হাবিপ্রবি উপাচার্যের পছন্দমতো নিয়োগ, দুদকে অভিযোগ দায়ের

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি |

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়  মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) তা প্রেরণ করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক।

দিনাজপুর সমন্বিত দুদক জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হেনা মো. আশিকুর রহমান আশিক জানান, হাবিপ্রবির অভিযোগটি দুদক সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সদর দপ্তরের দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার মহোদয়ের সিদ্ধান্তে অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় অধিকতর তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশসহ বিশ্ববিদ্যালয়  মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট অভিযোগটি দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে অভিযোগের সুনির্দিষ্ট বর্ণনাসহ দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠিয়ে দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ে অনুলিপি দেয়া হয়।

দিনাজপুর হাবিপ্রবির প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক বলরাম পোদ্দারসহ ওই ফোরামের শিক্ষক নেতারা যৌথ স্বাক্ষরিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের স্বৈরাচারী মানসিকতা, আঞ্চলিকতা সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা, নিয়োগবিধি না মেনে নিজের পছন্দের লোককে নিয়োগ দেয়ায় এর বিরুদ্ধে হাবিপ্রবির বিক্ষুব্ধ শিক্ষক, কর্মকর্তা, প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ড, ইউজিসি এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কোনো নিয়মশৃঙ্খলা না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভিসি সমর্থিত গ্রুপ।

দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে যেসব অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাচার্যের পছন্দমতো নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য প্রচলিত বিধি ভেঙে বিভাগগুলোর কাছে প্রস্তাবনা না নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডেও প্রতিনিধি পরিবর্তন করা হয়। যাদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৫ জন জামায়াত-বিএনপিপন্থি। কমিটি গঠন নিয়ম-বহির্ভূত হওয়ায় হর্টিকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান নিয়োগ বোর্ড গঠন নিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দেয়া হয়েছে। ডেইরি এন্ড পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অন্য প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করায় ভিসির বিরুদ্ধে উকিল নোটিস করায় নিয়োগ প্রদান করা হয়নি। সার্কুলার ছিল ১৬ জনের, ২২ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। ভিসির ঘনিষ্ঠ প্রক্টর খালেদ হোসেন ভর্তি পরীক্ষায় ২০১৮ সালে সদস্য সচিব থাকাকালীন ভর্তি পরীক্ষার বিশেষ গাইড বের করেন। এই গাইড ফলো করে বেশির ভাগ প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে  শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী যৌন হয়রানির বিষয়ে ভিসি তেমন কোনো পদক্ষেপ নেননি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছেঁড়ার দায়ে অভিযুক্তদের ভিসি পুনর্বাসন করেন। অভিযোগ রয়েছে ড. বিধান চন্দ্র হালদার ড. শ্রীপতি শিকদারের মানিলন্ডারিং ও অবৈধ শিক্ষাসহায়ক ভাতা গ্রহণ করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালার পরিপন্থি।

অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান হাবিপ্রবির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে তিনি সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হাবিপ্রবির শাখা পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে ৭৮ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে ২ জন কর্মচারী চাকরি হারায়। কিন্তু ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি ফাহিমা খানমকে দোষীসাব্যস্ত করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষক ডা. ফজলুল হক তথ্য গোপন করে হাবিপ্রবির শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তথ্য গোপনের বিষয়টি প্রমাণিত হলে ভিসি কোনো পদক্ষেপ নেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় ভবন নির্মাণকাজে এবং পরিবহন শাখায় লাখ লাখ টাকা আত্মসাতে ৪ জন প্রকৌশলী এবং পরিবহন শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াহেদ জড়িত প্রমাণিত হওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে হাবিপ্রবি রেজিস্ট্রার ড. ফজলুল হক জানান, এ বিষয়ে কোনো চিঠি বা কাগজ পাননি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন। প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের নেতা অধ্যাপক বলরাম পোদ্দার অভিযোগ করার বিষয় সত্যতা স্বীকার করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030779838562012