হাজিদের যেসব কারণে দম ও সদকা দিতে হয়

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: হজ বা ওমরার মধ্যে এমন কিছু ভুল ত্রুটি হতে পারে যার কারণে দম দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়। আবার এমন কিছু ভুল-ত্রুটিও হয়ে যায়, যার কারণে দম ওয়াজিব হয় না, তবে সদকা ওয়াজিব হয়।

দম বলতে সাধারণভাবে একটি পুরো বকরি, ভেড়া , দুম্বা কিংবা গরু, মহিষ ও উটের এক সপ্তমাংশ বোঝায়।

আর সদকা বলতে সাধারণভাবে একটি ফিতরা পরিমাণ দান করাকে বোঝায় এবং একজন ফকিরকে এই পরিমাণের চেয়ে কম দেওয়া যাবে না।

দম বা সদকা ওয়াজিব হলে চলতি বছরের হজেই আদায় করা জরুরি নয়। পরে দিলেও চলবে। তবে দম যখনই আদায় করবে দমের প্রাণী হারামের সীমানার মধ্যেই জবাই করতে হবে। দমের প্রাণীর গোশত নিজে, বাবা-মা, সন্তানেরা খেতে পারবে না। 

যেসব কারণে দম ওয়াজিব হয়

• হজ ওমরা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে মক্কা বা হারাম শরিফে গমনকারী ব্যক্তি ইহরাম ছাড়া মিকাত অতিক্রম করলে তার কর্তব্য মিকাতের বাইরে এসে ইহরাম বেঁধে যাওয়া। তা না করলে তার ওপর দম ওয়াজিব।

• ইহরাম অবস্থায় মাথা, চেহারা, দাড়ি, হাত, হাতের তালু, পায়ের গোছা, রান ইত্যাদি বড় অঙ্গের পূর্ণ স্থানে খুশবু লাগালে দম ওয়াজিব হয়।

নাক, কান, গোঁফ, আঙ্গুল প্রভৃতি ছোট অঙ্গেও বেশি পরিমাণ খুশবু লাগালে দম ওয়াজিব হয়। তবে ছোট অঙ্গে অল্প পরিমাণ খুশবু লাগালে দম নয় বরং সদকা ওয়াজিব।

• শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুশবু লাগালে দেখতে হবে যদি তা একত্র করলে বড় কোনো অঙ্গের সমপরিমাণ হয়ে যেত বলে মনে হয়, তাহলে দমও দিতে হবে।

• যদি কাপড়ে খুশবু লাগায় বা খুশবু লাগানো কাপড় পরিধান করে তাহলে তাহলে খুশবুর পরিমাণ এক বর্গবিঘত বা তার বেশি হলে এবং পূর্ণ এক রাত বা পূর্ণ একদিন পরিধান করলে দম ওয়াজিব হবে। আর খুশবুর পরিমাণ তার চেয়ে কম হলে বা পূর্ণ একরাত বা একদিনের থেকে কম  সময় পরিধান  করলে সদকা ওয়াজিব হবে। 

• ইহরাম অবস্থায় মাজন বা পেস্ট ব্যবহার করলে যদি সেই মাজন বা পেস্টে খুশবুর পরিমাণ পরিমাণ কম থাকে তাহলে মাকরুহ হবে। তবে এ কারণে সদকা দিতে হবে না।

আর যদি খুশবুর পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে দম দিতে হবে।

• ঘ্রাণযুক্ত কিছু পুরো কপালে লাগালে দম দিতে হবে।

• ইহরাম অবস্থায় নারীরা হাতে মেহেদি লাগালে দম ওয়াজিব হবে। পুরুষেরা পুরো হাতের তালু বা পুরো দাড়িতে মেহেদি লাগালে দম ওয়াজিব হবে।

• পুরুষের শরীরের মাপে বানানো হয়েছে এমন সেলাইযুক্ত পোশাক ইহরামের সময় স্বাভাবিক নিয়মে পুরো একদিন বা একরাত বা এর থেকে বেশি পরলে দম ওয়াজিব হবে। এর থেকে কম (সর্বনিম্ন এক ঘণ্টা) পরলে সদকা ওয়াজিব হবে। আর এক ঘণ্টার থেকে কম পরলে নিয়মিত সদকা নয় বরং এক মুষ্টি গম সদকা করলেই হবে। (অর্থাৎ, সামান্য কিছু পয়সা দান করলে হবে)।

• ইহরাম অবস্থায় পুরুষের পায়ের মধ্যবর্তী উঁচু হাড় ঢাকা পড়ে এমন জুতো , বুট বা মোজা পূর্ণ একদিন বা পুরো একদিন বা একরাত পরিমাণ পরে থাকলে দম ওয়াজিব হবে। তার থেকে কম হলে সময় হলে সদকা ওয়াজিব হবে।

• ইহরাম অবস্থায় পুরো একদিন বা একরাত বা এর বেশি সময় পুরো মাথা, থুতু, চেহারা বা অন্তত চার ভাগের একভাগ কোনো কাপড়ে ঢেকে রাখলে দম ওয়াজিব।  আর এর কম হলে সদকা ওয়াজিব।

