হাইকোর্টের রায় সত্ত্বেও ঢাবি শিক্ষককে হয়রানি

ঢাবি প্রতিনিধি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর এক শিক্ষককে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন ভুক্তভোগী শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিম। আদালত তার পক্ষে রায় দেওয়ার পাঁচ মাস পরও একাডেমিক কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারেননি এই শিক্ষক। ফলে তার অধীনে একটি পিএইচডি প্রপোজাল জমা পড়লেও তাতে সায় দেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় পরিত্রাণ পেতে তিনি বিশ্বিবদ্যালয়ের ১৯শ শিক্ষককে ইমেইল করে তার জীবনের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ‘স্টোরকিপার’ পদে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে গত বছর সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্তপূর্বক ও বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছিলেন একই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিমসহ সাত

শিক্ষক। অভিযোগ দেওয়ার পর সাত শিক্ষকের মধ্যে শুধু অধ্যাপক রেজাউলকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, গত বছরের ২০ জুন বিভাগের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অন্যায় কর্মকাণ্ড, মিথ্যাচার, মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ এনে তার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন বিভাগের সাত শিক্ষক। অধ্যাপক কামালের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সার্বিক অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপার্চায অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানকে বরাবর চিঠি দেন ওই সাত শিক্ষক। চিঠির অনুলিপি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এসএম মাকসুদ কামালসহ নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে দেওয়া হয়। তখন উপাচার্য ওই চিঠি গ্রহণ করেছিলেন এবং তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে প্রতিবারই আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

অধ্যাপক রেজাউল করিম অভিযোগ করেন, বিভাগীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনায় বিনা কারণে তাকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিভাগীয় চেয়ারম্যান আক্রোশের জেরে অভিযোগকারীদের মধ্যে শুধু তাকেই একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), অনুষদের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ ও শিক্ষক সমিতির নেতাদের কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেও কোনো সমাধান মেলেনি। পরে রেজাউল করিম উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। এতে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

জানা গেছে, রিট পিটিশনের ওপর শুনানি শেষে গত ৪ এপ্রিল উচ্চ আদালতের এক আদেশে বিভাগের একাডেমিক কমিটি কর্তৃক অধ্যাপক রেজাউল করিমকে দেওয়া অব্যাহতির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। কিন্তু পাঁচ মাস পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদালতের রায় কার্যকর করছে না। রেজাউল করিমের অভিযোগ, রায় কার্যকর করার কথা বললে উপাচার্য বলেন এটা বিভাগের বিষয়। আর বিভাগীয় চেয়ারম্যান বলেন এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জড়িত, তাই তিনি কিছু করতে পারবেন না।

জানা গেছে, অধ্যাপক রেজাউল করিমের অধীনে বিশ্বিবদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা ফেরদৌস লুনা পিএইচডির রিসার্চ প্রপোজাল (গবেষণা প্রস্তাব) জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে না দেওয়ায় প্রপোজালটি গ্রহণ করছেন না বিভাগীয় চেয়ারম্যান। রেজাউল করিমের অভিযোগ, চেয়ারম্যানের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন একই বিভাগের শিক্ষক সোহেল রানা। অভিযোগ ওঠে, চলতি বছরের ২৫ মে মনোবিজ্ঞান বিভাগে রিসার্চ প্রপোজাল সাবমিট করতে গেলে ফারহানা ফেরদৌস লুনা হেনস্তার শিকার হন।

অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার সময় চেয়ারম্যান কোনো কারণ উল্লেখ করেননি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী বিভাগের চেয়ারম্যান বা একাডেমিক কমিটি কাউকে অব্যাহতি দিতে পারে না। উচ্চ আদালতের রায় আমার পক্ষে আসছে। তবু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বেআইনিভাবে আমাকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে দূরে রাখছেন। আমার প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী আইনের ঊর্ধ্বে?’

রেজাউল করিম বলেন, ‘উপাচার্য, চেয়ারম্যান, ডিন এবং বিভাগের আরও কতিপয় ব্যক্তি একটি বিশেষ এলাকার হওয়ায় তাদের মধ্যে রয়েছে অঞ্চলপ্রীতি। সে জন্য হয়তো আমার সঙ্গে এ রকম অন্যায় করা হচ্ছে। আমার শিক্ষার্থীরা আমার সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

জানা গেছে, কোনো অবস্থাতেই পরিত্রাণ না পাওয়ায় অধ্যাপক রেজাউল করিম তার জীবনের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ৯শ শিক্ষককে ইমেইল করে বিষয়টি জানিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, তার কিছু হলে গেয়ে এ জন্য সরাসরি দায়ী থাকবেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই। কারণ, আমি চেয়ারম্যান হিসেবে কখনো সিদ্ধান্ত নেই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু হয় দুটো কমিটির মাধ্যমে। একটি এসি এবং আরেকটি হলো সিঅ্যান্ডডি। আদালতের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখবে।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মহামান্য আদালতের কী নির্দেশনা আছে, সেগুলো দেখতে হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনি প্রক্রিয়া থাকলে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে এগোতে হয়। ভদ্রলোকের চিঠি প্রায়শই আমার কাছে আসে। আমাদের আইনি বিষয়গুলো দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কলেজে সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া কোটায় ভর্তির সুযোগ - dainik shiksha কলেজে সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া কোটায় ভর্তির সুযোগ শিক্ষা সংস্কারে বাংলাদেশ-চীন কাজ করবে - dainik shiksha শিক্ষা সংস্কারে বাংলাদেশ-চীন কাজ করবে বয়স ৯ না হলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন নয় - dainik shiksha বয়স ৯ না হলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন নয় প্রাথমিকের ডিজিকে অপসারণে পঞ্চম দিনের আন্দোলন - dainik shiksha প্রাথমিকের ডিজিকে অপসারণে পঞ্চম দিনের আন্দোলন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’ হতে আগ্রহী হাজারো শিক্ষা ক্যাডার ! - dainik shiksha ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’ হতে আগ্রহী হাজারো শিক্ষা ক্যাডার ! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া কর্মচারীদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া কর্মচারীদের তথ্য আহ্বান এমপিওবিহীন ৩য় শিক্ষকদের বাদ পড়ার কারণ জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha এমপিওবিহীন ৩য় শিক্ষকদের বাদ পড়ার কারণ জানতে চায় অধিদপ্তর সৃজনশীল পদ্ধতির পরীক্ষা ফিরছে - dainik shiksha সৃজনশীল পদ্ধতির পরীক্ষা ফিরছে অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058820247650146