স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা

নিরঞ্জন রায় |

একটি কথা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে তাতে আগামী স্মার্ট বাংলাদেশ হবে এমন একটি রাষ্ট্র ব্যাবস্থা যেখানে সবকিছু হবে প্রযুক্তিনির্ভর। ফলে দেশের প্রতিটি নাগরিককে এমনভাবে শিক্ষিত হতে হবে যাতে তারা এই প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ ব্যবস্থা সঠিকভাবে চালিয়ে নিতে পারে। শুধু তাই নয়, এই প্রযুক্তিনির্ভর রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে সেবা নিতে বা জীবনযাপনের সবকিছু গ্রহণ করতে হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। তাই নাগরিকরা যদি সেভাবে শিক্ষিত না হন তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ বেশি দূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না এবং জনগণও স্মার্ট বাংলাদেশের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। তা ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য যে চারটি মূল স্তম্ভ নির্ধারণ করা হয়েছে তার অন্যতম একটি হচ্ছে স্মার্ট নাগরিক। একজন স্মার্ট নাগরিকই পারবে রাষ্ট্রের স্মার্ট সেবা গ্রহণ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে। আমেরিকা, কানাডাসহ উন্নত বিশ্ব যে স্মার্ট রাষ্ট্র ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে পেরেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে তারা স্মার্ট রাষ্ট্র গড়ার শুরুতেই তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে একে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থায় রূপান্তর করতে সফল হয়েছে। তাই আমাদেরও সেই পথে হাঁটতে হবে।

স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন স্তর: আশার কথা এই যে সরকার দেশে শিক্ষা খাতে পরিবর্তন আনার কাজে হাত দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই উদ্যোগ একটি আংশিক পদক্ষেপ হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে। এখানে কতোটা প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ার পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে সেটি বিচার বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আমি যেহেতু শিক্ষাবিদ নই, তাই আমার এ বিষয়ে মন্তব্য করার সুযোগ নেই এবং তা সমীচীনও হবে না। একজন প্রযুক্তি-বান্ধব মানুষ হিসেবে আমি এতোটুকু বুঝি যে স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলতে প্রয়োজন হবে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা। অর্থাৎ শিক্ষাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্জন করতে হবে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমেই তা প্রয়োগ করতে হবে। এ কারণেই শিক্ষার পাঠ্যসূচি, পাঠদান পদ্ধতি এবং পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা সেভাবেই সাজাতে হবে। আর এটি করতে হবে দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে সামনে রেখে। এক কথায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার সকল পর্যায়ে এই পরিবর্তন আনতে হবে। এজন্য বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে; ১. সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে চারটি প্রধান স্তরে ভাগ করতে হবে। এখনো আছে, তবে তাকে নতুনভাবে বিন্যাস করতে হবে। ২. চারটি নতুন স্তর হবে ক. উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা খ. কারিগরি শিক্ষা গ. গ্রাজুয়েশন বা ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষা এবং ঘ. গবেষণা পর্যায়ের শিক্ষা। ৩. প্রত্যেক পর্যায়ের শিক্ষা পাঠ্যসূচিতে প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। ৪. উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে এর পরিধির ব্যাপকতা বাড়াতে হবে। ৫. কারিগরি এবং গবেষণা পর্যায়ের শিক্ষাকে অনুদান/বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে উপযুক্ত এবং উৎসাহিত করতে হবে। ৬. দেশের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার পরিধি যেমন একদিকে বৃদ্ধি করতে হবে, অন্যদিকে তেমনি গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষা কমিয়ে এনে যথেষ্ট সীমিত করে ফেলতে হবে। পাশাপাশি গবেষণা পর্যায়ের শিক্ষা সীমিত করলেও বর্তমান অবস্থা থেকে অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। সেইসঙ্গে দেশে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে হবে।  

