মৃত্যঞ্জয় বিশ্বাস, ড. মো. ওমর ফারুক, ড. মো. জাফিরুল ইসলাম, ড. কিশোর মজুমদার, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব, প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারি, সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. হায়াতুজ্জামান প্রমুখ। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027549266815186