করোনা মহামারিরর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দাবি করেছে দুদকের তদন্তাধীন সাইফুরস কোচিং সেন্টারসহ বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও কিন্ডারগার্টেন মালিকরা। অত্যন্ত কৌশলে তারা ব্যানার বানিয়ে নতুন নাম ধারণ করে শুক্রবার (২২ মে) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ দাবি তোলেন। ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে শিক্ষা ব্যবসা করা কোচিং সেন্টারগুলোর আয়ব্যায়ের হিসেবে চেয়েছে দুদক। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্মে উৎসাহী করার মতো প্রলোভন দেখানো বিজ্ঞাপন প্রকাশের দায়ে সাইফুরসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনসুন্ধান চলমান।
এর কয়েক সপ্তাহ আগে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে কিন্ডারগার্টেন মালিকাদের অপর দুটি সংগঠন যথাক্রমে ১০০ কোটি ও ৫০০ কোটি দাবি করেছে। এবার কোচিং সেন্টারগুলোর মালিকারা যুক্ত হয়ে মোট এক হাজার কোটি টাকা দাবি করেছেন সরকারের কাছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা দাবি করেন, বাংলাদেশে প্রায় লক্ষাধিক কিন্ডারগার্টেন, কোচিং সেন্টার ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেগুলো শতভাগ ভাড়া বাসায় পরিচালিত। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৫০ লাখ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছে বলে তারা দাবি করলেও দাবির স্বপক্ষে কোনও তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি। এসকল প্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি দ্বারা পরিচালিত হয়। যেহেতু তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাই সরকারের সুবিধা ভোগ করে নাা।
সরকারকে ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদান করে তারা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যত অচল হয়ে যায়। আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দু’মাসের ভাড়া দেয়াও সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেন তারা। এমনকি শিক্ষক ও স্টাফদের বেতন দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৩ বা ৪ মাসের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠান চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে উল্লেখ করেন নেতারা।
তারা আরও বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি রক্ষা করা সম্ভব না হয় তবে দেশের বেকার সংখ্যা কয়েক লাখ বেড়ে যাবে। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী যারা এসকল প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইম চাকরি করে শিক্ষার ব্যয় নির্বাহ করত, তাদের শিক্ষা জীবনও হুমকির মুখে পড়বে।
যেহেতু ট্রেড লাইসেন্সের দ্বারা পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে চায় না তাই এখানে সরকারে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন উল্লেখ করেন নেতারা।
এসময় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তিনটি দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হল, করোনা সংকট মোকাবেলায় কিন্ডাগার্টেন স্কুল, কোচিং (ছায়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এক হাজার কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা বা প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক শিক্ষক কর্মচারীকে একটি করে রেশন কার্ডের ব্যবস্থা। দুর্যোগকালীন সময়ে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক কর্মচারীকে কমপক্ষে ৭ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা প্রদান করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হানিফ খান, সাইফুরস কোচিং সেন্টারের মালিকের দ্বিতীয় স্ত্রী ও পরিচালক শামসে আরা খান ডলি, ক্যাডেট কোচিং সেন্টারের মালিক মাহবুব আরেফিন, শাহাদাত ঢালী, মাহতাব উদ্দিন, মানস বোস বাবুরাম, বিপ্লব সরকার এবং মো. আবু তালেব প্রমুখ।