হলের গেট ভেঙ্গে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বেগম সুফিয়া কামাল হল ও প্রীতিলতা হলের তালা ভেঙ্গে রাস্তায় নামেন ছাত্রীরা। দুর্নীতির অভিযোগ ও আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আবাসিক হলের তালা ভেঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন ছাত্রীরা৷
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বেগম সুফিয়া কামাল হল ও প্রীতিলতা হলের তালা ভেঙ্গে রাস্তায় নামেন ছাত্রীরা। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল থেকেও ছাত্রীরা বের হয়েছেন। মিছিল নিয়ে অন্য হলগুলোতে যাচ্ছেন তারা।
এর আগে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ছাত্রী হল এলাকায় পৌঁছায়।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা উপেক্ষা করে অনেক শিক্ষার্থীই হলে অবস্থান করছেন। তবে ইতোমধ্যে অনেকেই আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ছাত্রীরা হল ছেড়েছেন বেশি। আশেপাশের মেসে ও আত্মীয়দের বাড়ীতে উঠেছেন অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নওশিন নাহার বলেন, ‘আমার বাড়ি বরিশালে। এত কম সময়ের হল ছেড়ে বরিশালে যাওয়া যায় না। রাস্তাঘাটের অবস্থা সম্পর্কেও কিছু জানি না। হঠাৎ কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।’
এদিকে, সাড়ে নয়টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের সংগঠক সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে ভীত হয়ে ছাত্রলীগ দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। আবার এই হামলার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ দেয়। আমরা সর্বসম্মতভাবে এই নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করছি।’
ল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরেই আন্দোলন চলছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় ৮ জন শিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হামলা চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এছাড়া উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের “ধর ধর”, “জবাই কর” স্লোগান দিয়ে হামলায় উসকানি দিতে দেখা গেছে।
এই ঘটনার পর দুপুরে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশের কথা জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে সোমবার (৪ নভেম্বর) রাতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে “দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর”-এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাসভবনের সামনের ফটকে অবস্থান নেন তারা। মঙ্গলবার নিয়ে টানা ১১ দিন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং দশম দিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে কার্যালয়ে যেতে পারছিলেন না উপাচার্য। তবে ছাত্রলীগের হামলার পর দুপুর ১টার দিকে পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, প্রশাসনপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের কড়া পাহারায় নিজ গাড়িতে করে বাসভবন থেকে বের হন উপাচার্য। পরে সেখান থেকে নতুন প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। উপাচার্য তাকে “মুক্ত” করার জন্য ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।