এ কথা অস্বীকার করার উপয় নেই যে স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে। কেনোনা প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় তখন কাজের ধরন এমন হবে যেখানে আগের দিনের মতো ফাইল স্টাডি করা এবং কঠিন ভাষার প্রয়োগ করে নোট বা চিটি লেখার প্রয়োজন হবে না। তখন সবকিছুই সিস্টেমে নির্ধারণ বা ফরম্যাট করা থাকবে। দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ কাজ এভাবেই সম্পন্ন হবে। একজন মানুষ শুধুমাত্র বোঝার মতো ন্যূনতম জ্ঞান নিয়ে কাজটি সেরে ফেলতে পারবেন। তাবে প্রযুক্তি ব্যবহারের কাজ এবং প্রযুক্তির মধ্যে থেকে কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার সক্ষমতা থাকতে হবে।

আর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা অর্জন করলেই সেই সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব। যেহেতু স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠলে দেশের সকল প্রকার কাজের প্রায় নব্বই শতাংশ এভাবেই সম্পন্ন হবে, তাই দেশের শতভাগ মানুষকে এমন ভাবে শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা এভাবে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। এই উদ্দেশ্য তখনই সফল হবে যখন দেশের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক করে গড়ে তুলে একে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হবে। সুতরাং দেশের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিবর্তন ও আধুনিক করে সেভাবেই সাজাতে হবে এবং সেই সঙ্গে দেশের প্রত্যেক নাগরিক যেনো এই পর্যায়ের শিক্ষা লাভ করতে পারেন সেই ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক করার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে এখানকার পাঠ্যসূচিতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসা। এখন আর এই পর্যায়ের শিক্ষায় বিজ্ঞান, গণিত, বাণিজ্য বা অর্থনীতির মত কঠিন বিষয় পাঠদানের কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে, সাধারণ মানের গণিত, আমাদের ভাষা, ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, আমাদের সমাজের মূল্যবোধ, এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিষয়গুলোর পাঠ্যসূচি খুবই সহজভাবে প্রণয়ন করতে হবে। সেইসঙ্গে একজন মানুষের সাধারণ জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত। যেমন- ব্যাংক হিসাব পরিচালনা, বাজার ব্যাবস্থা, কৃষি ও শিল্প এবং বিজ্ঞানের সাধারণ বিষয়গুলোর ওপর একটি সাধারণ পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করতে হবে। এর সবকিছুই হতে হবে খুবই সাধারণ, মানের যাতে করে খুব সহজে পড়া এবং বোঝা যায়। এর পাশাপাশি জোড় দিতে হবে প্রযুক্তির ওপর। প্রযুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন কিছু পাঠ্যসূচি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে করে এই পাঠ্যসূচি সফলভাবে শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে উঠতে পারেন এবং প্রযুক্তির মধ্যে থেকে কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। এসংক্রান্ত একাধিক পাঠ্যসূচি বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রেণির জন্য প্রণয়ন করতে হবে এবং অধিকাংশ পাঠ্যসূচিতে হাতেকলমে পাঠদানের ব্যাবস্থা থাকতে হবে।

