হল ছাড়তে ছাত্রদের কাছে ব্যর্থ হলেও ছাত্রীদের জন্য কঠোর জাবি প্রশাসন

জাবি প্রতিনিধি |

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রীদের মাস্টার্স পরীক্ষার পর খুব দ্রুততম সময়ে হল ছাড়তে বাধ্য করে প্রশাসন। অন্যদিকে, পরীক্ষা শেষে দুএক বছর অতিরিক্ত সময় হলে থাকা সেখানকার ছাত্রদের জন্য একটি সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মোট ৯টি আবাসিক হলে ৫ হাজার ৪৭২টি আসন রয়েছে। এর বিপরীতে সেখানে রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী। 

অন্যদিকে, ছাত্রীদের আবাসিক হলে মোট আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৭৩৬টি এবং ছাত্রী সংখ্যায় প্রায় কাছাকাছি। 

প্রায় ২-৩ বছর আগে ৪৩ ও ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অনার্স-মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হলেও বেশিরভাগ ছাত্র এখনো হল ছাড়েননি।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

অন্যদিকে, ৪৩ ও ৪৪তম ব্যাচের ছাত্রীদের হল ছাড়তে হয়েছে মাস্টার্স শেষ হওয়ার পরই।

ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ছাত্রী ছাড়া মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ৪৫তম ব্যাচের অধিকাংশ ছাত্রীই ইতোমধ্যে হল ছেড়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী জেনিফার এহসান বলেন, 'একজন ছাত্রীর মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে তার ১ মাসের মধ্যে হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়। অপমান করে হোক আর যেভাবেই হোক, হলের সিট ছাড়তে বাধ্য করা হয়।'

'এটা অবশ্যই ভালো, তবে ছাত্রদের ক্ষেত্রে কেন এ ধরনের প্রাকটিস নেই? ছেলেরা দিনের পর দিন হলে থাকলেও প্রশাসন তাদের কেন বের করতে পারে না' প্রশ্ন তোলেন জেনিফার।

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগের ৪৫তম আবর্তনের সাবেক একজন ছাত্রী জানান, আগস্ট মাসে পরীক্ষার পরের সপ্তাহে আমি আনঅফিসিয়ালি হল ছেড়েছি। যদি সংকটের কথা বলি, ছাত্রদের মতো আমারও নানা ধরনের সংকট আছে। কিন্তু আমি নির্দিষ্ট সময়ে হল ছেড়ে দিয়েছি। আমিও চাকরি করেছি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বাসা ভাড়া করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি।'

বিভিন্ন হলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে প্রায় ৫ শতাধিক অছাত্র আছেন। সেগুলোর মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৫০, মীর মশাররফ হোসেন হলে শতাধিক, শহীদ সালাম-বরকত হলে ৬০-৭০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে দেড় শতাধিক, মওলানা ভাসানী হলে শতাধিক, আল বেরুনী হলে অর্ধ শতাধিক, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে অর্ধ শতাধিক এবং শহীদ রফিক-জব্বার হলে প্রায় দেড় শতাধিক অছাত্র থাকেন।

এ ছাড়া ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ৪৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান লিটন পোষ্য কোটার হলেও থাকেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে, পোষ্য হিসেবে তিনি হলে থাকতে পারেন না। তার মতো পোষ্য কোটার অনেকেই থাকছেন হলে।

এদিকে হলগুলোতে গণরুম ও টিভিরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামালউদ্দীন হলের টিভিরুম ও হল সংসদ রুমে থাকেন শতাধিক শিক্ষার্থী। গরমে মেঝেতে বিছানা পেতে তাদের থাকতে হচ্ছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও আ ফ ম কামালউদ্দীন হলের প্রভোস্ট আ স ম ফিরোজ উল হাসান জানান, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ভাষা চিঠি। আমরা চিঠির মাধ্যমে হল থেকে নেমে যেতে বলি। মেয়েদের বিষয়টা হচ্ছে, মাস্টার্স শেষ হবার পর তাদের পরিবার থেকে তেমন একটা হলে থাকতে দিতে চায় না। ছেলেদের বিষয়টা এরকম না। আমরা ৩ বছর গণরুমে ছিলাম, তারপর ৩ বছর আমার রুমে থাকব, এমন একটা মনোভাব থাকে ছেলেদের। এটা একটা দুষ্ট চক্র। এটা ভাঙতে হবে। এই দুষ্ট চক্র ভাঙলে আর এমন পরিস্থিতি থাকবে না।'

ছাত্রী হলের প্রশাসন যেটা পারছে, ছাত্রদের হলের প্রশাসন সেটা কেন পারছে না, এ প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম বলেন, 'আমার মনে হয়, ছাত্রীদের মা-বাবা চান তার মেয়েরা বাসায় আসুক, পড়াশোনা করুক, চাকরির জন্য পড়ুক। বাসায় গেলে পড়াশেনার ব্যাপারে মা-বাবারাও সচেতন থাকতে পারেন।'

আবাসন সংকট নিয়ে উপাচার্য বলেন, 'আসন সংকট নিরসনে আমরা কাজ করছি। সমস্যা সমাধানে নতুন আবাসিক হল নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন হলে জনবল সংকট আছে, যেটা নিরসনে আমি নিজেও ইউজিসিতে যাচ্ছি। জনবল সংকট কেটে গেলে সবগুলো হল উদ্বোধন করতে পারলে এ সংকট আর থাকবে না। এজন্য একটু সময়ের প্রয়োজন। তাছাড়া অছাত্রদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041208267211914