হতাশ জেনারেল শিক্ষকরা

রুম্মান তূর্য |

দীর্ঘদিন ধরে আলিয়া মাদারাসাগুলোর অধ্যক্ষ-সুপারের মতো প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগ পাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন সাধারণ বিষয়গুলোতে পাঠদান করানো জেনারেল শিক্ষকরা। কিন্তু বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব পদে তাদের নিয়োগের সুযোগ হয়নি তাদের। আগে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা থাকলে জেনারেল শিক্ষকদের দাখিল ও আলিম মাদরাসার প্রশাসনিক পদে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ দেয়া হলেও ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে জারি হওয়া অভিন্ন এমপিও নির্দেশিকার সংশোধনীতে তা বন্ধ করা হয়। আর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জারি হওয়া মাদরাসার আলাদা এমপিও নীতিমালায় সে সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে।

কিছুদিন আগে এমপিও নীতিমালা সংশোধনের কর্মশালায় জেনারেল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগে প্রস্তাব তোলা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে পাঠানো প্রস্তাবে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কোনো কোনো কর্মকর্তা বিষয়টির সঙ্গে একমত হলেও কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করেন। কোনো কোনো শিক্ষক নেতা এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে জারি হওয়ার অপেক্ষায় থাকা মাদরাসার নতুন এমপিও নীতিমালাটি স্কুল-কলেজের সঙ্গে সামঞ্জস্য হওয়ার কথা থাকলেও তা পুরোপুরি হচ্ছে না। যা হতাশ করেছে জেনারেল শিক্ষকদের। এদিকে জেনারেল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগের সুযোগ না থাকায় এসব পদের জন্য যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কোনো কোনো কর্মকর্তা।

দেশের মাদরাসাগুলোতে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের মতো সাধারণ ধারার বিষয়গুলোতে পাঠদান করানো সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষকদের সাধারণভাবে জেনারেল শিক্ষক বলা হয়। আর কুরআন মাজিদ ও তাজভীদ, আরবি, আকাইদ ও ফিকহ, হাদিস শরীফের মতো বিষয়গুলো পড়ানো সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষকদের বলা হয় অ্যারাবিক শিক্ষক। অ্যারাবিক শিক্ষকরাই ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল মাদরাসাগুলোর অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার, সহকারী সুপার পদে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে শিক্ষা প্রশাসন বলছে, বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় জেনারেল শিক্ষকদের মাদরাসার প্রশাসনিক পদে নিয়োগের সুযোগ নেই।  

জেনারেল শিক্ষকরা বলছেন, স্কুল-কলেজের সঙ্গে মাদরাসার এমপিও নীতিমালায় সামঞ্জস্য আনার যে আশ্বাস শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিয়েছিলো তা তাদের অনেকের মনে আশার সঞ্চার করেছিলো। বহু জেনারেল শিক্ষক আশায় আছেন প্রশাসনিক পদে নিয়োগ পাওয়ার। 

তবে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানায়, কিছুদিন আগে মাদরাসার এমপিও নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে পাঠানো হলেও তাতে জেনারেল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ইবতেদায়ি প্রধান পদটি প্রশাসনিক পদ হলেও এতে ইবতেদায়ি ক্বারী ও ইবতেদায়ি মৌলভীদের পাশাপাশি ইবতেদায়ি শিক্ষকদের (জেনারেল পদ) সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল মাদরাসার প্রশাসনিক পদে জেনারেল শিক্ষকদের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। 

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাবনা তৈরির কর্মশালায় অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রশাসনিক পদে জেনারেল শিক্ষকদের নিয়োগের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব তুলেছিলেন। আবার অধিদপ্তরের কোনো কোনো কর্মকর্তা এর সঙ্গে দ্বিমত করেছেন। তারা বলছেন, মাদরাসা বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই জেনারেল শিক্ষকরা প্রশাসনিক পদে আসাটা সমিচীন হবে না। অপরদিকে সভায় অংশ নেয়া শিক্ষক নেতাদের কেউ কেউ এ প্রস্তাব শুনে হাসাহাসি করেছেন। 

প্রশাসনিক পদে জেনারেল শিক্ষকদের নিয়োগের প্রস্তাবের পক্ষ অবস্থান নেয়া অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, জেনারেল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের সুযোগ না দেয়ার পর্যাপ্ত প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার পদে সহকারী মৌলভীরা ও ইবতেদায়ি প্রধানরা নিয়োগের সুযোগ পান। তারাই দাখিল মাদরাসার সুপার, আলিম মাদরাসার উপাধ্যক্ষ, অধ্যক্ষ, ফাযিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ, অধ্যক্ষ ও কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার অবারিত সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে কামিল ও ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে পর্যাপ্ত প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। 

তিনি আরো বলেন, দাখিল মাদরাসার সুপার পদে নিয়োগ পেতে সহকারী সুপার পদের তিন বছরের অভিজ্ঞতা লাগে, তাই এ সুযোগ পাচ্ছেন সহকারী মৌলভীরা ও ইবতেদায়ি প্রধানরা। আবার আলিম মাদরাসার উপাধ্যক্ষ হতে সহকারী অধ্যাপক পদে বা সুপার-সহকারী সুপার পদের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়। কিন্তু সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরুই হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ফলে আলিম মাদরাসার উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে সেই সহকারী মৌলভী থেকে সহকারী সুপার ও সুপার হওয়া শিক্ষকরা। ফলে ফাযিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ পদের প্রার্থী হয়ে আসছেন সহকারী মৌলভী থেকে আলিমের উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ হওয়া প্রার্থীরাই। ফলে দেখা ফাযিল ও কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ পদেও সেই সহকারী মৌলভীরাই নিয়োগের সুযোগ পান, যেহেতু সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া এ বছরই শুরু হলো। যারা প্রশাসনিক পদে জেনারেল শিক্ষকদের নিয়োগ চান না তারা মাদরাসাগুলোর আসল খবর জানেন না। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসার এমপিও কমিটির সদস্য সচিব ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. লুৎফর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হওয়ার মাদরাসার প্রশাসনিক পদে নিয়োগ পেতে জেনারেল শিক্ষকদের সুযোগ দেয়া হয়নি। কর্মশালায় অনেক কিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছে। সবাই আলোচনা করে যেসব বিষয়ে একমত হয়েছেন সেসব দিকে নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাব কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। 

জানতে চাইলে মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি জহির উদ্দিন হাওলাদার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, প্রশাসনিক পদে জেনারেল শিক্ষকদের নিয়োগের সুযোগ না পাওয়াটা হতাশার। প্রশাসনিক পদে নিয়োগের জন্য প্রশাসনিক দক্ষতা দেখা উচিত, তিনি কোন বিষয়ের শিক্ষক তা নন। এমপিও নীতিমালার সংশোধনীর প্রস্তাবে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার বিষয়টি হাতাশাব্যঞ্জক। ব্রিটিশ আমলে দেশের মাদরাসাগুলো চালিয়েছেন ইংরেজরা। তাই আমরা চাই মাদরাসাগুলো প্রশাসনিক পদে জেনারেল শিক্ষকদের নিয়োগের সুযোগ দেয়া হোক।  

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030839443206787