প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইমেইলের গুরুত্ব, ব্যবহার এবং জনপ্রিয়তা সবার ঊর্ধ্বে। অথচ ইমেইল ব্যবহারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের অজানা। অবশ্য এ কথা অনস্বীকার্য যে আমরা সবাই ইমেইল সম্পর্কে জানি এবং পরিচিত। কিন্তু যা জানি না তা হচ্ছে ইমেইল ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা এবং সঠিকভাবে ব্যবহারের উপায়। শুধু তাই নয়, ইমেইল ব্যবহারের ঝুঁকির বিষয়টি আমাদের অধিকাংশের বিবেচনার মধ্যেই নেই। ইমেইল ব্যবহারে সতর্ক না হলে যে কী ভয়ঙ্কর বিপদ ঘটতে পারে তা অনেকেরই জানা নেই। তা ছাড়া প্রযুক্তির বিভিন্ন পদ্ধতি বা অ্যাপলিকেশন সঠিকভাবে ব্যবহারের সক্ষমতাও অনেকের নেই। এসব বিষয়ে হাতেকলমে শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে দেশের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে। এমনকি অন্যান্য যে সাধারণ বিষয়ে পাঠ্যসূচি থাকবে সেখানেও শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির মাধ্যমেই শিখতে হবে। ধরা যাক আমাদের সমাজের মূল্যবোধের বিষয়ে শিক্ষাদানের কথা। এখানেও একজন শিক্ষার্থী প্রযুক্তির মাধ্যম ব্যবহার করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করবে এবং এই প্রযুক্তির মাধ্যমেই সেটি প্রয়োগ করতে শিখবে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করা যেতে পারে। ধরা যাক আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত কথা চালু আছে তা হচ্ছে ‘দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য’। এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জানতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম এবং ভার্চ্যুয়াল লাইব্রেরি ব্যবহার করে সেখান থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা এবং মতামত সংগ্রহ করে পড়বে এবং এ বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে চেষ্টা করবে। এভাবে পড়ে যতোটুকু জানতে সক্ষম তা তুলে ধরে অনলাইন বা ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতেই শিক্ষকের কাছে সাবমিট করবে। শিক্ষকও বিষয়টি অনলাইনে দেখে তার মতামতসহ শিক্ষার্থীর কাছে ভার্চ্যুয়ালি ফিরিয়ে দেবে। এভাবে প্রতিটা বিষয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে পাঠদান করা হবে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষালাভের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষ প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতিতে কাজ করতে এবং প্রযুক্তির মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারদর্শী হয়ে উঠবে, যা মূলত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজটি যথেষ্ট সহজ এবং সফল করে দেবে।

পরিবর্তিত এই নতুন ধরনের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের দেশের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো দেশব্যাপী বা বোর্ডব্যাপী কোনো জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা পদ্ধতি থাকবে না। তবে একবার অষ্টম শ্রেণির পাঠদান এবং আরেকবার দ্বাদশ শ্রেণির পাঠদান শেষে দেশব্যাপী সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ তিনটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা নিতে হবে। এই বিষয়গুলো হচ্ছে ১. ভাষা জ্ঞান ২. সাধারণ মানের গণিতসহ ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের ওপর কিছু সাধারণ বিষয় এবং ৩. প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়। এই তিনটি বিষয়ে পাস করা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা লাভের সনদ পাওয়ার পূর্ব শর্ত হিসেবে রাখতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষালাভের পদ্ধতিতে কোনোরকম বিশেষ গ্রেড বা স্কোর প্রদানের কোনো সুযোগ থাকবে না। যেমন, এ, এ+ বা গোল্ডেন এ, ইত্যাদি ধরনের স্কোর প্রদানের কোনোরকম সুযোগ থাকবে না। শুধুমাত্র পাস বা ফেলের ব্যবস্থা থাকবে যা নির্ধারিত হবে ওপরে উল্লিখিত তিনটি বিষয়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় নির্দিষ্ট একটি নম্বর প্রাপ্তির ওপর। এক কথায় একজন শিক্ষার্থী তখনই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন বলে স্বীকৃতি পাবেন এবং এ বিষয়ে একটি সনদ গ্রহণ করবেন যখন এই তিনটি পরীক্ষায় তিনি পাস করবেন।

অন্যান্য যেসকল পাঠ্যসূচি থাকবে সেখানে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবেন সেই শিক্ষক যিনি সংশ্লিষ্ট বিষয় পড়াবেন। সারাবছর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম, অংশগ্রহণ এবং বিষয়-ভিত্তিক অর্জিত জ্ঞানের পরীক্ষা, যা শিক্ষক প্রতি সপ্তাহে এবং প্রতি মাসে গ্রহণ করবেন, সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবেন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন পত্রে তার মূল্যায়ন নিয়মিত উল্লেখ করবেন। এই কাজটিও তখন সম্পন্ন হবে অনলাইন পদ্ধতিতে। ফলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক তাদের শিক্ষালাভের অগ্রগতি নিয়মিত দেখতে পারবেন। কোনো শিক্ষার্থী তার প্রত্যাশিত মূল্যায়ন না পেলে শুরুতেই সেই শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে তার পরামর্শ নিয়ে সেই শিক্ষার্থী অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারবে। এভাবে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়টি অনেকটাই শিক্ষকের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, সততা, নিরপেক্ষতা এবং তার পেশার প্রতি অঙ্গীকার বা কমিটমেণ্টের ওপর নির্ভর করে। এখানে কিছু সমস্যা যে নেই তা নয়। কেনোনা আমাদের দেশে সামাজিক অবক্ষয় ঘটেছে অনেকটাই। আর আমাদের শিক্ষকরাও যেহেতু এই সমাজেরই অংশ তাই কিছু শিক্ষকের সততা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্ন ওঠে যা এই ধরণের শিক্ষাব্যাবস্থা বাস্তবায়নের পথে প্রধান অন্তরায়।

কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং শিক্ষকদের দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসার মাধ্যমে এই সমস্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাটিয়ে উঠা সম্ভব। যেমন-এই পদ্ধতিতে মুল্যানের বিষয়টি প্রতি সপ্তাহে এবং প্রতি মাসে সম্পন্ন হবে। শিক্ষকের মূল্যায়নের ফলাফল শিক্ষার্থীর অনলাইন মূল্যায়ন পত্রে উল্লেখ করা হবে, যার দিকে শিক্ষার্থী নিজে এবং তার অভিভাবক খেয়াল রাখবে। পরপর দুই সপ্তাহে এবং দুই মাসে কোনো শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন খারাপ বা প্রত্যাশিত না হলে, সেই শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবক সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সঙ্গে এবং প্রয়োজনে প্রধান শিক্ষক বা অন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বা ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করবেন। আর এই পদ্ধতিতে পাঠদান এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ফলাফলের জন্য শিক্ষকদের প্রায় ষাট ভাগ দায়ী করার বিধান থাকতে হবে। অধিকন্তু এক ধরনের তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই বা নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হবে যার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে যে, কোনো শিক্ষক দায়িত্বে অবহেলা বা কারো প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে কি না। এভাবে সকলে মিলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে পদ্ধতিটা সঠিকভাবে কাজ করতে বাধ্য। প্রথমদিকে কিছুটা সমস্যা হলেও সময়ের আবর্তে যখন এই পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে অভ্যস্থ হয়ে যাবে এবং এই নতুন পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে তখন আর কোনো সমস্যা হবে না।

একইভাবে অন্যান্য পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থায়। যেমন–কারিগরি শিক্ষা, গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষা এবং গবেষণা পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। এসব বিষয় সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন যা এই সীমিত পরিসরে সম্ভব নয়। মূল কথা দেশে সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট শিক্ষাব্যাবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। আর স্মার্ট শিক্ষাব্যাবস্থা নিশ্চিত করার স্বার্থে বর্তমানে দেশে যে গতানুগতিক ধারার শিক্ষাব্যবস্থা আছে সেখানে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। তবে এটি রাতারাতি করতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। স্মার্ট বাংলদেশ কর্মসূচি যেভাবে এবং যে গতিতে এগিয়ে যাবে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং তার চেয়ে কিছুটা অধিক গতিতে স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজটি করতে পারলেই চলবে। আর এই কাজ শুরু করার আগে গণসচেতনতা সৃষ্টির কাজে হাত দিতে হবে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে। এব্যাপারে বেশ কিছু টিম গঠন করে তাদেরকে পাঠাতে হবে প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে গিয়ে তারা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদেরকে এই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা এবং সুবিধার বিষয়টি ভাল করে বোঝাবেন এবং তাদেরকে সম্মত করাবেন। শুধু তাই নয়, এই নতুন পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তাদের সকলের সহযোগিতার নিশ্চয়তাও লাভ করবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়ন করা এবং এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করা মোটেই সহজ কাজ নয়, বরং বেশ জটিল এবং কষ্টকর পদক্ষেপ, যার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, কমিটমেন্ট এবং সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। তাই সবদিক বিবেচনা করে সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামতে হবে।

লেখক: সার্টিফাইড অ্যান্টি-মানিলন্ডারিং স্পেশালিস্ট

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030059814453125