স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস পালন ছাত্র ফ্রন্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, অবিলম্বে শৈশব ধ্বংসকারী পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস পালন করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিবসটি উপলক্ষে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশ করে সংগঠনটি। এর আগে শাহবাগ থেকে একটি মিছিল বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের নিচে এসে শেষ হয়।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সমাবেশে উপস্থিত ছাত্র-জনতা

কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার ও দপ্তর সম্পাদক সালমান সিদ্দিকী।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কোনো শিক্ষার্থী বন্ধুকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি কী দিবস? চটজলদি উত্তরে সে বলবে ‘কেন, ভালোবাসা দিবস।’ যদি আবারো বলা হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের দেশের শিক্ষা বা রাজনৈতিক আন্দোলনে কেন তাৎপর্যপূর্ণ?’ বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হয়তো ইতস্তত ভঙ্গিতে বলবে জানি না তো’। 

বক্তারা বলেন, এই ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের  ছাত্র-গণআন্দোলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক একটি দিন। জাফর-জয়নাল-দীপালী সাহার জীবনের দামে বাতিল হয়েছিল স্বৈরাচারী এরশাদের কুখ্যাত মজিদ খান শিক্ষানীতি। এই আন্দোলনের ইস্পাতদৃঢ় পদভার ফাটল ধরিয়েছিল এরশাদ শাহীর দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরসিংহাসনের। 

ইতিহাসের সংগ্রামী শিক্ষা মানুষকে বর্তমানের অচলায়তন ভাঙ্গার শক্তি জোগায় বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। তবে সত্য এটাও যে, ইতিহাসের সংগ্রামী চেতনা কখনও হারায় না।

বক্তারা বলেন, এদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বৃহৎ গণআন্দোলন সংগঠিত হয় ৯০-এর দশকে। যার সূচনা ঘটে ছাত্রআন্দোলনের হাত ধরে। দেশ স্বাধীনের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয় ক্ষমতা দখলের অন্তর্ঘাত। এর সুযোগ নেয় সামরিক জেনারেলরা। শুরু হয় ক্যু, পাল্টা ক্যু। এরশাদ ক্ষমতা নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা দেন বাংলাদেশ অবিলম্বে সামরিক আইনের আওতায় আসবে। এই ঘোষণার সাথে সাথে নিষিদ্ধ হলো দেশের সংবিধান। নিষিদ্ধ হলো প্রকাশ্য রাজনীতি। 

বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে ইতিহাস। তারা বলেন, প্রথম দিনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় বিক্ষোভ মিছিল। পোস্টার লাগাতে গিয়ে গ্রেফতার হন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর নেতা শিবলী কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান, আব্দুল আলী। সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। ২৬ মার্চ সাভারে স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে গিয়েই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয় শ্লোগান। খবর শুনে সাভার ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনীর গাড়িবহর হাজির হয়। চালায় অকথ্য নির্যাতন। প্রতিবাদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে দেয়ালে লাল-কালো অক্ষরে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে উৎকীর্ণ হয়— ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। 

পুলিশ যতই দেয়াললিখন মুছে ফেলে, ছাত্ররা ততই গভীর রাতে চিকামারা ছদ্মনামে সংগঠিত হয়ে দেয়াললিখন চালিয়ে যেতে থাকে। সেপ্টেম্বরে এরশাদ কুখ্যাত মজিদ খান শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলে, ছাত্রসংগঠনগুলো প্রত্যাখ্যান করে দেয়। মহান শিক্ষা দিবসকে (১৭ সেপ্টেম্বর) সামনে রেখে ছাত্রসংগঠনগুলো মজিদ খান শিক্ষানীতি বাতিলের পক্ষে একমত হয়। 

ছাত্রসমাজ এই শিক্ষানীতিকে পরাধীন দেশের স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের শরীফ শিক্ষা কমিশনের (১৯৬২) নব্য-সংস্করণ হিসেবে আখ্যা দেন। ২১ নভেম্বর গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সারা দেশে শুরু হয় গণস্বাক্ষর সংগ্রহ। শুরু হয় সংগঠিত আন্দোলন। পুলিশ গ্রেফতার করে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি খন্দকার মোহাম্মদ ফারুকসহ আরও অনেককে। গ্রেফতার-ধরপাকড়-হামলার প্রতিবাদে তিরাশির ২৭-২৮ জানুয়ারি পালন করা হয় সর্বাত্মক ছাত্রধর্মঘট। 

দাবি মেনে না নিলে ধর্মঘটের পর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়। পুলিশের নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারান জাফর-জয়নাল, শিশু দীপালী সাহা। শুরু নির্বিচার গ্রেফতার। এর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর বন্ধ করে দেয়া হয় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে একদিনের মাথায় ১৭ ফেব্রুয়ারি এরশাদ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়-‘জনগণের রায় ছাড়া শিক্ষা সম্পর্কে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না’। এরপর সেই ছাত্রআন্দোলন রূপ নেয় গণআন্দোলনে। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারিতেই মূলত স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের সূত্রপাত। যার পরিণতিতে স্বৈরাচারের পতন ঘটে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031318664550781