হালখাতায় ধারের অর্ধেক টাকাও তুলতে পারলেন না সেই শিক্ষক

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

বন্ধু ও পরিচিতদের দেয়া ধারের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর এক শিক্ষক। তবে এ আয়োজন করেও ধারের অর্ধেক টাকাও তুলতে পারেননি বহুল আলোচিত সেই শিক্ষক। গতকাল শুক্রবার বিকেলে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় বাজারের হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে দিন শেষে ধার হিসেবে দেয়া সাড়ে তিন লাখ টাকার দেড় লাখ ওই শিক্ষককে ফেরত দিয়েছেন বন্ধু-পরিচিতরা। 

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় এম এ এম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আউয়াল তার বন্ধু ও পরিচিতদের দেয়া ধারের টাকা সময় মতো তুলতে না পেরে হালখাতার আয়োজন করেন। এই হালখাতার আয়োজনের দিন তারিখ ঠিক করে ছিলেন ১২ জানুয়ারি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেনাদারদের চিঠি দেন। নির্ধারিত দিনে শুক্রবার বিকেলে হালখাতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

আরও পড়ুন: ধারের টাকা তুলতে শিক্ষকের হালখাতা!

হালখাতার আয়োজনে কোনো প্রকার কমতি ছিলো না। আন্ধারীঝাড় বাজারের সিঙ্গাড়া হটস্পট নামের একটি দোকানে আয়োজন করা হয় এই হালখাতা। এ হালখাতা উপলক্ষে রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয় দোকানটি। পাতা হয় চেয়ার টেবিল। ক্যাশবাক্সের সামনে সাঁটানো হয় শুভহালখাতার ব্যানার। ধারের টাকা পরিশোধে আসা ব্যক্তিদের আপ্যায়ণ করা হয় মাংস বিরিয়ানী দিয়ে। প্যাকেটে দেয়া খাবার কেউ খেয়ে গেছেন আবার কেউ নিয়ে গেছেন। টাকা পরিশোধের পর পরিশোধকারী নাম খাতা থেকে কাটা হয়। এই হালখাতায় আমন্ত্রিত ছিলেন শিক্ষক আব্দুল আউয়ালের ৩৯ জন বন্ধু ও পরিচিত যারা তার কাছ থেকে ধার গ্রহণ করে ছিলেন। এছাড়া এ হালখাতা দেখতে উপস্থিত ছিলেন উৎসুক জনতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।

শিক্ষক আউয়াল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, দীর্ঘদিন যাবত ধার দেয়া টাকা তোলার জন্য তিনি হালখাতার আয়োজন করেছেন। হালখাতার চিঠি পেয়েই অনেকে সঙ্গে সঙ্গেই টাকা পরিশোধ করেছেন। শুক্রবার হালখাতার দিন অনেকে টাকা পরিশোধ করেছেন। আবার অনেকে আসেনি। ৩৯ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেয়া হলেও ১৯ জন এসেছেন। মোট দেড় লাখ টাকা উঠেছে। এখনো দুই লাখের মতো টাকা উঠাতে পারেননি ওই শিক্ষক। 

হালখাতায় টাকা পরিশোধ করতে আসা সোলাইমান ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বেশ কিছুদিন আগে শিক্ষক আউয়ালের কাছে ৩ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। হালখাতার চিঠি পেয়ে প্রথমে হতভম্ব হলেও অনুষ্ঠানে এসে বিরিয়ানি খেয়ে দেয়ে ধারের টাকা পরিশোধ করেছি।

জব্বার মিয়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সাড়ে ৬ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম কয়েক মাস আগে মেয়ের স্কুলে ভর্তির জন্য। হালখাতায় এসে তা পরিশোধ করে  ঋণমুক্ত হলাম। বিষয়টা ভালো লেগেছে। 

ওই শিক্ষকের সহকর্মী শিক্ষক আনোয়ারুল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, আউয়াল মাস্টারের মন অনেক বড়। তিনি বন্ধু বান্ধবদের টাকা ধার দিয়ে আনন্দ পান। সেই টাকা তোলার জন্য হালখাতার আয়োজন করেছেন। বিষয়টি নেগেটিভলি না নিয়ে পজেটিভলি নেয়া দরকার। কারণ ধার নিয়ে মানুষ এখন দিতে চান না। সেটা তোলার জন্য এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করায় তাকে ধন্যবাদ।

আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাবেদ আলী মন্ডল হালখাতার আযোজন দেখতে এসে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ধার বা হাওলাত সমাজের একটি চিরাচরিত নিয়ম। মানুষ যতোদিন থাকবে ততোদিন এই পন্থা থাকবে। তবে ধার নেয়া টাকা ফেরত না দেয়ার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ধারের টাকা তুলতে হালখাতা করতে হচ্ছে। এটা বাংলাদেশে এর আগে হয়েছে কী-না আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি অবাক করার মতো। ডিজিটাল সময়ে ডিজিটাল বিষয়। তবে ধারের টাকা অবশ্যই সময়মতো ফেরত দেয়া উচিত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘বারাসাত ব্যারিকেড’ ঘোষণা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ‘বারাসাত ব্যারিকেড’ ঘোষণা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের রাতারাতি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব না - dainik shiksha রাতারাতি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব না মনোনীত হয়েও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত রাবির ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী - dainik shiksha মনোনীত হয়েও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত রাবির ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর - dainik shiksha আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি - dainik shiksha মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041418075561523