হত্যা নয়, নায়ক সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন : পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রজগতের একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। তাকে হত্যা করা হয়নি। এ তথ্য উঠে এসেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে।  সোমবার (২৪ ফেব্রৃয়ারি) ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পিবিআই প্রধান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার।

দীর্ঘ ২৪ বছর পর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত জানিয়ে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে পিবিআই তদন্ত শুরু করে। মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জবানবন্দি গ্রহণ করতে বেশি সময় লেগেছে। ১৬৪ ধারায় ১০ জনের জবানবন্দি নিয়েছে পিবিআই। এ ছাড়া রয়েছে আরও কয়েকজনের সাক্ষ্য। নতুন করে আলামত হিসেবে একটি ফ্যান জব্দ করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, ওই ফ্যানেই আত্মহত্যা করেছিলেন সালমান।’

তদন্তের বিষয়ে বনজ মজুমদার বলেন, ত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শাবনুরের সঙ্গে এই অন্তরঙ্গ সম্পর্কের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ ছিল সালমান শাহর। এছাড়া মায়ের প্রতি তার অসীম ভালোবাসা এবং জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পুঞ্জিভূত আবেগ অভিমানে রূপ নিয়েছিলে সালমানের। সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতাও ছিল তার।

পিবিআই আরও বলছে, সালমান শাহ ছিলেন অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। যে কারণে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন তিনি। এসবকিছু মিলিয়েই শেষ পর্যন্ত সালমান শাহ আত্মহত্যাকে নিজের জীবন শেষ করার পথ হিসেবে বেছে নেন।

এদিকে, সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা ও সহঅভিনেতা শাবনুরের সঙ্গে কথোপকথনে বিপরীতধর্মী বক্তব্য পেয়েছে পিবিআই।

সামিরার বরাত দিয়ে পিবিআই প্রধান বলেন, শাবনূরকে বিয়ে করে সালমান শাহ দুই স্ত্রী নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সামিরা রাজি ছিলেন না। এখান থেকেই পারিবারিক দম্পত্যের কলহ শুরু হয়। তা ছাড়া আগে থেকেই সামিরার শ্বাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদের ফলে সালমান শাহ ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে দুই বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সেসময় সালমান শাহ একবার ৯০টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিলেন এবং একবার স্যাভলন খেয়েছিলেন।

তবে সালমান শাহর সঙ্গে অতিরিক্ত অন্তরঙ্গ সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শাবনুর। এই চিত্রনায়িকার বরাত দিয়ে পিবিআই প্রধান বলেন, একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে সহযোগী শিল্পীর সঙ্গে যেমন সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন, সালমান শাহর সঙ্গে তার তেমন সম্পর্কই ছিল। এর বাইরে কোনো সম্পর্ক ছিল না।

বনজ কুমার বলেন, ১০ সাক্ষীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পর্যালোচনা করে এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকসহ সবার মতামত বিশ্লেষণ করে প্রমাণ পাওয়া যায়, সালমান শাহ খুন হননি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

বনজ কুমার জানান, পিবিআই তাদের তদন্তের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনা করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— প্রথম ও দ্বিতীয় সুরতহাল প্রতিবেদন, প্রথম ও দ্বিতীয় ভিসেরা প্রতিবেদন, কেমিক্যাল প্রতিবেদন, প্রথম ও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের মতামত, হস্তলিপি বিশারদের মতামত, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভবনে প্রবেশ ও বের হওয়া সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের মতামত।

এছাড়া রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ ও জরিনা বেগমের অডিও রেকর্ড, সাক্ষীদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি, ঘটনা সংশ্লিষ্ট সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রেকর্ড করা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা, আগের তদন্ত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন দালিলিক সাক্ষ্য, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য, কাগজপত্র ও অন্যান্য সাক্ষ্য পর্যালোচনার বিষয়গুলোও পিবিআইয়ের তদন্তে বিবেচনা করা হয়েছে।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। ওই সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। 

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন।

২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হয়। প্রায় ১২ বছর পর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩ আগস্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তাতেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবার রিভিশন আবেদন করেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস তা মঞ্জুর করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

কয়েক দফা তদন্তে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তা অদ্যাবধি মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার ও ভক্তরা। তাদের সন্দেহ, হত্যা করা হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তীকে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029711723327637