নতুন শিক্ষকদের যোগদান নিয়ে ফের আইনি জটিলতার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ফের নির্বাচিত না হতে পারা এক প্রার্থীর করা রিট আমলে নিয়ে আদালত রুল জারি করেছেন, যাতে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম ছয় মাস স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালত ওই প্রার্থীর আবেদন করা পদগুলো স্থগিত রাখতে বলেছে, নাকি পুরো শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলেছে তা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না। তাই ফের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সলিসিটর উইংয়ের কাছে এ বিষয়ে মতামত চেয়েছে এনটিআরসিএ।
সোমবার এ সংক্রান্ত চিঠি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সলিসিটর উইংয়ে পাঠানো হয়েছে। এদিন বিকেলে সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে তিনি বলেন, শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হতে না পারা অপর এক প্রার্থী ফের আদালতে রিট করেছেন। সে প্রেক্ষিতে জারি করা এক রুলে তাকে কেনো নির্বাচন করা হয়নি তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে নিয়োগ স্থগিত রাখতে বলেছে। তবে, ওই রুল থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি না আদালত পুরো নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলেছে কিনা। বিষয়টি পরিষ্কার হতে আমরা ফের সলিসিটর উইংয়ের মতামত পেয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আদালত যদি এ নির্দেশনা প্রত্যাহার না করে সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা নির্দেশনা প্রত্যাহারের বিষয়ে চেম্বার আদালতে চিঠি পাঠানোর বিষয়েও ভাবছি।
নতুন শিক্ষকদের চূড়ান্ত নিয়োগ সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমরা এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাইনি। অনুমতি পেলেও আইনি জটিলতার শঙ্কা নিয়ে আমরা প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবো না।
এর আগেও নির্বাচিত হতে না পারা একজন প্রার্থীর করা রিটের প্রেক্ষিতে জারি হওয়া রুল নিয়ে আইনি জটিলতার শঙ্কা দেখা দিয়েছিলো। কিন্তু সে বিষয়ে সলিসিটর উইংয়ের মতামত চেয়েছিলো এনটিআরসিএ। সলিসিটর উইং রিট সংশ্লিষ্ট পদগুলো বাকি রেখে অন্য প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশের বিষয়ে মতামত দিয়েছিলো বলে জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। নতুন করে অপর এক প্রার্থীর রিটে ও এ নিয়ে জারি হওয়া রুলের বিষয়ে নতুন করে জটিলতার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি কর্তাদের।
এদিকে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীরা দ্রুত যোগদান করতে চাচ্ছেন। দ্রুত চূড়ান্ত সুপারিশ নিয়ে যোগদানের দাবি জানিয়ে সোমবার এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন তারা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই মানববন্ধন চলে। পরে তারা এনটিআরসিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি শেষ করেন।
কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে হবু শিক্ষকদের নেতা মো. ইমরান খান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করার সময় তারা নতুন জটিলতার কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, নতুন করে নির্বাচন না পাওয়া এক প্রার্থী রিট করেছেন। যার ফলে আদালত নিয়োগ কার্যক্রম ছয় মাস স্থগিত রাখতে বলেছে। কর্মকর্তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তারা জটিলতা নিরসনে কাজ শুরু করেছেন। আমরা তাদের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তারা এ জটিলতা সমাধান তথা আমাদের চূড়ান্ত সুপারিশের ব্যবস্থা না করলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
প্রসঙ্গত, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত সুপারিশের অপেক্ষায় আছেন ৩২ হাজার শিক্ষক প্রার্থী। এর মধ্যে প্রায় ২৮ হাজার প্রার্থী ভিরোল ফরম পূরণ করে অনলাইনে জমা দিয়েছেন। পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখে তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়েছে এনটিআরসিএ। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর। প্রাথমিক সুপারিশের ফল প্রকাশ করা হয় গত ১২ মার্চ। এতে দেশের স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য ৩২ হাজারের বেশি প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়। পরে অনলাইনে ভি-রোল ফরম পূরণের নির্দেশনা দেয়া হয়।