হিজাব বা নিকাব পরিধানে পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং এ সংক্রান্ত নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয় বিধিতে ধারা যুক্ত করাসহ পাঁচদফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী। মানববন্ধন শেষে তারা দাবিগুলো নিয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘ফ্রিডম অব চয়েজ আমরা সবসময় সম্মান করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক ক্যাম্পাস। কেউ যেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে। লা ইকরাহা ফি দ্বিন।’
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পোশাক, ধর্ম, বহু সংস্কৃতি ও বহু দর্শনের ক্যাম্পাস। এখানে বিভিন্নজনের জনের মত থাকবে। আমরা এটাকে সম্মান করি। এটিকে আবর্তন করে কেউ যখন উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে চায়, সেটাকে কোনক্রমেই এ ক্যাম্পাস বরদাস্ত করে না। এখানে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নেই।
সোমবার সকাল ১১ টায় দিকে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তারা মানববন্ধন করেন। এতে বিভিন্ন বিভাগের নারী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
সম্প্রতি গত ১১ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগের এক নোটিশে ‘বিভাগের সকল প্রেজেন্টেশন, টিউটোরিয়াল, মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং ভাইভাতে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এটি বাতিলের দাবিতে তারা মানববন্ধন করেছেন।
মানববন্ধনে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও ক্লাসে বিভিন্ন সময় তারা হিজাব ও নিকাব পরার কারণে শিক্ষক, সহপাঠীদের হেনস্তার শিকার হন। এমনকি হিজাব না খোলায় ভাইভাতে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে অনেককে। এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার আঘাত। এর মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, এটি হিজাব বিদ্বেষী সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছু নয়। এর কারণে মুসলিম নারীরা ঝরে পড়বে। কারণ, একজন প্রকৃত মুসলিম নারীরা কখনো তাদের চেহারা কাউকে দেখায় না। তাই আমরা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, পরিচয় শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা, অন্যথায় নারী কর্মচারী কিংবা নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে আলাদা রুমে পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা চালু করা; দ্রুততম সময়ে সকল অনুষদের সকল বিভাগে হিজাব-নিকাব পরিধানকারী শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্থা করা বন্ধে নোটিশ প্রদান করা; বিভিন্ন সময়ে ক্লাসরুমে, ভাইবা বোর্ডে অথবা পরীক্ষার হলে নিকাব খুলতে বাধ্য করা করার মতো ঘটনাগুলো তদন্তপূর্বক বিচারের ব্যবস্থা করা; হিজাব বা নিকাব পরিধান সংক্রান্ত ঘটনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় ফিরিয়ে এনে অথবা ভিন্ন উপায়ে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।