হারিয়ে যাওয়া শিক্ষার সোনালী অতীত

খন্দকার এইচ আর হাবিব |

কোথায় গেলো শিক্ষার সেই সোনালী অতীত! ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারাদিন যেনো আমি ভালো হয়ে চলি।’ গ্রাম  থেকে হারিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া। এখন আর সন্ধ্যার পর এক জনের পড়া শুনে আরেকজন পাল্লা দিয়ে বই পড়ে না। কোনো মা-বাবা তার সন্তানকেও বলে না যে অমুক পড়ছে তুই বসে আছিস! অথচ ৮/১০ বছর আগেও সন্ধ্যার পর চারপাশ থেকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে বই পড়ার আওয়াজ শোনা যেতো। পরীক্ষা কাছাকাছি থাকলে তো কথাই নেই। কোনো সহপাঠী বন্ধু দিনে ও রাতে কতোক্ষণ পড়ালেখা করে গোপনে খোঁজ নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা হতো। সবচেয়ে খারাপ ছাত্রটিও রাত-দিন পড়তো। যেকোনো বোর্ড পরীক্ষার আগে গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়ার চর্চাটাও আর নেই। এ চর্চা টার জন্যই অ্যালার্ম ঘড়ির আলাদা একটা কদর ছিলো। এখন সেই এলার্ম ঘড়ির স্হান দখল করে নিয়েছে মোবাইল ফোন এবং ডিজিটাল ঘড়ি। 

আগের বছর পাস করা ভাই বোনদের কাছে সাজেশনস নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলতো। তাদের পুরনো বই সংগ্রহ করে চলতো পড়াশোনা। পরীক্ষা মানেই ছিলো তীব্র প্রতিযোগিতা। ২/৪ নম্বরের ব্যবধানে রোল নং পিছিয়ে যাওয়ার আতঙ্ক এবং লজ্জাবোধ। পরীক্ষার হলে প্রবেশের শেষ মুহূর্তেও দেখে নেয়া পাঠ্যবইয়ের কোথায় কি আছে। এখনকার দিনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে নেই কোনো অনুভূতি, কেন্দ্রে যাওয়ার পথেও শুনছে মোবাইলে বিটগান। 

মাত্র ১০/১২ বছরের ব্যবধানে সবই প্রায় বিলীন হয়ে গেলো। সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের বাজারে তো দূরের কথা ঘরের বাইরে দেখলেই সবাই অবাক হতো, শাসন করতো। আর এখন বাড়ি গেলে দেখি অনেক রাত পর্যন্ত ছেলেরা বাজারে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ কিছু বলছে না। সন্ধ্যার পর এখন দল বেঁধে নামধারী ছাত্ররা মোবাইলে ব্যস্ত থাকে। রাস্তার ধারে কিংবা ব্রিজে সার্বক্ষণিক সারিবদ্ধভাবে মাথা নিচু করে যেভাবে মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে থাকে, কুকুর অনেকের গায়ে  হিসু করে দিলেও মাথা উঁচু করে না। কোনো পড়ার শব্দ নেই গ্রুপ চ্যাটিং, অনলাইন/অফলাইন গেমস, পাবজি, ফ্রি ফায়ার, টিকটক, চুলের বিভিন্ন স্টাইল কাটিং করে পাড়া-মহল্লায় ও বাজারে আড্ডাবাজি, গ্রুপিং করা, শিক্ষা গুরুর সঙ্গে বেয়াদবি, শিক্ষকের নামে মিথ্যাচার করা, নিয়ম ভাঙা, বেয়াদবি এগুলোই এখন তাদের পছন্দের তালিকা। যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে দোকান আর সেখানে চলছে কেরামবোর্ড খেলার অন্তরালে কোমল পানীয়জল খাবারের নামে নেশা। রুচিবোধ তথাকথিত এমন আধুনিকতায় রূপ নিয়েছে ছেলেমেয়েদের পোশাক দেখে শনাক্ত করা বিড়ম্বনাময়। যাদের গহনা পরার কথা তাদের হাত, কান, গলা শূন্য। পক্ষান্তরে বাবুদের মাথায় চুল থেকে কানে দুল হাতে চুড়ি সব পরিপূর্ণ। আমাদের যুগে আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে শুনেছি কি ভাবার্থ পূর্ণ রোমান্টিক গান যেমন- পৃথিবীর গান আকাশ কি মনে রাখে: সন্ধার ছায়া নামে এলোমেলো হাওয়া, নিঠুর পৃথিবী দিয়েছো আমায় আঁখিজল উপহার; সালাম পৃথিবী তোমাকে সালাম; আর এখনকার দিনের তরুণ প্রজন্মের গানের বিট শুনলে মনে হয় কানের পর্দা ফেটে যাচ্ছে। আধুনিকতার নামে পোশাকের তো বারোটা বাজিয়ে ছাড়ছে পাশ্চাত্যের নগ্নতা। এতেই কি  আমরা ধন্য? শুধু কি তাই? হারিয়ে যাচ্ছে পারিবারিক নৈতিক শিক্ষা ও শিষ্টাচার। 

লেখক: প্রধান শিক্ষক মৌলভীর ডাঙ্গা সরকারি প্রা. বিদ্যালয়, মধ্যপাড়া খনিজ শিল্পাঞ্চল, দিনাজপুর 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের শিক্ষাক্রম ফিরছে আগামী বছর থেকে - dainik shiksha আগের শিক্ষাক্রম ফিরছে আগামী বছর থেকে অটোপাস হচ্ছে না, এইচএসসির ফল করোনাকালের পরীক্ষার অভিজ্ঞতায় নয় - dainik shiksha অটোপাস হচ্ছে না, এইচএসসির ফল করোনাকালের পরীক্ষার অভিজ্ঞতায় নয় অটোপাস চান না ৮৬ শতাংশ পরীক্ষার্থী - dainik shiksha অটোপাস চান না ৮৬ শতাংশ পরীক্ষার্থী সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে দেয়া হলো - dainik shiksha সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে দেয়া হলো আন্দোলনরত সেসিপ কর্মকর্তাদের হাতে লাঞ্ছিত শিক্ষা ক্যাডার - dainik shiksha আন্দোলনরত সেসিপ কর্মকর্তাদের হাতে লাঞ্ছিত শিক্ষা ক্যাডার পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি : চূড়ান্ত সুপারিশের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ - dainik shiksha পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি : চূড়ান্ত সুপারিশের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ মর্যাদা রক্ষা কমিটির শিক্ষা ভবনে অবস্থান শুরু - dainik shiksha মর্যাদা রক্ষা কমিটির শিক্ষা ভবনে অবস্থান শুরু বন্যাকে পরিকল্পিত দুর্যোগ বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা - dainik shiksha বন্যাকে পরিকল্পিত দুর্যোগ বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033338069915771