• ইহরাম অবস্থায় মাথা বা দাড়ির চুলে এক চতুর্থাংশ কিংবা এর বেশি মুণ্ডন করলে বা কাটলে বা উপড়ালে দম ওয়াজিব। এর কম হলে সদকা ওয়াজিব।

• পুরো ঘাড় বা পুরো বগল বা নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করলে দম ওয়াজিব। আর এর কম পরিমাণ হলে সদকা ওয়াজিব।

• অজু করার সময় বা কোনোভাবে মাথা বা দাড়ির তিনটি চুল পড়ে গেলে এক মুষ্টি গম পরিমাণ সদকা করতে হবে। আর ইচ্ছাকৃত উপড়ালে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে এক মুষ্টি পরিমাণ দিতে হবে। আর তিনের অধিক উপড়ালে পূর্ণ সদকা দিতে হবে।

• রান্নার সময় চুল জ্বলে গেলে সদকা করতে হবে।

• রোগের কারণে বা ঘুমের মধ্যে চুল জ্বলে গেলে কিছু ওয়াজিব হয় না।

• আঙ্গুলের নখ কাটলে প্রতিটির বদলে একটি করে সদকা করতে হবে।

• ভাঙ্গ নখ কাটলে কিছু ওয়াজিব হয় না।

• উত্তেজনার সঙ্গে কোনো নারীকে চুমু দিলে বা পরস্পরের লজ্জাস্থান মিলিত করলে দম ওয়াজিব হয়, বীর্যপাত হোক বা না হোক। তবে এ কারণে হজ ফাসেদ হবে না।

• উকুফে আরাফার আগে সহবাস করলে দম ওয়াজিব। এ কারণে হজ ফাসেদ হয়ে যাবে। তবে এ বছর হজের অবশিষ্ট কাজগুলো যথারীতি পালন করতে হবে। পরের বছর হজের কাজা আদায় করতে হবে।

• জানাবাত বা হায়েজ-নেফাস অবস্থায় তাওয়াফে জিয়ারত করলে পূর্ণ গরু বা উট দম দিতে হবে।

• ইহরাম অবস্থায় একটি উকুন মারলে একটি রুটি বা খেজুর দান করতে হবে। দুটো বা তিনটি উকুন মারলে এক মুষ্টি গম পরিমাণ দান করতে হবে।

আর তিনের অধিক উকুন মারলে পূর্ণ একটি সদকা দিতে হবে।

• ৯ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে আরাফা ময়দানের সীমানা ত্যাগ করলে দম দিতে হবে। তবে সূর্যাস্তের আগেই আবার আরাফার সীমানার ভেতর ফিরে এলে দম দিতে হবে না।

• ‍সুবহে সাদিকের আগে মুজদালিফা ত্যাগ করলে দম দিতে হবে। (অসুস্থ ও নারীদের দম দিতে হবে না।)

• যদি কেউ সব কয়দিনে রমী (কঙ্গর নিক্ষেপ) ত্যাগ করে বা কোনো একদিনে পুরো রমী ত্যাগ করে, বা অল্প কিছু রমী আদায় না করে তাহলে তাকে দম দিতে হবে।

• কিরান ও তামাত্তু হজ আদায়কারীদের জন্য দমে শোকর বা হজের কোরবানি ওয়াজিব। কেউ আদায় না করলে দম দিতে হবে।

• কিরান ও তামাত্তু হজকারীদের জন্য ১০ জিলহজ প্রথম বড় জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ, তারপর কোরবানি, তারপর মাথা মুণ্ডনো- এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব এবং ইফরাদ হজকারীর জন্য প্রথমে কঙ্কর নিক্ষেপ তারপর মাথা মুণ্ডানো এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব। এতে আগে-পরে বা উল্টাপাল্টা হলে দম ওয়াজিব।

• ১১ ও ১২ জিলহজ সূর্য ঢলার আগেই কঙ্গর নিক্ষেপ করলে সূর্য ঢলার পর আবার কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। অন্যথায় দম দিতে হবে।

• ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগেই হলক বা কছর করে নেওয়া ওয়াজি। বিলম্ব করলে দম ওয়াজিব।

• বিদায়ী তাওয়াফ ওয়াজিব। না করলে দম দিতে হবে।

• হারামের সীমানায় নিজে থেকে জন্মানো কোনো গাছ কাটা বা ভাঙ্গ নিষেধ। কাটলে বা ভাঙ্গলে সদকা ওয়াজিব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অনুদান পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনের সময় বাড়লো - dainik shiksha অনুদান পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনের সময় বাড়লো চার হাজার আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha চার হাজার আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ - dainik shiksha সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ সব দাবি-দাওয়া একমাস বন্ধ রাখার আহ্বান নুরের - dainik shiksha সব দাবি-দাওয়া একমাস বন্ধ রাখার আহ্বান নুরের মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম - dainik shiksha মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের - dainik shiksha গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস - dainik shiksha শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025129318237305