হল ছাড়ছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : মাহে রমজান, ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ থেকে আগামী ১৩ দিনের জন্য ছুটিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ছুটি শুরু হওয়ায় হল ছাড়তে শুরু করছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অ.দা) অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ ছুটির ঘোষণা করা হয়। তবে দাপ্তরিক ছুটি থাকবে ৯ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত।

আগামী ১৭ এপ্রিল পুনরায় পরীক্ষা শুরু হবে। ৮ মে টার্ম পরীক্ষা শেষ হবে, ২৫ মে ক্লাস শুরু হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (তথ্য) মো. শফিউর রহমান বলেন, ছুটি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে যান।

আবার কিছু শিক্ষার্থী হলে থাকেন; ছুটির সময় হলে থাকতে বাধা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হল প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ব্যাগ, কাপড়চোপড় ও লজিস্টিক জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। বেলা ১১টার সময় সাবেকুন নাহার সনি হলের সামনে কথা হয় কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি নিজেকে সনি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বলে জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ছুটি শুরু হয়ে গেছে, তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। আবার ঈদের ছুটি শেষ হলে চলে আসব, বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের কারণে কিছুটা ভীতিও আছে। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকুক।

হলের সার্বিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে আহছানউল্লা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. রাফি উদ্দিন বলেন, ঈদের বন্ধে কিছু শিক্ষার্থী হলে থাকে, তবে ডাইনিং-ক্যান্টিন বন্ধ থাকে। দাপ্তরিক ছুটি শুরু হলে হলের অফিশিয়াল কার্যক্রমও বন্ধ থাকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে থাকা একদল শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক আলম, সাগর বিশ্বাস, অরিত্র ঘোষ ও ২১ ব্যাচের অর্ঘ দাস, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর স্বপ্নীল এবং মিশুদত্ত চাঁদ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আশিক আলম ও অরিত্র ঘোষ।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ‘আমাদের হলের রুমে বঙ্গবন্ধু ও আপনার (শেখ হাসিনা) ছবি রাখতে চাইলেও আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনা” বিষয়ক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও তার বিরোধিতা করে সমালোচনা করা হয়। এ কারণে এই ক্লাব প্রতিষ্ঠায় আমাদের পিছপা হতে হয়। এমনকি সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আমাদের জীবন হুমকিসহ নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিবির পরিচালিত বাঁশের কেল্লার পক্ষ থেকে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আমাদের নাম, মোবাইল নম্বর, শিক্ষার্থী নম্বর থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মেসেজিং অ্যাপসগুলোতে, এর প্রমাণ এরই মধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘হে দেশরতœ, বঙ্গবন্ধু তনয়া, আমাদের সাহায্য করুন। আমরা বিশ্বাস করি ভিন্ন-অভিন্ন সব মতের সাধারণ বুয়েট শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে স্বাভাবিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। আমরা চাই না আমাদের ক্যাম্পাস জঙ্গি তৈরির কারখানা হোক। আমরা চাই না দেশে দ্বীপ ভাই, সনি আপু ও আবরার ফাহাদ ভাইয়ের হত্যাকান্ডের মতো নির্মম ঘটনা ঘটুক, আমরা দ্বিতীয় কোনো হলি আর্টিসান চাই না। আমরা চাই না তন্ময় ভাইয়ের মতো কেউ শিবিরের নৃশংস হামলার ক্ষতচিহ্ন নিয়ে জীবনযাপন করুক। আমরা সবাই জানি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত মুক্তবুদ্ধি চর্চার মুক্ত মাঠের মতো, আমাদেরও সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আপনার কাছে এ আকুল আবেদন।’

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, আপনার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আমরা আমাদের আকুল আর্জি রাখলাম যে, নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। দেশ ও দশের প্রতি ভালোবাসা রেখে সবার কল্যাণকে মাথায় রেখে আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপদে এবং সাহসের সঙ্গে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করতে চাই বলে উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

এদিকে ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধের আন্দোলনের এক সংগঠক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো আপডেট থাকলে আপনাদের জানানো হবে, আমাদের এখন কর্মসূচি নেই। নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বুয়েটে প্রবেশকে কেন্দ্র করে ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন এক দল শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগ সভাপতিকে ঢুকতে সহযোগিতা করায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বির সিট বাতিল, বহিষ্কারসহ ৬ দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রাব্বির সিট বাতিলও করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028491020202637