স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রতি সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন আজ রোববার (২২ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত তাঁর মরদেহ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। দুপুর সাড়ে বারোটায় আর্মি স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হবে নামাজে জানাজা।  আর জানাজার পর ঢাকার বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। এদিকে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে না। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিপিআরসি কার্যালয়ে তিনি একথা বলেন।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কোনো ধরনের অনিশ্চয়তার নয়, বরং স্যার ফজলে হাসান আবেদের দর্শন দিয়ে এগিয়ে যাবে ব্র্যাক। তার দর্শন ছিল পৃথিবীতে ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষগুলোর জন্য কাজ করা। এই দর্শনকে আশ্রয় করে ব্র্যাককে এগিয়ে নিতে বলেছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। আমরা সেভাবেই ব্র্যাককে এগিয়ে নিয়ে যাব।

তিনি বলেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ জানতেন, তিনি চলে যাওয়ার পর ব্র্যাকের কী হবে সেই প্রশ্ন উঠবে। সে কারণেই তিনি এসব প্রশ্নের সুষ্ঠু সমাধান আর সুরাহা নিজেই দিয়ে গেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত আগস্ট মাসের বোর্ড মিটিংয়ে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন পদ পরিবর্তন করা হয়েছে। পরবর্তীতে স্যার ফজলে হাসানের উদ্যোগেই আরেকটা নতুন স্তর তৈরি হলো। সেটা হলো ব্র্যাক গ্লোবাল বোর্ড। এটা হলো ব্র্যাকের বৈশ্বিক আকাঙ্ক্ষা।

হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, ফজলে হাসান আবেদ যখন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলেন, চিকিৎসকরা যখন তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন, তখন তিনি নিজের কথা ভাবেননি, ভেবেছেন ব্র্যাকের সমস্যার কীভাবে সমাধান করা যায়। তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সক্ষমতা ও সজ্ঞানেই ব্র্যাকে পরিবর্তনের বিষয়গুলো করে গেছেন। একইসঙ্গে যাদের দায়িত্ব দিলেন তাদের কী করা উচিত, সে চ্যালেঞ্জও দিয়ে গেছেন। এমন না যে উনি কোনো ফর্মুলা দিয়ে গেছেন। কিন্তু সব মিলিয়ে ব্র্যাকের পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করে গেছেন। তার নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক যেন কোনো অনিশ্চয়তার মধ্যে একেবারেই না পড়ে, সেই ব্যবস্থা করে গেছেন।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে, এক ছেলে এবং তিন নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। চলতি বছর স্যার আবেদ ব্র্যাকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। তাঁকে প্রতিষ্ঠানটির ইমেরিটাস চেয়ার নির্বাচিত করা হয়। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করার পর তা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে।

ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন ভূস্বামী। তার মায়ের নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন ওই অঞ্চলের জমিদার। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় হবিগঞ্জে। হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরবর্তীতে দেশভাগের ঠিক আগে তার বাবা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে হবিগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি বানিয়াচংয়ে চলে আসেন। পরবর্তীতে তিনি চাচার চাকরিস্থলে ভর্তি হন কুমিল্লা জেলা স্কুলে। সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই লেখাপড়া করেন। এরপর চাচা জেলা জজ হিসেবে পাবনায় বদলি হওয়ায় তিনিও চাচার সঙ্গে পাবনায় চলে যান । তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। সেটা বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি তাঁর প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি শেল অয়েল কোম্পানিতে অর্থনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে হাসান আবেদ ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়, তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। একাত্তর খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ফজলে হাসান আবেদ সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এ সময় তিনি তাঁর লন্ডনের ফ্ল্যাট বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে ত্রাণকাজ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল শাল্লা এলাকায় কাজ শুরু করেন। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায়ই তিনি ব্র্যাক গড়ে তোলেন। গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে তাঁর দীর্ঘ অভিযাত্রার সূচনা ঘটে। দরিদ্র মানুষ যাতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্তা হয়ে উঠতে পারে, সেই লক্ষ্যে তিনি তাঁর কর্মসূচি পরিচালনা করেন। চার দশকের মধ্যে তিনি তাঁর অভূতপূর্ব নেতৃত্বের মাধ্যমে কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটান। ব্র্যাক পরিণত হয় বিশ্বের সর্ববৃহত্ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়। বর্তমানে বিশ্বের ১২টি দেশে ব্র্যাকের লক্ষাধিক কর্মী প্রায় তেরো কোটি মানুষের জীবনে উন্নয়নে নিরলস কাজ কাজ করে যাচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032789707183838