রাজধানীর খিলগাঁও থেকে বাসে করে গ্রামের বাড়ী লক্ষ্মীপুরে যাচ্ছিলেন অলিউল্ল্যাহ (৩২) নামের এক যুবক। তবে গন্তব্যে না পৌছে জ্ঞান ফিরলে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের একটি কক্ষে চারজন যুবকের সঙ্গে নিজেকে আবিষ্কার করেন।
ওই চারজন তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলের ‘এ’ ব্লকের ২১৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেন এবং ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনের একজনকে শনাক্ত করতে পেরেছেন ভুক্তভোগী। অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর নাম অসিত পাল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক।
অলিউল্লাহর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায়। তিনি রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে একটি জুতার কোম্পানিতে চাকরিরত।
অলিউল্ল্যাহ সাংবাদিকদের বলেন, খিলগাঁও বাসাবো থেকে তিনি তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে যাবেন। বাসাবো থেকে সদরঘাটের উদ্দেশ্যে একটি বাসে ওঠেন। এরপর তার আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন যুবকের সঙ্গে দেখতে পান। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলের ‘এ’ ব্লকের ২১৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে তাকে নির্যাতন এবং ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
ওয়ালিউল্লাহ আরও বলেন, ‘টাকা দিতে না পারায় তারা আমাকে চাকু দেখায় এবং লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করে। পরে কাছে থাকা নগদ ৪০ হাজার টাকা ওরা নিয়ে নেয়। ভয়ভীতি দেখালে পরিবার থেকে আরও পাঁচ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে তাদের দেই। টাকা নিয়ে তারা আমাকে হলগেটে ছেড়ে দেয়। পরে এক ছাত্রীর সঙ্গে দেখা হলে বিষয়গুলো বলি। ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন।’
সাংবাদিকরা তাকে শহীদ সালাম-বরকত হলে নিয়ে যান এবং হল প্রশাসন ও সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানান। পরে মধ্যরাতে হল প্রশাসনের উপস্থিতিতে ২১৪ নম্বর কক্ষে তল্লাশি চালানো হয়। এসময় একটি লোহার পাইপ, চাকু, বিভিন্ন ইনজেকশন ও মাদকদ্রব্য সেবনের আলামত উদ্ধার করা হয়। এছাড়া বিকাশে টাকা আদায়ের সঙ্গে অভিযুক্ত অসিত পালের সংশ্লিষ্টতার সত্যতা মিলেছে বলে জানায় হল প্রশাসন।
এ বিষয়ে জানতে অসিত পালের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘ভুক্তভোগীর করা অভিযোগগুলোর বিষয়ে শুনেছি। প্রাথমিকভাবে ওই কক্ষে অভিযান চালিয়ে লোহার পাইপসহ মাদক সেবনের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদির আলামত পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী আমাকে একটি অভিযোগপত্র দিয়েছে। হল প্রশাসন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকেও বিষয়টি জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন কাজ করছে। হল প্রশাসনের কাজের পর প্রক্টর অফিসের যে দায়িত্ব সেটি শেষ করে অতিদ্রুত ছাত্র-শৃঙ্খলা বিধিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’